আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

হবিগঞ্জকে পরিণত করতে চাই শিক্ষানগরী হিসেবে: এমপি আবু জাহির

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-৩১ ১২:১৯:২৪

সিলেট :: হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির বলেছেন, প্রবাসীরা বিদেশে থেকে কষ্ট করলেও সবসময় চায় দেশের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি। বিশেষ করে মানব সম্পদের উন্নয়নের জন্য তারা আন্তরিকভাবে কাজ করে থাকে। হবিগঞ্জ শহরে সরকারি মহিলা কলেজ এবং ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ সমগ্র জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার ইতিহাস সকলেই জানেন। আবু জাহির এমপি বলেন, করোনায় কর্মহীন থাকা সত্ত্বেও আমাদের প্রবাসীরা যেভাবে সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসছেন তা নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয়। এই অবস্থায় হবিগঞ্জের এসএসসি পরীক্ষায় দরিদ্র-মেধাবীদেরকে খুঁজে বের করে বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ অনন্য। এই বৃত্তি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে প্রদান করায় নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে। যে উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ সদর সমিতি এই বৃত্তি প্রদান করেছে সেই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যারা বৃত্তি পেয়েছে তারা তাদেরকে আরও বেশি অধ্যাবসায়ী হতে হবে।

তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ সদর সমিতির উদ্যোগে মেধা বৃত্তি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, এক সময়ের অবহেলিত হবিগঞ্জ এখন আলোকিত জনপদে পরিণত হয়েছে। সরকারি বৃন্দাবন কলেজে অনার্স-মাস্টার্স চালু হওয়ায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হওয়ায় জেলার গৌরব বৃদ্ধি পেয়েছে বহুল অংশে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও অচিরেই চালু হতে যাচ্ছে। আমরা হবিগঞ্জকে শিক্ষানগরী হিসেবে পরিণত করতে চাই।

মুক্তিযুদ্ধের চারণভূমি হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে অনেক মুক্তিযোদ্ধার গৌরব্বোজ্জ্বল ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের সেকেন্ড ইন কমান্ড এম এ রব বীর উত্তম ও সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্ত বীর উত্তম সহ অনেক খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা লড়াই সংগ্রাম করেছেন সামনের সাড়িতে থেকে। হাওর এলাকায় দাস গেরিলা পার্টির প্রধান জগৎ জ্যোতি দাস বীর উত্তমের অবদান কিংবদন্তিতূল্য। এই জেলায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ৫১ জন। রয়েছেন অনেক বীরাঙ্গনা আর যুদ্ধ শিশু। কিন্তু নতুন প্রজন্ম জানেনা এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সেভাবে স্মরণ এবং সম্মাননাও জানানো হয়নি তেমনভাবে। তবে এবার যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ সদর সমিতি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে মেধাবৃত্তির প্রচলন করে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। ২০২০ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মাঝে ৩৪জন দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে ৩৪ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে দেয়া হয় বৃত্তি। প্রত্যক শিক্ষার্থীকে নগদ ৫ হাজার টাকা, একটি ক্রেস্ট, একটি মাস্ক ও একটি সনদপত্র প্রদান করা হয়।

গতকাল বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সরকারি বৃন্দাবন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইকরামুল ওয়াদুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, সরকারী মহিলা কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মুহম্মদ আব্দুজ জাহের, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল ও হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেন। রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী কামাল উদ্দিনের পরিছালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান, হারুনুর রশিদ চৌধুরীম প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহির, সাবেক সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, এডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান, বানিয়াচং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাউছার শোকরানা, বক্তারপুর আবুল খায়ের উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন, মির্জাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেবিকা রাণী রায়, যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ সদর সমিতির আইন সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রাহুল প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত শিক্ষার্থীরা বৃত্তি ও পুরস্কার পাওয়ার পাশাপাশি হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল এর সান্নিধ্য পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়ে।

শিক্ষার্থীদের আগ্রহে ড. জহিরুল হক শাকিল তাদের উদ্দেশ্যে উপদেশমূলক বক্তব্যে বলেন, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে জীবনমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে জিপিএ এবং পাস করেই কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় না। ভাল কর্ম পাওয়ার জন্য গুণগত শিক্ষা এবং কঠোর অধ্যবসায় প্রয়োজন। প্রতিযোগিতাপূর্ণ পৃথিবীতে ঠিকে থাকতে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার। কেউ যদি সামনে এগিয়ে যেতে চায় কোন প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারবে না। সরকারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ সদর সমিতির মতো অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এগিয়ে যেতে চায় তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ সদর সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম জানান, হবিগঞ্জের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে কলেজে ভর্তি ও বইসহ শিক্ষাউপকরণ ক্রয় করতে পারে তার জন্য কলেজের ভর্তির প্রাক্কালে এই বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। প্রতি বছরই নিয়মিত এই বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি আমরা শীঘ্রই কর্মহীনদের মাঝে ত্রাণ ও মাস্ক বিতরণ করব।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৩১ জুলাই ২০২০/প্রেবি/ডিজেএস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন