আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

উপজেলা চেয়ারম্যানের লাঞ্ছনা, কেঁদে ফেললেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-২২ ২৩:৩০:৪০

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ :: হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ মাসিক সভায় উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সিমা রানী সরকারকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মর্তুজ আলীর বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মর্তুজ আলী। তিনি দাবি করেন- মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বক্তব্যকালে পুরুষকে নিয়ে কটাক্ক করায় মর্তুজ আলী তাকে ধমক দিয়েছেন। এ ঘটনায় পুরো উপজেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা পরিষদ হল রুমে আয়োজিত মাসিক নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সভায় এ ঘটনাটি ঘটে।

সূত্রে জানা যায়, দুপুরে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের হল রুমে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভা শুরু হয়। সভাপতি সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মতিউর রহমান খাঁন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন- উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন- মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সীমা রাণী সরকার, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কুহেলিকা সরকার, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী, জলসুখা ইউপির চেয়ারম্যান খেলু মিয়া প্রমুখ। এছাড়াও কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সীমা রাণী সরকার তার বক্তব্য প্রদানকালে পুরুষদের কটাক্ষ করেন। পাশাপাশি তিনি নারী ও শিশু নির্যাতনের জন্য পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থাকে দায়ি করেন। এ সময় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সীমা রানীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বক্তব্যটি প্রত্যাহারের দাবি জানান উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উপেজলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান উত্তেজিত হয়ে সীমা রানী সরকারকে অকথ্য ভাষায় গালি গালজ ও গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেন। অবস্থার বেগতিক দেখে উপস্থিত অন্যান্যরা পরিস্থিতি সামলাতে সভাকক্ষ থেকে দুজনকে দুই রুমে নিয়ে যান।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সিমা রানী সরকার বলেন- ‘মাসিক নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সভায় আমি নারীদের অধিকার নিয়ে বক্তব্য প্রদান করি। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মর্তুজ হাসান আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি ও জেলা প্রশাসকে আমি বিষয়টি জানাতে চাই। কিন্তু তারা কল রিসিভ না করায় বিভাগীয় কমিশনরের কাছে আমি মোবাইল ফোনে অভিযোগ দিয়েছি।’

তিনি বলেন- ‘দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজ হাসান আমার সাথে খারাপ আচরণ করে আসছেন। কিন্তু আজকে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের লোকজনের সামনে আমাকে লাঞ্চিত করেছেন।’

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মতিউর রহমান খান বলেন- ‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সভায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সিমা রানী সরকার বক্তব্য প্রদানকালে বক্তব্যের একটি অংশে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মর্তুজ হাসান দ্বিমত পোষণ করেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে আমরা দু’জনকে দুটি আলাদা রুমে নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি।’

তিনি বলেন- ‘আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সীমা রানী চলে যাওয়ায় সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করা হবে।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মর্তুজ হাসান বলেন- ‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সভায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সীমা রানী পুরুষদের কটাক্ক ও নারী-পুরুষ নিয়ে বৈষম্যমূলক বক্তব্য দেন। এসময় আমি তাকে নিষেধ করি। তিনি আমার সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়লে একটি ধমক দেই। এর বেশি কোন ঘটনা ঘটেনি।’

তিনি বলেন- ‘পরিষদের মধ্যে গ্রুপিং চলছে। সীমা রানী আমার বিপক্ষের গ্রুপের হওয়ার কারণে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।’
 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / ২২ অক্টোবর, ২০২০ / কে.এস / ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন