আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

‘অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১২-০২ ১১:১৩:২২

জসিম উদ্দিন, বানিয়াচং থেকে ::
 
‘’ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে কি দেখেছি
আমি কি দেখেছি, মধুর হাসি
সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।‘’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত আমাদের জাতীয় সঙ্গীতে দু’টি বাংলা মাসের নাম রয়েছে। একটি ফাল্গুন মাস। আর অপরটি অগ্রহায়ণ মাস। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতে ফাল্গুন মাসের পাশাপাশি অগ্রহায়ণ মাসটিকেও চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।       

অঘ্রাণ বা অগ্রহায়ণ বাংলা ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাস। এ মাসের প্রথম দিনে গ্রাম-বাংলায় নবান্ন উৎসব হয়ে থাকে। নতুন ধানের ম ম গন্ধে মুখরিত হয় চারপাশ। কৃষকের মুখে ফুটে তৃপ্তির হাসি। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতে কবিগুরু অগ্রহায়ণ মাসের বর্নণায় ক্ষেত ভরা ধানের কথাই বলেছেন। অগ্রহায়ণ মাসে সোনালি ধানে ভরে উঠে গ্রাম-বাংলার ফসলের মাঠ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের মাঠেও এখন পাকা ধানের মধুর হাসি।

বানিয়াচং উপজেলায় এবছর রোপা আমন চাষাবাদে ভালো ফলন হয়েছে।  যদিও দ্বিতীয় দফায় বন্যার কারণে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তবে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির ফসল বন্যায় ক্ষতি করতে পারেনি। আবার যারা দ্বিতীয়বার চাষাবাদ করেছেন তারা সকলেই সফল হয়েছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর বানিয়াচংয়ে ৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় কমপক্ষে ২০০ হেক্টর বেশি। আর এবছর রোপা আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৩৬২ মেট্রিক টন। চাষাবাদকৃত ধানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে বিআর ধান-২২। এছাড়াও ব্রি ধান-৪৬, ব্রি ধান-৫০, ব্রি ধান-৭৫ এবং ব্রি ধান-৮৭ প্রাজাতির ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন স্থানীয় প্রজাতির রোপা আমন ধানের চাষাবাদও করা হয়েছে।  

উপজেলার ২ নং উত্তরপশ্চিম ইউনিয়নের তোপখানা মহল্লার কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি প্রায় ৪ একর জমিতে রোপা মন ধানের চাষাবাদ করেছি। এবছর আমার ক্ষেতে প্রচুর ফলন হয়েছে। ধান কাটা শুরু করেছি। আশা করছি আমার চার একর জমি থেকে এবার প্রায় ২৫০ মন ধান পাবো।‘ এমনকি ইরি-বোরো ধানের চেয়ে এবছর তার রোপা আমনে বেশি ফসল হয়েছে বলে জানান তিনি।  

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ এনামুল হক বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক তদারকিতে যথাসময়ে সার পাওয়া, কীটনাশকের যথাযথ ব্যবহার ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য ভাল ফলন হয়েছে। এবার ধানের বাজারও ভালো, আবহাওয়াও অনুকূলে রয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহোগিতায় এবং আন্তরিকতায় বানিয়াচংয়ে  আশাতীত রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটছে।     
তিনি বলেন, বানিয়াচং অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় বর্ষার পানি নামতে দেরি হয়। তাই রোপা আমনের চাষাবাদ করতেও কিছুটা দেরি হয়ে যায়। অন্যান্য অঞ্চলে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝিতে ধানকাটা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বানিয়াচংয়ে তখন শুরু হয়। এবছর দ্বিতীয় দফা বন্যা না হলে বানিয়াচংয়ে রোপা আমনের ফলন আরও বেশি পাওয়া যেত। তবে রোপা আমনের চেয়েও দ্রুত কাটা যায় আউশ ধান। তাই বানিয়াচংয়ে আউশ ধান চাষ করার জন্যও কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এছাড়াও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকায় কৃষকরা বোনা আমন ছেড়ে এখন রোপা আমন চাষাবাদের দিকে ঝুকছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক।  
 
সিলেটভিউ২৪ডটকম/০২ ডিসেম্বর ২০২০/জেইউ/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন