আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

নবীগঞ্জের শাখাবরাক নদী যেন ময়লার ভাগাড়!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১২-০৩ ১৬:০৯:০৮

সলিল বরণ দাশ, নবীগঞ্জ :: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা শাখাবরাক নদীর বেশিরভাগ এলাকা নদী থেকে মরা খাল এবং মরা খাল থেকে এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

ষাটের দশকের দিকে শাখাবরাক খালটি ছিল স্রোতস্বিনী নদীর মতো গভীর এবং খরস্রোতা। বিশেষ করে (এ সময়) শুস্ক মৌসুমে বড় কয়েকটি নদীর সঙ্গে শাখাবরাক নদীর সংযোগ থাকায় এলাকাবাসী নদীটিকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি সেচ এবং মৎস্য আহরণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেন। কিন্তু বালু ও পলি জমে খালটির সঙ্গে বড় নদীগুলোর সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীটি হারিয়ে ফেলে তার যৌবন। কালের পরিক্রমায় এলাকার কতিপয় অনেক প্রভাবশালী নদীর অনেক জায়গা দখল করে বসতি গড়ে তোলায় নদীটি আকারে ছোট হয়ে মরা খালে পরিণিত হয়েছে।

নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততার কোনো হিসাব পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। পৌরসভার উদ্যোগে ২০২০ সালের প্রথমদিকে শহরের মধ্যবাজার এলাকা থেকে পোস্ট অফিস পর্যন্ত নদীর এক পাড়ে সিসি ব্লক, ফুটপাত ও ডিভাইডার স্থাপন করে নদীর পাড়ের সৌর্ন্দয্য বর্ধনের কাজ করা হয়। যদিও এখন জেলা পরিষদ কিংবা পৌরসভা কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ড কেউই নদীর রক্ষণাবেক্ষণ করছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ছালিক মিয়া বলেন, দূষণে ও দখলে নদীটি খালে পরিনিত হয়ে গেলেও এতদিন বেশ পানি প্রবাহ ছিল। কিন্তু বর্তমানে নদী পাড়ের বাসিন্দা এবং পৌর বাজারের ব্যবসায়ী ও নবীগঞ্জ পৌরসভার সব ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলায় এক সময়ের স্রোতস্বিনী শাখাবরাক নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। দূর থেকে মনে হয় না এটি কোনো নদী। মনে হয় এটি মরা খাল এবং ময়লার ভাগাড়। এছাড়া নদীটিতে পৌর শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা ফেলায় যেটুকু পানি আছে তাও দূষিত হয়ে গেছে। পাশাপাশি কচুরিপানা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁর পচা বর্জ্যে মশার উপদ্রব দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে। বর্জ্য দখলে নষ্ট হয়ে যাওয়া এই নদীর এখন সবই যেন কেবল স্মৃতি। ইতোমধ্যেই নদীর বিভিন্ন অংশে দখলবাজরা দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করে ফেলেছে। কয়েকদিন আগে নদী দখল মুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করলেও অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দখল মুক্ত জায়গা আবারও বেদখল হয়ে যাচ্ছে। রাতের বেলা পৌর এলাকার বাড়িঘরের ময়লা-আবর্জনা এনেও প্রতিনিয়িত নদীতে ফেলা হচ্ছে। নদীটি পুনরুদ্ধার ও বাঁচানোর দাবি এলাকাবাসীর।

এ ব্যাপারে পৌর সেনেটারী ইন্সপেক্টর সুকেশ চক্রবর্ত্তী বলেন, নবীগঞ্জ পৌরসভার কোন ময়লা আর্বজনা নদীতে ফেলা হয় না।দোকান পাট সহ বিভিন্ন মানুষ ময়লা ফেলে নদীকে দূষিত করছে। রেস্টুরেন্ট, বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের বলে আসলেও, কিন্তু তারা কথা শোনছে না। রাতের বেলায় ময়লা ফেলে নদীটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে।

এব্যপারে বিশিষ্ট নদী গবেষক সনজিৎ নারায়ণ চৌধুরী' বলেন, ঐতিহ্যবাহী নবীগঞ্জ বাজারের সাথে দেশের অন্যান্য এলাকার নৌযোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের একমাত্র নদী শাখা বরাক-এর মরণদশা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শাখা বরাক বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত নদী পুনঃখনন ও দখলমুক্ত করতে হবে এবং নদী রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির পাশাপাশি নদী তীরবর্তী জনগণকে সচেতন হতে হবে।

নবীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন বলেন, শাখাবরাক নদী পানি প্রবাহ চালু রাখতে চেষ্টা করবো। এছাড়া নদীর দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৩ ডিসেম্বর ২০২০/এসবিডি/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন