হবিগঞ্জে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কমিটি গঠন

প্রতিষ্ঠিত হবে সিসিইউ সম্বলিত অত্যাধুনিক হৃদরোগ হাসপাতাল

হবিগঞ্জ :: হবিগঞ্জ জেলায় হৃদরোগের চিকিৎসার সংকট মোকাবেলায় বিশিষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের জেলা কমিঠি। এই কমিঠি জেলা শহরে করোনারী কেয়ার ইউনিট সম্বলিত অত্যাধুনিক হৃদরোগ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের সভাকক্ষে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের হবিগঞ্জ জেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল সিলেটের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী  কর্মকর্তা কর্ণেল (অবঃ) ডাঃ শাহ আবিদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও রোটারিয়ান সফিকুল বারী আউয়ালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, অধ্যাপক ইলিয়াস বখত চৌধুরী জালাল, হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মুখলেছুর রহমান উজ্জল, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশীদ চৌধুরী, সাবেক সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট তাহমিনা খান ও হাফিজ আহমেদ। সভায় ভার্চ্যুয়ালী অংশ নেন শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ আবু সুফিয়ান।

সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান তরফদারকে আহবায়ক, রোটারিয়ান সফিকুল বারী আউয়ালকে সদস্য সচিব ও হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মুখলেছুর রহমান উজ্জলকে যুগ্ম সদস্য সচিব করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হবিগঞ্জ জেলা কমিটি গঠন করা হয়। কমিঠির সদস্যরা হলেন হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল সিলেটের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী  কর্মকর্তা কর্ণেল (অবঃ) ডাঃ শাহ আবিদুর রহমান, বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ খালেদ মহসিন, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ আবু সুফিয়ান, অবসরপ্রাপ্ত সচিব অশোক মাধব রায়, সরকারী বৃন্দাবন কলেজের অধ্যাপক ইলিয়াস বখত চৌধুরী জালাল, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল, জিয়াউল হাসান তরফদার মাহিন, ডাঃ প্রবাস চন্দ্র দেব, সৈয়দ শাহ এমরান, অ্যাডভোকেট রুহুল হাসান শরীফ, হারুনুর রশীদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট তাহমিনা খান, মহিউদ্দিন আহমেদ সোহেল, নাট্য ব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী, জাহাঙ্গীর ভূইয়া, অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান ও হাফিজ আহমেদ। কমিটির উপদেষ্ঠাবৃন্দ হলেন হবিগঞ্জ সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার ও হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন।  

উল্লেখ্য, হবিগঞ্জ জেলা শহরে প্রতিদিন শত শত রোগী আসেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। হাওর এলাকার কেন্দ্রবিন্দু এই শহরে হবিগঞ্জ জেলার রোগী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বিভিন্ন এলাকার রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসেন। হবিগঞ্জে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ থাকার পাশাপাশি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও বুকে সামন্য ব্যাথা নিয়ে আসা রোগীকে না দেখেই ঢাকা বা সিলেট রেফার করেন চিকিৎকরা। এখানে হৃদরোগ চিকিৎসার নূন্যতম সুবিধা না থাকার পাশাপাশি রোগীর মৃত্যু হওয়ার ভয়ে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে অন্যত্র রেফার করা যায় তা নিয়ে চিকিৎসকরা হয়ে পড়েন ব্যতিব্যস্ত। অথচ প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওই রোগীকে রেফার করলে বহু অনাকাংখিত মৃত্যু থেকে রোগীকে রক্ষা করা যেতো। হবিগঞ্জ জেলায় হার্টের চিকিৎসার এই সংকট মোকাবেলায় এবার জেলার বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গদেরকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের জেলা কমিটি। এই কমিটি জেলা শহরে করোনারী কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সম্বলিত অত্যাধুনিক হৃদরোগ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হবিগঞ্জ জেলা কমিটির আহবায়ক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান তরফদার বলেন, আমার ভাই ড. মঞ্জুরুল হাসান তরফদার মাত্র ১০ মিনিটের বুকের ব্যাথায় কোথাও চিকিৎসা না পেয়েই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। প্রকৃতপক্ষে হবিগঞ্জে বুকে ব্যাথা নিয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই আমরা চাই অত্যাধুনিক সিসিইউ সম্বলিত একটি কার্ডিয়াক হাসপাতাল হবিগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করতে। সেখানে ৬ সিটের একটি সিসিইউ রাখতে পারলে অনেক মানুষকে আমরা চিকিৎসা দিতে পারবো।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল সিলেটের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী  কর্মকর্তা কর্ণেল (অবঃ) ডাঃ শাহ আবিদুর রহমান বলেন, দেশের ৪৪টি জেলায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কমিটি থাকলেও এতদিন হবিগঞ্জে ছিল না। আমরা যে যাত্রা শুরু করেছি অবশ্যই জেলাবাসীকে ভালো কিছু দিতে পারবো। বর্তমানে হার্টের সমস্যার প্রধান কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস। জেলা কমিটির ছায়াতলে আমরা জেলার সকল উপজেলায় কমিটি গঠন করে এই হার্টের চিকিৎসা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি একটি হাসপাতাল গড়ে তুলব।

সভায় আজীবন সদস্য সংগ্রহ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। ১০ হাজার টাকা প্রদানপূর্বক এখানে আজীবন সদস্য হওয়া যাবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / প্রেবি /  ডালিম-৪

আপনার মতামত দিন