Sylhet View 24 PRINT

দুবাই প্রবাসি বড়লেখার আব্দুল করিমের সিআইপি মর্যাদা লাভ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-১২ ১৩:৪৪:০৮

লুৎফুর রহমান :: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালের জন্য বাংলাদেশে বৈধ চ্যানেলে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারি অনিবাসি বাংলাদেশি আব্দুল করিমকে কমার্শিয়াল ইম্পরট্যান্ট পারসন বা সিআইপি মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে।

তিনি সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদ আরব আমিরাত শাখার সভাপতি। এছাড়াও এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক আব্দুল করিম বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল দুবাইয়ের কোষাধ্যক্ষের পদে আসিন আছেন। তাঁর এ প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে খুশির জোয়ার এসেছে। এর আগে আব্দুল করিম পেয়েছেন একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্স পদক।

এ বছর বৈধ পথে সর্বাধিক রেমিটেন্স প্রেরণকারি হিসোবে ৩৬জন এবং বিদেশ বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক ৬ জন মোট ৪২ জনকে সিআইপি মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। তার মধ্যে আরব আমিরাতের রয়েছেন ৯ জন। প্রতিবারের মতো সর্বোচ্চ রেকর্ডে আছেন আরব আমিরাত প্রবাসি সিলেটের আরেক বরেণ্য পুরুষ মাহতাবুর রহমান নাসের।

আব্দুল করিমের জন্ম ১৯৬০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। জন্মেছেন সিলেট মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চরকুনা, সুজানগর গ্রামে। পিতা মৃত মফিজ আলীর ৩য় সন্তান করিম সাহেবদের বর্তমান বসবাস পাথারিয়া পাহাড়ঘেষা ডিমাইগ্রামে। যেখানে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সাথে আঁধারের বাস। সেখানে আছে শুধু আঁধার আর আঁধার। আঁধারের সাথে লড়াই করে মানুষের বেড়ে ওঠা। আলোর বড়ই অভাব এখানে। নেই শিার আলো কিংবা বিজ্ঞানের। সেখানে মানুষকে সবধরণের আলো দেখিয়ে যাচ্ছেন তিনি। গ্রামের মানুষকে বিদ্যুতের আলো দেখাতে নিজ খরচে বিদ্যুৎ সংযোগ দেন। সেইসাথে শিার আলো দেখাতে গ্রামে একটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসার জমিপ্রদান এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে সিংহভাগ অর্থপ্রদান করেন। এছাড়া স্থানীয় কেছরীগুল উচ্চ বিদ্যালয়ে সময় সময় আর্থিক সহযোগিতা করে পশ্চাদমুখী মানুষকে শিতি করে তোলার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু নিজের গ্রাম নয় বড়লেখা উপজেলার মেধাবী ও অসচ্ছল শিার্থীদেরকে প্রতিবছর বৃত্তি প্রদান করে আসছেন। দেশ কিংবা প্রবাস সবখানেই রয়েছে দানশীলতার সরব বিচরণ তাঁর। প্রবাসে অসচ্ছল লাশের টিকেট দেওয়াসহ বাঙালি কমিউনিটির সকল অনুষ্ঠানে রয়েছে তাঁর আর্থিক অনুদান। আরব আমিরাতের একমাত্র অরাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠন সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের একাধিকবারের সফল সভাপতি তিনি। এ সুবাদে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে এমপি পর্যন্ত কেউ আরব আমিরাত সফরে আসলে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা করে যান স্বাচ্ছন্দে।

সুখের স্বপ্নসৌধ গড়ার প্রয়াসে ১৯৮২ সালে কাতারের দোহাতে পাড়ি জমান আব্দুল করিম। আগর-আতর এর কাজ দিয়ে প্রবাস জীবনের যাত্রা শুরু হয়। সেখানে কেটে যায় অর্ধযুগ। এরপর ১৯৮৮ সালের ৮ জানুয়ারি এসেই বসতি করেন আরব আমিরাতের দুবাই শহরে। গড়তে থাকেন নিজের স্বপ্ন আর সেইসাথে বাংলা ও বাঙালির জন্য একটি অনুকুল পরিবেশ। পরবাসে বাঙালিদের পরমাত্মীয় হয়ে ওঠতে থাকেন তাঁর কাজের মাধ্যমে। নিজের গড়া আতর শিল্প প্রতিষ্ঠান হাছান-শাহিন আহমদ পারফিউম এলএলসি এর মাধ্যমে অনেক অসহায় প্রবাসি যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ১৯৮৮ থেকে আজ অব্দি বাংলা মায়ের সেবা করে যাচ্ছেন আন্তরিকতার সাথে। এর উজ্জ্বল প্রমাণ প্রবাসে বাংলা ভাষা ও কৃষ্টির প্রতিটি অনুষ্ঠান ও সংগঠনে তার নিঃস্বার্থ অনুদান। প্রচার বিমুখ এই মানুষটি দেখেছেন ৯৯ জাতি মানুষের ভাষা-সংস্কৃতি। ২ যুগ ধরে দুবাইতে দেখেছেন অনেক ভাঙা-গড়ার খেলা। আবার নিজেও গড়ার কাজে এগিয়ে এসেছেন উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে। অধুনালুপ্ত দুবাই বাংলা স্কুলে ছিলো তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান। ষাটের দশকে নিজে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন ঠিকই কিন্তু আরব আমিরাতের শারজাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেজাউল করিম হয়েছেন ডাক্তার ও মারজান আল করিম হয়েছেন প্রকৌশলী। সংসার জীবনে ২ পুত্র, ২ কন্যা ও স্ত্রী নিয়ে তাঁর বসতি। তাঁর সহোদর আব্দুর রহিমও একজন সচেতন সমাজকর্মী। তিনিও দুবাই শহরে থাকেন। অপর ভাই আব্দুল গণি থাকেন আপন নিলয়, প্রিয় বাংলাদেশে। শেকড়ের প্রতি টান থেকে আব্দুল করিম সময় পেলেই ছুটে যান গাঁয়ের কাদামাটিতে। এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাটে দান কনে যান নিরবে। পিছিয়ে পড়া গ্রামকে এগিয়ে নিতে ১৯৭৮ সালে নিজ এলাকায় “ডিমাই সমাজকল্যাণ সমিতি” গঠন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। সেই সাংগঠনিক নেশার ধারাবাহিকতা রেখেছেন স্বপ্নশহর দুবাইতেও। এখানকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাক্রমে-বাংলাদেশ সমাজকল্যাণ সমিতি, শাহজালাল সমাজকল্যাণ পরিষদ, আল-ইত্তেহাদ পরিষদ ও মুকুল পরিজন এর প্রধান উপদেষ্ঠা। এছাড়া বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল দুবাই এর অন্যতম সদস্য। বর্তমানে দুবাইতে বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠার যে চিন্তা-ভাবনা চলছে তার অন্যতম পরিকল্পক তিনি। দেশের রাজনীতির চেয়ে সমাজনীতি নিয়ে ভাবতে পছন্দ করেন তিনি। মানুষের ভালো দেখলে পুলকিত হন আর কষ্ট দেখলে নিজে দু:খ পান। প্রবাসের প্রতি সভায় দেশের দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। নিজেও অনেকের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। তিনি মনের মানুষ, ধনের মানুষ। আরব আমিরাতে একখণ্ড বাংলাদেশ স্থাপনে তাঁর অভিলাস অন্য ৫ জন দেশপ্রেমীর মতো-ই।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.