আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

ভাষার মাসে কোন মূল্যায়ন নেই কমলগঞ্জের তিন ভাষার সৈনিকের

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০২-১৯ ২৩:৪৪:৩৪

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :: ভাষার মাসে নেই কোন মূল্যায়ন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার প্রয়াত তিন ভাষা সৈনিকের। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করলেও আঞ্চলিক পর্যায়ে থাকায় প্রয়াত জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস, সৈয়দ মতিউর রহমান ও মফিজ আলী ভাষা সৈনিক হিসাবে এখনও মূল্যায়িত হননি। ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছরে ভাষার মাসে কমলগঞ্জের সচেতন মহল এমন প্রশ্ন তোলে ধরেন।

জানা যায়, উপজেলার কুশালপুর গ্রামে জন্মগ্রহনকারী সাবেক সাংসদ প্রয়াত জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস ভাষা আন্দোলনের সময়ে ঢাকার রাজপথে সক্রিয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পতনঊষার ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ও প্রখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ মতিউর রহমান ও পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা গ্রামে জন্মগ্রহনকারী প্রয়াত মফিজ আলী তারা তিনজনেরই ভাষার মাসে কোন মূল্যায়ন নেই। সাংবাদিক সৈয়দ মতিউর রহমান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর সক্রিয় রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মৌলভীবাজারের স্কুল এবং কয়েকটি মাদ্রাসায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হয়। এ তথকালিন এ প্রতিবাদ সভা ও ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হয়েছিল কমলগঞ্জ উপজেলা সদর, শমশেরনগর, ভানুগাছ বাজারে।

এসব প্রতিবাদ সভা আর ধর্মঘট পালনের সময় প্রতিবাদী ছাত্র-জনতা জ্বালাময়ী কিছু শ্লোগানও তৈরি করেন যেমন, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, নুরুল আমিনের কল্লা চাই’, ‘বরকত সালামের রক্ত-মুছে ফেলা শক্ত’ ইত্যাদি। স্থানীয়ভাবে ভাষাসৈনিক হিসেবে প্রয়াত সৈয়দ মতিউর রহমানকে একাধিক সংগঠনের মরণোত্তর পদক দেয়া হলেও ভাষার মাসে সরকারিভাবে তাঁর কোন মূল্যায়ন হয়নি।

অপরদিকে পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা গ্রামে জন্মগ্রহনকারী প্রয়াত মফিজ আলী পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠির ভাষা বিরোধী আন্দোলনের সময়ে সিলেট ও শমশেরনগর কেন্দ্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ভাষা আন্দোলনের সেই পথ ধরেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এবং সর্বশেষ পূর্ব পাকিস্তান চা শ্রমিক সংঘের শ্রমিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ভাষা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক হিসাবে মফিজ আলীকে ২০০৩ সনে উপজেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা প্রদান করলেও আর কোন মূল্যায়িত হননি।   

লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন ঢাকাকে কেন্দ্রবিন্দু করে সংগঠিত হলেও তা হয়ে উঠে বাঙালির জাতীয়তা তথা জাতিসত্ত্বার আন্দোলন। ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসক গোষ্টির ভাষা বিরোধী এ আন্দোলন একই সঙ্গে গ্রাম ও শহরকে যুক্তভাবে গড়ে উঠে। ফলে বিভিন্ন স্থানে এ আন্দোলনের চরিত্র অভিন্ন ছিল।

কুশালপুর গ্রামে জন্মগ্রহনকারী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস ভাষা আন্দোলনের ঢাকা কেন্দ্রিক নেতা হলেও তিনিও মূল্যায়িত হননি। তেমনি বৃহত্তর সিলেটের অন্তর্গত পতনঊষার ইউনিয়নের দুই কীর্তিমান পুরুষ প্রয়াত সৈয়দ মতিউর রহমান ও প্রয়াত শ্রমিক নেতা মফিজ আলী ভাষা আন্দোলনের দৃশ্যমান নেতা ছিলেন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিবাহিত হলেও তারা সেভাবে বিবেচ্য বা মূল্যায়িত হয়ে উঠেননি। এই তিন প্রয়াত নেতা মফস্বল অঞ্চলের অধিকারী হওয়ার কারনে কি তাদের ঠিকমতো বুঝে নেওয়া যাচ্ছে না এ প্রশ্ন এলাকার সচেতন মানুষের?

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/জেএ/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন