Sylhet View 24 PRINT

কমলগঞ্জে প্রেমে সাড়া না পাওয়ায় সংখ্যালঘু তিন পরিবারের ঘরের দরজায় গো-মাংস!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-২৩ ২০:৫২:৩৩

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পার্শ্ববর্তী স্কুল পড়–য়া ছাত্রীর সাথে প্রেমের সাড়া না পাওয়ায় সংখ্যালঘু মালাকার সম্প্রদায়ের তিন পরিবারের ঘরের দরজায় গো-মাংস টাঙ্গিয়ে রেখেছে মুসলিম বখাটে যুবক। বাড়ির দরজা থেকে পুলিশ মাংস উদ্ধার করে তদন্তের পর থানায় জিডি করেছে। এ ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ স্থানীয় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

শুক্রবার ভোররাতে উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের প্রণয় মালাকারের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে।

জানা গেছে, করিমপুর গ্রামের সাদত নামের এক বখাটে তার সহযোগীকে নিয়ে গ্রামের সফিক মিয়ার বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান থেকে জবাই হওয়া গরুর পরিত্যক্ত মাংস, পা, হাড়, মাথা, দাঁত ও ভড় সংগ্রহ করে বাসুদেবপুর গ্রামের পরমেশ্বর মালাকার (৫০), প্রণয় মালাকার (৪৫) ও বীরেন্দ্র মালাকার (৫২)-এর ঘরের দরজায় ঝুঁলিয়ে রাখে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর প্রথমে অধীর মালাকার দেখতে পেয়ে বাড়ির লোকজনসহ আশপাশ এলাকার লোকদের অবহিত করেন। এসব গো-মাংস দেখে বাড়ির লোকজন হতবাক হয়ে উঠে। তারা গো-মাংস রাখা ওই দরজা ব্যবহার করতে না পেরে দুপুর পর্যন্ত ঘরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে বেলা বারটায় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা থেকে গো-মাংস সরিয়ে ফেলে এবং ধোঁয়ামুছা করে ঘরের লোকজন বের হন। এটি ধর্মীয় অনুভ‚তিতে মারাত্মক আঘাত বলে স্থানীয় সংখ্যালঘুসহ বাড়ির লোকজন সহজে মেনে নিতে পারছেন না।

বাসুদেবপুর গ্রামের পরমেশ্বর মালাকার বলেন, আমাদের বাড়ির পিতৃহারা দশম শ্রেণি পড়–য়া ছাত্রীকে পার্শ্ববর্তী করিমপুর গ্রামের চেরাগ মিয়ার বখাটে ছেলে সাদত মিয়া (১৯) দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছে। মেয়েটি ঘটনা তার মাকে বলার পর সামাজিকভাবে ছেলের অভিভাবকদের জানানো হয়। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে সাদত অন্য একটি ছেলেকে নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সকালে ঘটনাটি জানাজানি হলে এবং গ্রামবাসী ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার কথা বলার পর সাদতের বড় ভাই হায়দর মিয়া আমাদের বাড়িতে এসে তার ভাই এঘটনার সাথে জড়িত বলে জানায়। পরে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি শেষ হওয়ার চেষ্টা করা হলেও জনপ্রতিনিধিদের ছাড়া শেষ হয়নি।

গ্রামের অধীর মালাকার, প্রহ্লাদ মালাকার ও জগদিশ মালাকার বলেন, করিমপুর গ্রামের সফিক মিয়ার বাড়িতে বিয়ে অনুষ্ঠানে জবাই হওয়া গরুর পরিত্যক্ত মাংস এনে রেখেছে। এটি আমাদের ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত করেছে। একইভাবে পার্শ্ববর্তী এলাকার খায়রুল ইসলামসহ স্থানীয় মুসলমানরাও এঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

মুন্সীবাজার ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান নওরোজ বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর বিধায় আমার পক্ষে সামাজিকভাবে শেষ করা সম্ভব হয়নি। কমলগঞ্জ উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব বলেন, এটি ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত। এঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

অভিযোগ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী করিমপুর গ্রামে গিয়ে অভিযুক্ত সাদত মিয়াকে পাওয়া যায়নি। তবে সাদতের মা নাজমা বেগম স্কুল পড়–য়া ছাত্রীর সাথে প্রেম কিংবা উত্ত্যক্তের প্রস্তাব নাকচ করে বলেন, আমার ছেলে না বুঝে যে ঘটনা ঘটিয়েছে এজন্য আমরা পারিবারিকভাবে শাস্তি দিয়েছি এবং পঞ্চায়েতের মায়মুরুব্বিরা বৈঠকে বসে যে শাস্তি দিবেন সেটি মেনে নেব। তবে মেয়েটির সাথে আমার ছেলেকে জড়িয়ে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা মোটেও সঠিক নয়।

কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সুধীন চন্দ বলেন, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বাদী না হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তবে কয়েকটি বিষয়কে সামনে নিয়ে পুলিশ গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ মার্চ ২০১৯/জেএ/পিডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.