Sylhet View 24 PRINT

মৌলভীবাজারে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘বাঁশ বাণিজ্য’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-২৩ ০০:২৯:৫৩

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারে বন বিভাগের কিছু অসাধু বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে জেলার বিভিন্ন পাহাড় থেকে প্রতিনিয়ত পাচার হচ্ছে বাঁশ। যার কারণে সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব। হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট বন বিভাগের কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি রেঞ্জের আদমপুর ফরেস্ট বিট এবং ওই রেঞ্জের কুরমা ঘাট ফরেস্ট বিট হতে কতিপয় অসাধু বন কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় নিয়মিত বাঁশ পাচার হচ্ছে। রাতের আধারে বাঁশ কেটে গাড়ি দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছানো হয়। আবার নদী পথে চালি বেধে মনু ও ধলাই নদী দিয়ে গন্তব্য পৌছানো হচ্ছে। সূত্র জানায়, মনু নদীর মনু ব্যারেজ এলাকায় পানি আটকিয়ে উপর থেকে বাঁশের চালি ছাড়া হয়। ব্যারেজে আসার পর আবার আটকানো পানি ছেড়ে দেয়া হয়।

সরেজমিনে মৌলভীবাজার শহরের শাহ মোস্তফা রোডের বেরিরপার এলাকায় গেলে দেখা যায় বাঁশ ব্যবসায়ী কাজল মিয়া বিক্রির জন্য এক ট্রাক বাঁশ নিয়ে এসেছেন। বাঁশ কোথায় থেকে এনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলার কাচারি বাজার এলাকা থেকে আনা হয়েছে। এ সময় ট্রাকের ড্রাইভার বলেন, এগুলো কাচারি বাজার এলাকার একটি পাহাড় থেকে আনা হয়েছে। পরিচয় গোপন রেখে ওই ট্রাক দিয়ে বাঁশ আনতে পুলিশকে টাকা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে বাঁশ ব্যবসায়ী কাজল মিয়া বলেন, বিকালে আরেকটি গাড়ি আসবে। এক সাথে দুটির টাকা সন্ধ্যার পর দিব।

একই রোডের ডিএম কমিউনিটি সেন্টারের পাশে বাঁশ বিক্রেতা বদরুলকে না পেয়ে তার ছেলে এবারের এসএসসি ফলপ্রার্থী সালমানের সাথে কথা হলে সে বলে, প্রতি গাড়িতে বন বিভাগের কিছু লোককে ও ট্রাফিক পুলিশকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে গাড়ি থেকে বাঁশ লামানোর আগেই তারা এসে হাজির হয়। সে আরোও বলে, মাস খানেক আগে ট্রাফিক পুলিশকে টাকা না দিয়ে আমার বাবা (বদরুল ইসলাম) একটি গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। পরে ট্রাফিক পুলিশের লোক এসে আমার বাবার সাথে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে গাড়ির উপর ১৮ হাজার টাকার একটি মামলা দেয়।

পাশের আরেক বাঁশ বিক্রেতা জানান, গাড়ি দিয়ে বাঁশ লামানোর আগের দিন বন বিভাগকে জানাতে হয়। অন্যতায় গাড়ি লামানো যায়না এবং তাদের নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করতে হয়। নাম গোপান রাখার শর্তে এক কুটির শিল্প ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রতি গাড়িতে প্রতিটি উপজেলার জন্য ফরেষ্টের লোককে আলাদা আলাদা ঘুষ দিতে হয়। সদর উপজেলার জন্য সৈয়ারপুর ফরেস্ট টহল ফাঁড়িতে নিয়োজিত রাসেন্দ্র চন্দ্রকে প্রতি গাড়িতে ১ হাজার করে দেই। মাল বেশি হলে আরো বেশি দেয়া লাগে’।

একটি বিশ্বস্থ সূত্র বলছে, বাঁশ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন সৈয়ারপুর ফরেস্ট টহল ফাড়িতে নিয়োজিত বাগান মালি রাসেন্দ্র চন্দ্র দাস। কমলগঞ্জ থেকে সদর উপজেলার শেরপুর এক ট্রাক বাঁশ নিতে কত টাকা দেয়া লাগবে পরিচয় গোপন রেখে রাসেন্দ্র চন্দ্র দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুধু সদর উপজেলা পর্যন্ত গাড়ি প্রতি ১ হাজার দিবেন। এছাড়া অন্য উপজেলা আমার দায়িত্বে নয়।’

টাকা দেয়ার জন্য বিকাশ নাম্বার চাইলে তিনি এসএমএস করে একটি বিকাশ নাম্বার (০১৩১৮৫১০৬২৪) প্রতিবেদককে দেন। পরে পরিচয় দিয়ে বাগান মালি রাসেন্দ্র চন্দ্র দাসের সাথে কথা বললে তিনি সাথে সাথে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।

এদিকে শমসেরনগর থেকে কিছু গাছ আনতে কমলগঞ্জ উপজেলা রাজকান্দি রেঞ্জের বাগান মালি ফরিদ মিয়া’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘অফিসে এসে আগে কথা বলেন। তারপর কত টাকা লাগবে বুঝা যাবে’।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা সহকারী বন সংরক্ষক জি এম আবু বক্কর বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ এপ্রিল ২০১৯/ওফানা/ডিজেএস

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.