আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বড়লেখা-শাহবাজপুর সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-২৩ ০০:২৮:০১

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা :: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বড়লেখা-শাহবাজপুর সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কের জাগিয়ার পুল ঘেঁসে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে পৌরসভা। এতে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। দুর্গন্ধের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দরা। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলছে। স্থানীয়রা বিষয়টি পৌরকর্তৃপক্ষকেও জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।

স্থানীরা জানিয়েছেন, এই রাস্তা দিয়ে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর, দক্ষিণ শাহবাজপুর, নিজ বাহাদুরপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার বাসিন্দা, পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চারটি কলেজ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুইটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন যাতায়াত করেন।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে বড়লেখা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার প্রায় দেড় যুগ পার হলেও ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত স্থান করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে আ লিক মহাসড়কের (শহরের প্রবেশ মুখে) ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় সাড়ে তিন বছর থেকে বড়লেখা-শাহবাজপুর সড়কের জাগিয়ার পুল এলাকায় সড়কের পাশে প্রতিদিন যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলছে বড়লেখা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এর আগে পৌরসভার গাজিটেকা এলাকায় শহরের প্রবেশ মুখে ময়লা ফেলা হতো। এলাকাবাসীর প্রতিবাদের ফলে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করেছিল পৌরকর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে শহরের সব আবর্জনা ময়লাবাহী ট্রাকযোগে সেখানেই ফেলা হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের প্রবেশমুখেই আবর্জনা ফেলায় নাকে রুমাল চেপে মানুষকে শহরের ঢুকতে হচ্ছে। পাশাপাশি মানুষকে স্থায়ী দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসী এই বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার পৌরকর্তৃপক্ষের দারস্থ হলেও কোনো প্রতিকার পাননি।

বুধবার (২২ মে) দুপুরে জাগিয়ার পুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তুূপ। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কাপড়ে নাক ঢেকে চলছেন পথচারীরা। উপজেলার বড়লেখা-শাহবাজপুর সড়কের জাগিয়ার পুল এলাকায় প্রতিদিনের চিত্র এটি।

এ সময় ছোটলেখা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র সালমান হোসেন এমাদ ও আশরাফ আহমদ বলেন, ‘স্কুলে যাওয়া-আশা করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। অনেক দুর্গন্ধ। বমি চলে আসে। অনেক দিন থেকে এই অবস্থা। দ্রুত এই অবস্থার সমাধান চাই আমরা।

সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মো. মাছুম আহমদ বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। কিন্তু সড়কের এই জায়গায় এলে ময়লা আবর্জনার থেকে উৎকট গন্ধ ছড়ায়। নাকে চেপে গাড়ি চালাতে হয়।’
ওই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন শিক্ষক ময়নুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আবর্জনার গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচল অনেক কঠিন হয়ে গেছে। রাস্তা দিয়ে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলার কারণে অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়েছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহম্মদ হোসেন বলেন, ‘মানুষের আশা-যাওয়ার স্থানে আবর্জনা ফেলা ঠিক নয়। যেখানে মানুষের চলাচল কম সেখানে ফেলা দরকার। আবর্জনার এই গন্ধে শ্বাসনালিতে ইনফেকশন হয়ে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এভাবে আবর্জনা ফেলা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।’

পরিবেশ কর্মী ও শিক্ষক মুর্শেদুজ্জামান সাদেক বলেন, ‘যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে পৌরসভা নিজেই পরিবেশ ও প্রতিবেশের দূষণ ঘটাচ্ছে। পৌরসভার আধুনিক আবর্জনা ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এভাবে আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে পড়ছে। পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ফল পাওয়া যায়নি। বরং দিন দিন দূষণের পরিমান বাড়ছে। এখন পৌরসভাকে আইনি নোটিশ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি।’

দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘এখানে ফেলায় মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হয়। মেয়র মহোদয়কে অনেক বার বলেছি। উপজেলা পরিষদের মাসিক মিটিং-এ আলোচনা হয়েছে। তিনটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এই বিষয়টি উত্তাপন করেছেন। কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না।’

এ ব্যাপারে বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, ‘পৌরসভার আইনে ময়লা শহরের বাইরে ফেলার কথা। আগে ষাটমা ব্রিজের পাশে ময়লাগুলো ফেলা হতো। ষাটমা নদীতে চলন্ত পানি। ময়লাগুলো সমস্যার সৃষ্টি করছিল। পরবর্তীতে রেল ও সিঅ্যান্ডবির মধ্য এলাকায় পর্যাপ্ত জায়গা দেখে ময়লা ফেলার চিন্তা করি। পরে একটা আবেদন দিয়ে সেখানে ফেলা শুরু করি। নির্ধারিত কোনো জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। বিকল্প জায়গার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সরকারিভাবে জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত ওই জায়গায় ফেলা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ মে ২০১৯/এজেএল/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন