আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সেদিন কী ঘটেছিলো, ব্যাখা দিলেন বড়লেখার সুন্দর

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৬-২৩ ০১:১৪:৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় গত ১৯ জুন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিনের সাথে কুশল বিনিময়কে কেন্দ্র করে যা ঘটেছিল তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর। ২২ জুন শনিবার রাতে নিজ বাড়িতে ডাকা এক বৈঠকে তিনি এ ঘটনার ব্যাখা দেন। তাঁর আহবানে এ সময় পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার মুরব্বিরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় রফিকুল ইসলাম সুন্দর বলেন, গত ১৯ জুনের ঘটনাকে অনেকে তিলকে তাল করেছেন। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছেন এবং অনেকে ফায়দা লুটেছেন।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন ব্যক্তিগত কাজে আমি বড়লেখা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যাই। কাজ শেষে উঠতে যাব- তখন প্রকৌশলী চায়ের দাওয়াত দেন। তাঁর অনুরোধে আবার বসলাম। এমন সময় হঠাৎ করে দাসেরবাজারের সাবেক চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন আসলেন। তিনি প্রকৌশলীর সাথে হাত মেলালেন। আমার সাথে হাত মেলাতে চাইলেন। তখন আমি হাত মেলাতে অপারগতা প্রকাশ করি। তখন তিনি হাত না মেলানোর কারণ জানতে চাইলেন। আমি বললাম আমার মন চাচ্ছে না তাই। এ সময় তিনি উঠে আমাকে বেয়াদব বলে গালি দিয়ে বলেন, এ জন্য গত নির্বাচনে ফেল করেছিস। তখন আমি বলি আপনি কি বলতে চান।

এরপর তিনি বলেন, আমি তর বড় ভাইয়ের ক্লাসমেট আমার সাথে হাত মেলালে না বলে- তিনি আমাকে গালি দেন। এ সময় আমি উঠে দাঁড়ালাম। আমার মনে হল তাকে কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে পাঠিয়েছে। এমন সময় আমার পকেটের চশমা ফ্লোরে পড়ে যায়। চশমায় তাঁর পা পড়ে যাবে ভেবে আমি তাকে ধাক্কা দেই। এ সময় তিনি হয়তো দরজায় পড়ে কোথাও আঘাত পেয়েছেন। এর আগেই তিনি আমার চশমা পা দিয়ে ভেঙে ফেলেন। এরপর একটু উত্তেজিত কথাবার্তা হয়। এরপর আমিও আমি বাড়ি চলে আসি।

ঘন্টাখানেক পর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমাকে ফোন করে জানতে চান- আপনি সামাজিক বৈঠক মানেন কি মানেন না? আমি তাদের কথায় রাজি হই। বিকেলে তাঁরা আমাকে এ বিষয়ে জানাবেন। এক পর্যায়ে তাঁরা জানালেন- মাতাব উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। তিনি হাসপাতালে চলে গেছেন। আমি হাসপাতালে খোঁজ নেই। খবর পাই তিনি চলে গেছেন। তার আধা ঘন্টা পরে খবর পাই- মাহতাব ভাই মামলা করেছেন। খবরে বিব্রত হই। ওসি সাহেবকে ফোন করে সত্যতা জানলাম। রাত আটটার দিকে খবর পাই- সুড়িকান্দি গ্রামের যুবকরা বৈঠক করছেন। তখন আমার গ্রামের প্রবীণ মুরব্বিদের সুড়িকান্দি পাঠাই। সেখানে গিয়ে গ্রামের বেশ কয়েকজন মুরব্বিও চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করেন। মুরব্বিদের পরামর্শে মাহতাবুর রহমানকে দেখতে বাড়িতে যান। দেখা করে আরো কয়েকজন মুরব্বিদের বাড়িতেও দেখা করেন। তাঁরা পরদিন সকাল ৮টায় জানানোর কথা বলেন।

আমি এরই মধ্যে আমার এলাকার মুরব্বিদের পরামর্শে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা বলি। তিনিও আশ্বস্থ করেন। তিনি এর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান, ওসি, ইউএনও, পৌরমেয়রসহ জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছেন। মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে সকালে তাঁরা সুড়িকান্দি যান। সেখান থেকে তাদের ফেরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেননি। এরপর গাজিটকা এলাকায় আরেকবার চেষ্টা করেন। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান তাদের সাথে কথাবার্তা বলে একপর্যায়ে তিনিসহ চৌমুহনায় এসেছেন। আসার পথে তাঁরা অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। চৌমুহনায় এসে পুলিশ, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সামনে অস্ত্রসহ আমায় গালিগালাজ করেছেন। এসবের পেছেনে ইন্ধন দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান নিজে। তিনি প্রকাশ্যে আমাকে গ্রেপ্তারের কথা বলেছেন। একদিকে আমার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হল। বিক্ষোভ করা হল। আপনাদের কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম। আমার জীবন হুমকির সম্মুখিন।

 সভায় এ ঘটনায় এলাকার মুরব্বিরা তাদের মতামত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। পরে সালিশ বৈঠকের জন্য প্রত্যেক গ্রাম থেকে দু'জন করে মুরব্বি নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৯ জুন) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বড়লেখা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কুশল বিনিময়কে কেন্দ্র করে সাবেক বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর দাসেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিনের গায়ে হাত তুলে লাঞ্ছিত করেন। এতে মাহতাব উদ্দিন পায়ে ও হাতে আঘাত পান। পরে তিনি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)।

এ ঘটনায় থানায় সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দরের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দাসেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন।

অপরদিকে এই ঘটনা মাহতাব উদ্দিনের ইউনিয়ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনগণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় প্রায় সহস্রাধিক লোকজন দেশীয় অস্ত্রসহ মিছিল সহকারে বড়লেখা শহরের দিকে রওয়না দেন। এ খবর পেয়ে পুলিশ, নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য লোকজন তালিমপুর এলাকায় গিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের আটকানো সম্ভব হয়নি। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় শহরের উত্তর চৌমুহনী এলাকায় ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। তখন সেখানে তাঁরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ জুন ২০১৯/এজেএল/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন