আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

‘জুন ক্লোজিং’র নামে বিদ্যুত গ্রাহকদের কাছে ভূতুড়ে বিল!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৬-২৭ ০০:০২:৩৩

এম ইদ্রিস আলী, শ্রীমঙ্গল :: জুন ক্লোজিং এর নামে আবাসিক মিটারে বিদ্যুত ব্যবহারকারীদের ‘ভূতুড়ে বিল’ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ‘চতুর্থধাপের ফাঁদে’ ফেলে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শ্রীমঙ্গলস্থ মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুত সমিতি।

এমন এক অভিযোগ পাওয়া গেছে,শহরতলীর কলেজরোডস্থ বিরাইমপুর আবাসিক এলাকার হাজী আব্দুস রশিদের এক ভাড়াটের কাছ থেকে। যার ব্যবহৃত মিটার নং (৯০০৯০৮৮৭), হিসাব নং (০৭৫/৫৭৭৫)। শুধু এ একটি মিটারেই নয়, আব্দুর রশীদের নামে আরও তিনটি মিটারে অতিরিক্ত বিল পল্লী বিদ্যুত থেকে দেয়া হয়েছে।

সাধারণত পল্লীবিদ্যুতের এক মাস অন্তর অন্তর মিটাররিডিং নেওয়া হয়ে থাকে। ওই গ্রাহকের অভিযোগ তার চলতি জুন মাসের বিলে অগ্রিম ৬ দিনের ভূতুড়ে বিল যোগ করে চতুর্থ ধাপের অতিরিক্ত মূল্য ধরে ৩০ দিনের প্রাক্কলিত বিল পরিশোধের জন্য দেয়া হয়েছে।

তার অভিযোগ, পল্লীবিদুতের দেয়া বিলে ৭০/৮০ ইউনিটের চতুর্থধাপের অতিরিক্ত বিল তাকে দেয়া হয়। তা পরিশোধের সর্বশেষ তারিখ উল্লেখ করা হয় ৩০ জুন ২০১৯ ইং। এ বিল তিনি এনসিসি ব্যাংকে মঙ্গলবার সকাল ১১টারদিকে শ্রীমঙ্গল শাখায় পরিশোধ করেন।

গ্রাহকের অভিযোগ, তাকে দেয়া বিলে মিটাররিডিং দেখানো হয়, চলতি মাসের ৯ জুন। সাধারণতঃ ৫ জুলাই পরে এ বিল পরিশোধ হওয়ার কথা। অথচ গ্রাহকের কাছে জুন মাসের বিল পরিশোধের জন্য বিল আসে ২৪ জুন। ওই দিন গ্রাহক বিল ও মিটার রিডিং চেক করে দেখতে পান ৯ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত তার মিটারে ১৫ দিনে ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ৮০ ইউনিট। এক্ষেত্রে তার মিটারে দৈনিক বিদ্যুতের ব্যবহৃত গড় পরিমাণ দাঁড়ায় ৫.৪ ইউনিট। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মিটার রিডারের দেয়া ভূতড়ে বিলের হিসেবে উল্লেখিত, ১৬ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এই ২৪ দিনে ওই গ্রাহকের মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ দেখানো হয় ৩৯০ ইউনিট। এ হিসেবে তার দৈনিক ব্যবহৃত ইউনিট দাঁড়ায় ১৬.২৫।

ওই মিটারের ব্যবহারকারী ভাড়াটে মাহবুব বক্ত চৌধুরী বলেন,‘আমার হিসেব মতে দৈনিক ১০/১১ ইউনিট বিদ্যুত ব্যবহার হওয়ার কথা। এ হিসেবে আমি গত মে মাসেরও বিল দিয়েছি। অথচ পল্লীবিদ্যুতের দেয়া জুন মাসের বিলে দৈনিক বিদ্যুতের ব্যবহৃত গড় ইউনিট ১৬.২৫ যেমন সত্য নয়,তেমনি ৫.৪ ইউনিটের হিসেবও সত্য নয়। যদি পল্লীবিদ্যুতের দেয়া প্রাক্কলিত বিলের হিসেব সঠিক হতো,তাহলে ১৫ দিনে ব্যবহৃত মিটারে তাদের দেয়া হিসেব মতে ২৪৩.৭ ইউনিট ব্যবহার হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে ৮০ ইউনিট ব্যবহৃত হয়েছে বলে দাবী করেন’ মাহবুব।

তিনি বলেন,‘আমার মিটারে জুন মাসের বিলে ব্যবহৃত ইউনিট ধরা হয়, প্রকৃত বিদ্যুত ব্যবহারের চেয়ে বেশী। পল্লীবিদ্যুতের দেয়া বিলের মে মাসের হিসেব অনুযায়ী দৈনিক ১০/১১ ইউনিট বিল হওয়ার কথা। অথচ জুনের বিলে দৈনিক বিদ্যুত ব্যবহার দেখানো হয়েছে,১৬.২৫ ইউনিট। এর ফলে পল্লীবিদ্যুত সমিতি অতিরিক্ত ৭০/৮০ ইউনিট যোগ করে চতুর্থ ধাপের (যার প্রতি ইউনিটের মূল্য ৬টা ২ পয়সা) বিল তৈরীর মাধ্যমে আমার আর্থিক ক্ষতিসাধন করেন।

মাহবুব বক্ত চৌধুরী বলেন,‘এক মাসের প্রাক্কলিত অতিরিক্ত বিল যদি পরবর্তী মাসে পল্লীবিদ্যুত সমন্বয় করে থাকেন সেক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বিলে যেহেতু ব্যবহৃত ইউনিটের কোনও ধাপ নেই সেহেতু কোনো গ্রাহকের ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিদ্যুত ইউনিট ব্যবহারে ৬টি ধাপ থাকায় তারা বিরাট ক্ষতির সম্মূখীন হন’। তিনি দাবী করেন,জুন ক্লোজিং এর নামে যেসব গ্রাহকদের বিল পরিশোধের সর্বশেষ তারিখ চলতি মাসের ৩০ জুন দেখানো হয়েছে,তাদের সবার বিলেই ‘এস্টিমেইটেড’ ইউনিট যোগ করে এসব গ্রাহকদের চতুর্থধাপের বিলের ফাঁদে ফেলে অনেক টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এমনকি প্রত্যেক বছরের জুন মাসে এভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে ভূতুড়ে বিদ্যুত বিলের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়’।

জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুত সমিতির এজিএম সদস্য সেবা নগেন্দ্র নাথ সিং মুঠোফোনে বলেন,‘এই বিলটা না দিয়ে থাকলে উনার ফাইনাল বিল কইরা সংশোধন করাই দিতাম। তারপরও অফিসে গিয়ে এই বিলটা চেক করে দেখব। তিনি বলেন,‘জুন ক্লোজিংয়ে কারণে আমরা অনেক মিটার রিডিংই একটু আগাই দিছি। এরা এগুলো কাভার দিতে গিয়ে হয়তো মিটার রিডিং না দেইখ্যাও আন্দাজে রিডিং বসাই দিছে। হয়তো সেকারণে উনার কয় ইউনিট বিল বেশী দিছেন। পরিশোধ করার আগে আসতো তাহলে আমাদের সংশোধন করার সুযোগ থাকতো। তবে সবার ক্ষেত্রে যে, এরকম হবে বা হয়ে যাবে এরকম যে একেবারেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাবে না; আবার এরকম যে হবে এরকম তো সম্ভব না।’

তিনি বলেন,‘সব বিল তো এইরকম হয়না। হয়তো মিটার রিডাররা তার চাপ কমানোর জন্য এরকম হয়তো রেয়ার একটা দুইটা কেইস হইতে পারে। এরকম হইলে গ্রাহক আমাদের দৃষ্টি গোচর করলে সংশোধন করে দেই।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২৭ জুন ২০২৯/আইএ/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন