আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং

অপহরণ নয় গ্রেফতার হয়েছেন বড়লেখার রাজিয়া

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-১৩ ২১:০৫:২৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা :: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার নিজবাহাদুর ইউনিয়নের সাবেক নারী ইউপি সদস্যা রাজিয়া সুলতানাকে অপহরণ করা হয়নি। টাঙ্গাইলের একটি অপহরণের মামলায় টাঙ্গাইল সদর থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে ।

টাঙ্গাইলের এক প্রবাসীকে অপহরণের পর মুক্তিপনের নামে যে বিকাশ নম্বরে টাকা নেওয়া হয়েছে সেটি রাজিয়া সুলতানার নামে নিবন্ধন করা। এর প্রেক্ষিতে গত শনিবার (৬ জুলাই) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টাঙ্গাইল সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রতিমা রানী দাস বড়লেখা থানা পুলিশের সহযোগিতায় রাজিয়া সুলতানাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন।

অপরদিকে অপহরণ মামলায় সাবেক নারী ইউপি সদস্যা রাজিয়া সুলতানা গ্রেফতার হলেও কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি উল্টো রাজিয়াকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে নিজের মত ব্যাখা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে অপপ্রচার করে। এতে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ায়। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে একজন জনপ্রতিনিধির নাম জড়িয়ে এ মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হয়। এ ঘটনায় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

বিভ্রান্তি এড়াতে রাজিয়াকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে শুক্রবার (১২ জুলাই) রাতে গণমাধ্যমের কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেন বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক।

পুলিশ, রাজিয়ার পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ জুন টাঙ্গাইল জেলায় আক্কাস (২৭) নামের প্রবাসী এক যুবক অপহরণের ঘটনায় তাঁর পরিবার সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রতিমা রানী দাস। এরই মধ্যে ওই যুবকের পরিবারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে অপহরণকারীরা। তারা মুক্তিপন দাবি করে। দাবিকৃত টাকা বিকাশ নম্বরে পাঠাতে বলে একটি নম্বরও দেয়। আক্কাসের পরিবার ওই বিকাশ নম্বরে ৪০ হাজার টাকা পাঠায়। টাকা পাঠানোর পর অপহরণকারীদের পক্ষ থেকে আর কোনো সাড়া না পেয়ে তারা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাটি জানান। আক্কাসের পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের নম্বরটি নিয়ে কাজ শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জানতে পারেন যে বিকাশ নম্বরে টাকা গ্রহণ করেছে অপহরণকারীরা সে নম্বরটি রাজিয়া সুলতানা নামের এক নারীর নামে নিবন্ধন করা। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়ন এলাকায়। এর প্রেক্ষিতে গত শনিবার (৬ জুলাই) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টাঙ্গাইল সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রতিমা রানী দাস বড়লেখা থানা পুলিশের সহযোগিতায় নিজবাহাদুর ইউনিয়নের রাজিয়া সুলতানার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করেন। এরপর রাজিয়ার দেওয়া তথ্যমতে তার স্বামীকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ বড়লেখার সম্ভাব্য সবস্থানে অভিযান চালায়। অভিযানে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে রাজিয়াকে নিয়ে টাঙ্গাইল চলে যায় পুলিশ। সদর থানায় আক্কাসের পরিবারের দায়ের করা অপহরণ মামলায় ৭ জুলাই রাজিয়া সুলতানাকে আদালতের মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

প্রবাসী যুবক অপহরণের এই ঘটনায় আরো বেশ কয়েকজনকেও গ্রেফতার করার তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

অন্যদিকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে রাজিয়া সুলতানাকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে একজন জনপ্রতিনিধির নাম জড়িয়ে নিজের মত করে মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ রাজিয়ার পরিবারের মামলা নেয়নি বলেও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়।

যদিও রাজিয়া সুলতানা গ্রেফতারের পরপরই তার চাচাতো ভাই অলিউর রহমান বড়লেখা থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বরও রাজিয়ার পরিবারের কাছে দেয়। স্থানীয় নিজবাহাদুর পুর ইউনিয়ন পরিষদদের চেয়ারম্যানকেও বিষয়টি জানানো হয়।

রাজিয়ার ভাই হোসেন আহমদ ও চাচাতো ভাই অলিউর রহমান বলেন, ‘পুলিশ আপাকে ধরে নিয়ে গেছে এই খবরে আমরা থানায় খোঁজ নেই। ওসি স্যার গ্রেফতারের কথা জানান। এরপর টাঙ্গাইলের এসআই স্যারের নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করার কথা বলেন। বড়লেখার ওসি স্যার আমাদের অনেক হেল্প করেছেন। অনেকে না জেনে ফায়দা নেওয়ার জন্য অপপ্রচার করছেন।’

স্থানীয় নিজবাহাদুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘রাজিয়া গ্রেফতার হয়েছেন। বিষয়টি পুলিশ রাজিয়ার পরিবারকেও জানিয়েছে। আমাকেও জানিয়েছে। তার পরিবার প্রথম নিশ্চিত হয়েছে। আমি টাঙ্গাইলের থানার এসআইর সাথে কথা বলেছি। একটা সত্য ঘটনাকে নিয়ে কেনো বিভ্রন্তি ছড়ানো হয়। যার পরিবারের সদস্য গ্রেফতার হয়েছে তার থেকে এলাকাবাসীর দরদ বেশী হয়ে গেছে। তারা রাজিয়া গুম হয়েছে বলে অপপ্রচার করছে।’

রাজিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রতিমা রানী দাস বলেন, ‘আমাদের থানায় একটি জিডি হয়। পরবর্তীতে এটি অপহরণ মামলা হয়। রাজিয়ার আইডি কার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা সিম দিয়ে ভিকটিমের বাবার কাছে ফোন করে বলা হয়েছে যে, আপনার ছেলে আমাদের কাছে আছে। পঞ্চাশ হাজার টাকা দেন। মুক্তিপনটা চাইছে থানায় জিডি করার পর। ছেলের বাবা ৪০ হাজার টাকা দিয়েছে। টাকা পাওয়ার পরপরই ফোন বন্ধ করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৭ জুলাই রাজিয়া সুলতানাকে আদালতের মাধ্যমে টাঙ্গাইল করাগারে পাঠানো হয়েছে।’

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, ‘রাজিয়াকে গ্রেফতারের পরপরই তার পরিবার আমার সাথে যোগাযোগ করে। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করি। তদন্তকারী অফিসারের নম্বর দেই। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকেও জানাই। তারা সকলেই যোগাযোগ করেন। আমিও যোগাযোগ করেছি। কিন্তু একটি তদন্তাধীন মামলায় গ্রেফতার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ পুলিশকে নিয়ে ইচ্ছামত মনগড়া বক্তব্য দিচ্ছে। রাজিয়ার পরিবারের সাথে যোগাযোগ না করে স্থানীয় কতিপয় কিছু ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে এ সমস্ত বক্তব্য দিচ্ছে। এটা দুঃখজনক। ভবিষ্যতে এই ধরনের মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলার অনুরোধ করছি।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ জুলাই ২০১৯/পিডি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন