Sylhet View 24 PRINT

কমলগঞ্জে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামার ও চাল ভাঙ্গার মিল ড্রাইভার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-১০ ০১:১২:৪৩

জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ :: আর মাত্র দুই দিন পর ঈদ উল আযহা। আগুনে পোড়ানো নরম লোহায় হাতুড়ি পেটানো ঠুং ঠাং শব্দে দিন ও রাত সমান ব্যস্ততায় সময় পার করছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কামার শিল্পীরা। এদিকে সিলেট অঞ্চলে আতপ চালের গুড়া দিয়ে রুটি তৈরীর প্রচলন ধারাবাহিকতায় ব্যস্ততায় রয়েছে চাল ভাঙ্গার মিলগুলি। তাই অধিক পরিশ্রম হলেও বছরের অন্য সময়ের চেয়ে বাড়তি রোজগারের আশায় ক্লান্তি ভুলে ব্যস্ত থাকেন মিলের ড্রাইভার ও কামার।

সরেজমিনে শমশেরনগর, ভানুগাছ, মুন্সিবাজারসহ বিভিন্ন হাট বাজারে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছেন কামাররা। লোহা ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় দা, চাকু, ছুড়ির দাম এবার বেড়েছে বলে জানিয়েছে কামার শিল্পীগন। এখন ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড়। কামারদের কেউ ব্যস্ত নতুন দা-বটি তৈরিতে, আবার কেউ ব্যস্ত পুরনো দা-বটিতে শান দিতে।

এদিকে মানুষজন ঈদের সময় বাসা বাড়িতে চালের গুড়ার নানা জাতের পিঠার সাথে গুড়া দিয়ে রুটি তৈরী করেন। তাই ঈদের আগে ব্যস্ত থাকতে হয় আতপ চাল ভাঙ্গার কাজে। কুরবানির মাংস দিয়ে রুটি খেতে আলাদা স্বাদ বলেও। কোরবানীর জন্য দা, বিভিন্ন সাইজের চাকু, ছোড়া ও বটির এখন ভীষণ চাহিদা। ফলে রাতদিন কাজ চলছে কামারের দোকানগুলোতে। আগুনকে শিখায় তাপ দিয়ে, হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি হচ্ছে দা-বটিঁ, চাপাতি ও ছুরি।

পশু কোরবানিতে এসব অতীব প্রয়োজনীয়। তাই নতুন দা-বটি তৈরি ছাড়াও কামাররা সমান ব্যস্ত পুরনো দা-বঁটি, ছুরি ও চাপাতিতে শাণ দিতে। বর্তমানে মোটর চালিত মেশিনে শান দেয়ার কাজও চলছে। তাই যেন দম ফেলারও সময় নেই কামারদের। অন্য সময়ের চেয়ে দোকানে মৌসুমী কর্মচারীর সংখ্যাও এখন বেড়েছে বহু গুন।

ভানুগাছ বাজারের বিশ্ব কর্মকার, সুবিনয় দেব ও অরুন দে জানান, কুরবানি পশু জবাই করাসহ মাংস কাটা ও চামড়া ছলানোর ধারাল ছুরির প্রয়োজন। এজন্য পুরান জিনিষ শান দিতে ও কেউ নতুন তৈরি করতে দোকানে আসছেন। পুরোদমে কাজ চলছে দোকানে। সারা বছর কাজের চাপ থাকে না। যা চাপ এই ঈদ মৌসুমেই। তারা আরও জানান, বছরের চেয়ে এবার বেচাকেনা একটু কম হচ্ছে। স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা ব্যবহার করে দা-বটি ও ছুরি তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, দামও বেশি। কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণ গুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে।

স্থানীয় লোকজন জানান, বছরের ১১ মাসে ব্যবসা হয় এক রকম আর কোরবানির ঈদের আগের এক মাসে ব্যবসা হয় আরেক রকম। ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে কমলগঞ্জে প্রতিটি এলাকায় বেচা-কেনা ও ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ক্রেতারাও প্রয়োজন মত দেখে শুনে কিনছে তাদের কোরবানীর সরঞ্জাম।

মিল মালিক মশিউর রহমান জানান, সারা বছর মিলে হলুদ, মরিচ, গম ও চাল ভাঙ্গিয়ে থাকলেও কুরবানির ঈদের আগে ব্যস্ত থাকতে হয় আতপ চাল ভাঙ্গার কাজে। গড়ে প্রতিদিন ৩শ’ কেজি চাল ভাঙ্গাতে হচ্ছে। প্রতি কেজি ১০ টাকা হারে ভাঙ্গিয়ে থাকেন তিনি। ঈদের সময় বাসা বাড়িতে চালের গুড়ার নানা জাতের পিঠার সাথে গুড়া দিয়ে রুটি তৈরী করেন। তাই কুরবানির মাংস দিয়ে রুটি খেতে আলাদা স্বাদ বলেও মিল মালিক জানান।

শমশেরনগর সুজা মেমোরিয়াল কলেজ অধ্যক্ষ ম মুর্শেদুর রহমান বলেন, কুরবানির ঈদের পর কুরবানির মাংস দিয়ে চালের গুড়ার রুটি খাওয়ার প্রচলন অনকে পূর্ব থেকে। এর স্বাদও আলাদা। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে এর প্রচলন রয়েছে। মোটামোটি সব মুসলিম পরিবারই চালের গুড়া দিয়ে রুটি করে। আর পশু জবাই ও মাংস কাটার যন্ত্রপাতি তৈরি করার জন্য কামারের ধারস্থ হতে হয় সকলেই।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১০ আগস্ট ২০১৯/জেএ/ডিজেএস

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.