Sylhet View 24 PRINT

কুলাউড়ায় রনির মৃত্যু : দোকান মালিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-১০ ১৭:২৪:৫০

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুলাউড়া :: রনি শর্ম্মা (২৮)। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দোকানের কর্মচারী হিসেবে দীর্ঘ ৮ বছরের কর্মস্থল ছিলো কুলাউড়ার টিলাগাঁও ইউনিয়নের ফরহাদ ট্রেডার্স। এমনি অবস্থায় গত ২ আগস্ট বিকাল ৪টার দিকে ওই দোকানে মাথার পিছনে গুরুতর আঘাতরত অবস্থায় অজ্ঞান রনিকে দেখতে পান পাশের দোকানদাররা। খবর পেয়ে রনির বাবা রণজিৎ শর্ম্মা ও দোকান মালিক ফরহাদুল হক রক্তাক্ত রনিকে উদ্ধার করে কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রনিকে মৃত ঘোষণা করেন।

রনি টিলাগাঁও ইউনিয়নের বিজলী গ্রামের রণজিৎ শর্ম্মার বড় ছেলে। শান্ত প্রকৃতির রনির এরকম অস্বাভাবিক মৃত্যু কোনভাবেই মানতে পারছেন না তাঁর পরিবার ও স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, রনিকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগের তীর খোদ দোকান মালিক ফরহাদের দিকে। এদিকে দোকান মালিক ফরহাদ ওই দিন বাড়িতে ছিলেন না উল্লেখ করে বলেন, ‌‘আহত হওয়ার ‌খবর পেয়ে আমি নিজে হাসপাতালে নিয়ে গেছি রনিকে।’

এ ঘটনায় গত ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার নিহত রনির পিতা রণজিৎ শর্ম্মা বাদী হয়ে আদালতে ফরহাদ ট্রেডার্স এর মালিক ফরহাদ হক (৪৫), তার দুই ভাই এমদাদুল হক (৩৫), লিটন হক (৩৩) এবং ফরহাদের স্ত্রী শারমিন হক (৩২) এর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এলাকাবাসী এবং নিহত রনির পরিবার জানান, রনি শর্মা দীর্ঘ আট বছর ধরে ফরহাদ ট্রেডার্স এ চাকরি করে। কিন্তু সম্প্রতি তাকে ব্যাবসায় পার্টনার করার কথা বলে জমি বিক্রি প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা নেয় ফরহাদ ট্রেডার্স এর মালিক ফরহাদ।

নিহত রনির ভাই পার্থ শর্ম্মা অভিযোগ করে বলেন, দোকানের মালিক ফরহাদ প্রায় প্রতিদিনই রনিকে টাকা ঘাটতি দেখিয়ে শারীরিকভাবে অত্যাচার করতো। সে আরো জানায় মৃত্যুর দিন রনির মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল, নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিলো এবং দুই হাতের আংগুলগুলো থেতলানো ছিল। এ মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবী জানান পার্থ শর্ম্মা।

টিলাগাঁও এলাকার ব্যাবসায়ী নিতাই পাল বলেন, রনি শান্ত প্রকৃতির ছেলে। আজ পর্যন্ত কারো সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়েছে এমনটি কেউ বলতে পারবেনা। তার এ মৃত্যুকে তিনিও অস্বাভাবিক মনে করছেন সেই সাথে ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবী জানান তিনি।

রনির পাশের বাড়ির হাফিজুল নেছা (৪৫) বলেন, রনি অসুস্থ ছিলোনা। সে খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে। তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন আর অতীতে দোকান মালিক ফরহাদ কর্তৃক শারীরিকভাবে নির্যাতন করা এসব বিষয় বিবেচনা করলে এটা স্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটা হত্যা। আর্থিক বিষয় নিয়ে ঝামেলার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এ মৃত্যুর সঠিক তদন্ত এবং বিচার দাবী করেন।

রনির মা কাঞ্চন রানী শর্মা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সে ওই দোকানে চাকুরী করছে। গত এক বছর ধরে প্রায়ই বাড়িতে আসত না। কথা বলার সময় তিনি বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন।। তিনি বলেন, গত একমাসের মধ্যে মাত্র একদিন বাড়িতে এসেছিলো রনি। রনিকে তার মালিক বাড়িতে আসতে দিতোনা।

রনির বাবা রণজিৎ শর্ম্মা বলেন, ঘটনার দিন থেকে একমাস বাড়ি আসেনি রনি আর ঘটনার দিন বিকেল ৫টার দিকে খবর পেয়ে প্রথমে দোকানে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি তাঁকে রবিরবাজার ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখি কোন ডাক্তারর চেম্বারে নেই। পরে তাঁকে কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে আসি। তাঁর মাথার পিছনে আঘাতের কারণে অনেক বড় ক্ষত দেখা গিয়েছিলো। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিলো। আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে ফরহাদ। রনির কোনো অসুখও ছিলোনা। তিনি বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

কুলাউড়া সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম জানান, রনির মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

এদিকে অভিযুক্ত দোকান মালিক ফরহাদ হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। আমি ঘটনার দিন বাড়ি ছিলাম না। খবর পেয়ে একটি অনুষ্ঠান থেকে এসে দেখি এই অবস্থা। সাথে সাথে তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। একপর্যায়ে কুলাউড়া উপজেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করে।

কুলাউড়া থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১০ আগস্ট ২০১৯/ এসএ/ জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.