Sylhet View 24 PRINT

হাওরপাড়ে মৌসুমি গরুর খামার,স্বাবলম্বি কৃষকরা,পাচ্ছেনা ব্যাংকিং সুবিদা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-২৩ ১১:০৮:৫০

সৈয়দ বয়তুল আলী,মৌলভীবাজার ::মৌলভীবাজারে হাওরপাড়ের বিভিন্ন গ্রামে ছোট ছোট মৌসুমি গরুর খামার গড়ে ওঠছে। স্থানীয় জাতের ছোট ও মাঝারি আকারের এই গরুর চাহিদাও বেশি বিষেশ করে ঈদুল আজহায় স্থানীয় জাতের এই সমস্ত গরুর খদর আরো বেড়ে যায় । এই খামারগুলো হাওরের প্রাকৃৃতিক ঘাস নির্ভর হওয়ায় গরু লালন-পালনে তুলনামূলক খরচ কম। সীমিত সময়ে কম খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ায় স্বাবলম্বি হচ্ছেন কৃষকরা।অন্য দিকে  অনেকেই মৌসুমি খামরে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন।

সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের


পশ্চিমভাগ,কানিকিয়ারি,সুবিদপুর,কুবজার, গ্রামসগ কয়েকটি এলাকা ঘুরে খুঁজ নিয়ে যানাযায়,প্রায় একশত  বাড়িতে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দুইটা থেকে ১৫-২০টা পর্যন্ত গরু নিয়ে এলাকার কুষক ও বেকার যুবকরা ছোট ছোট খামার গড়ে তোলেছিলেন। পূঁজির অভাবে এসকল খামারিদের গরুর সংখ্যা কম ছিল।  অনেকে নিজেই গরু চরানো, ঘাস সংগ্রহ, খড় খাওয়ানোসহ গরুর সার্বিক সেবাযতœ করছেন। এতে তাদের তেমন খরচই হচ্ছে না। যাদের গরুর সংখ্যা বেশি, তারা ঘাস ক্রয় ও বাড়তি শ্রমিক নিয়োগ করেছেন।

খামারি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাওরপাড়ের মানুষ জীবিকার এক ফসলি বোরো ফসলের উপর নির্ভরশীল। এ বছর ভালো ধান ফলেছে। কৃষকদের মুখে হাসিও ফুটেছিল কিন্তু ধানের সঠিক দাম না পাওয়ায় চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন,আবার কোন কোন বছর আতি বৃষ্টি ও খড়া এবং বন্যার কারনেও কৃষকদের বোর ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। এসমস্ত ক্ষতি পুষিয়ে ওঠতে হাওরপাড়ের প্রান্তিক ও ছোট কৃষকদের এবং বর্গা চাষীরা অনেকেই গড়ে তুলেন মৌসুমি গরুর খামার। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিগত কয়েক বছর ধরে বোর ধানের চারা রুপনের পর বিশেষ করে পৌষ-মঘ মাসে গরু কিনেন তারা। কেউ চারটা কেউ ছয়টা। আবার কেউ কেউ ১৫ থেকে ২০টা গরু কিনেন।যাদের সামর্থ নেই যেমন বর্গা চাষীরা অন্যের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে ১ থেকে ২টি গরু ক্রয় করেন।  হাওরাঞ্চলে পর্যাপ্ত ঘাস ও খড়েরও প্রাচুর্য রয়েছে।হাওরে প্রাকৃৃতিক ঘাস ও খড়ের ওপর নির্ভর করে গরু লালন-পালন করেছেন তারা। অন্য কোনো খাবার তেমন একটা খাওয়াতে হয়নি। ফলে প্রাকৃতিক খাবার খেয়েই বেড়ে ওঠে এইসব খামারের গরু। মাঘ মাস পরে কাউয়াদীঘি হাওরে প্রচুর ঘাস থাকে। প্রায় জৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত গরু উন্মুক্তভাবে চরে খেতে পারে। কোরবানির হাটে উন্মুক্ত ও প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বেড়ে ওঠা ছোট ও মাঝারি আকারের এসকল গরুর  চাহিদা বড় আকারের গরুর  চেয়ে বেশি। বিক্রি করতে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। দেশীয় এই প্রজাতীর গরুর চাহিদা বাজারে অন্যান্য গরুর চেয়ে সব সময় বেশি তাকে। ঈদের সময় ক্রেতারা বাড়ি এসেই পছন্দের গরু কিনে নিয়ে যান। অল্প সময়ে অল্প পূঁজিতেই তারা ভালো মুনাফা করতে পারছেন। তবে খামারিদের অনেকেই জানান, পুঁজি সংকটের কারণে অনেকেই গরুর সংখ্যা বাড়াতে পারেননি। ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেলে তারা আরও বেশি গরু লালন-পালন করতে পারতেন। লাভের পরিমাণও বেশি হত।
 
ঋণের জন্য কোন ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কয়েক জন উত্তর দেন,আমরা রাজনগরে সোনালী ব্যাংক,কৃষি ব্যাংক,জনতা ব্যাংকে গিয়ে ছিলাম।সোনালী ব্যাংকের ব্যাবস্থাপক ও লোন আফিসার পলশ দেব আমাদের পাত্তা দেননি বরং আমরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তাই অভহেলা করে বিভিন্ন কৌশলে বিদায় করে দেন।কৃষি ব্যাংক ও এই রকম বিভিন্ন কৌশলে বিদায় করে কিš‘ জনতা ব্যাংকের ব্যাবস্থাপক আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোগকে স্বাগত জানান ও আমাদেরকে ব্যাংকিং সহযোগীতার আ্স দেন।

রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ের পশ্চিমভাগ গ্রামের সৈয়দ খায়রুল আলী ,সামছুল ময়িা,হেলাল মিয়া,শাহ জিল্লুসহ অনেকেই বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে আমরা নিজ নিজ সামথ্য অনুযায়ী কেউ ২টা,কেউ ৪টি,আবার আনেকেই ১০ থেকে ২০টি গরু কিনেন।  হাওরের প্রাকৃতিক ঘাস ও খড়ের ওপর নির্ভর করেই গরু লালন-পালন করি। বেশিরভাগ সময়ই হাওরের খোলা জায়গায় গরু উন্মুক্ত থাকে। তেমন কোনো বাড়তি খরচ নেই। মাঝেমধ্যে শুধু ধানের কুড়া (ভুষি) কিনতে হয়।’ তারা আরো বলেন,স্থানীয় জাতের গরু হওয়ায় এ গরুর চাহিদা বেশি। তাছাড়া প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বড় হওয়ায় গরু দেখতেও সুন্দর। আমাদের এলাকায় কয়েক বছর ধরে ঈদকে সামনে রেখে মৌসুমি গরুর খামার একটি উন্নত ব্যবসা হয়ে ওঠছে। এক্ষেত্রে সরকার বা ব্যাংক থেকে আর্থিক সুবিধা পেলে এই ব্যবসাটি আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠতো। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পূঁজি সংকটে অনেকের পক্ষেই গরু কেনা সম্ভব হচ্ছে না।’ খায়রুল আলী জানান, গত মাঘ মাসে ২২ হাজার টাকায় তিনি যে গরু কিনেছিলেন। এটি ঈদে বিক্রি করেছেন ৪০ হাজার টাকা। ৩১ হাজার টাকায় কেনা গরু বিক্রি করেছেন ৫৫ হাজার টাকায়। বর্গা চাষী শামসুল মিয়া জানান, অন্যের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মাঘ মাসে ৮০ হাজার টাকায় দুটা গরু কিনেছিলেন। ঈদে এই গরু বিক্রি করেছি দেড় লাখ টাকা। যার কাছ থেকে টাকা এনেছি উনাকে মূল ৮০ হাজার টাকা দিয়ে লাভের অর্ধেক আমি নিয়েছি।

রাজনগর সোনালী ব্যাংকের ব্যাবস্থাপক আসাদুজ্জামান জানান,কৃষি ঋণ নিয়ম অনুযায়ী দেযা হচ্ছে কিন্তু যাদের জামানত নেই তাদের বেলা একটু সমস্যা হচ্ছে।   

রাজনগর কৃষি ব্যাংকের ব্যাবস্থাপক রাজন চন্দ বিশ্বাস বলেন,আমি নতুন এসেছি এ পর্যন্ত কোন গ্রাহক এসে হয়রানি স্বীকার হননি।

জেলা প্র াণিসম্পদ কর্মকর্তা এ বি এম সাইফুজ্জামান বলেন, হাওরপাড়ে ছোট ছোট খামারের কিছু কথা তিনি শুনেছেন। এই বিষয়ে পরবর্তী সময়ে খোঁজ নিয়ে তাদের কিরকম সহযোগিতা করা যায়। সে চেষ্টা করবেন।



উল্লেখ্য,সূত্রে জানাযায় মৎস,গবাদিপশু পালন এর ক্ষেত্রে ১লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে কোন জামানত এর প্রয়োজন হয়না,

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ আগস্ট ২০১৯/মিআচ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.