আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

কমলগঞ্জের চা বাগানগুলোতে উৎপাদিত মাদক সেবনে বিপর্যস্ত যুবসমাজ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-০৯ ১৫:৫৬:১৪

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সকল চা বাগানে উৎপাদিত মাদক সেবনে ক্ষতিগ্রস্থ যুবসমাজ। উৎপাদিত মাদক সেবন করে চা শ্রমিকরা বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া বিবাদসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিনের এই প্রবণতা রোধ হচ্ছে না কোনমতেই।

মাদক উৎপাদনের সাথে জড়িত শমশেরনগর চা বাগানে ৬৫টি পরিবার। মাদকের উৎপাদন ও সেবন বন্ধে সভা ও মতবিনিময় করছেন শমশেরনগর পুলিশ ফাড়ির কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও চা বাগানের চা শ্রমিক সন্তানরা।

জানা যায়, দেশের বিভিন্ন চা বাগানগুলোতে ব্রিটিশ আমল থেকে প্রচলিত মদের যে সমারোহ ছিল তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সারাদিন পরিশ্রমের পর রাতে মাদক সেবন করে মাতাল শ্রমিকরা পরিবারের স্ত্রী-সন্তানদের সাথে ঝগড়াঝাটি, হানাহানি, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। ফলে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত ছাড়াও বিপর্যস্ত হচ্ছে চা বাগানের মাদকাসক্ত যুব সমাজ। উপজেলার চা বাগানের লেবার লাইনের মধ্যে অবৈধভাবে তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে উৎপাদিত হচ্ছে মাদক। অবাধে গড়ে উঠা মদের পাট্টায় তৈরি হওয়া মদের মধ্যে ‘চোলাই’ ও ‘হাড়িয়া’ নামে পরিচিত। চা বাগানে মদ পান করছেন প্রায় অর্ধ শতাংশ শ্রমিক। সময়ের সাথে যুক্ত হচ্ছেন বস্তির একটি অংশ।

মাদকের উৎপাদন ও সেবন বন্ধে সভা ও মতবিনিময়সহ বিভিন্ন প্রন্থায় শমশেরনগর পুলিশ ফাড়ির কর্মকর্তা অরুপ কুমার চৌধুরী, শমশেরনগর  ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ, ও চা বাগানের চা শ্রমিক সন্তান মহন রবিদাস ও চা শ্রমিক সংগঠন। সম্প্রতি শমশেরনগর চা বাগানে মদের আস্তানা চা শ্রমিক সন্তান রবিদাসের উদ্যোগে পুলিশ প্রসাশন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেওছড়া ফাড়ি চা বাগানে মত বিনিময় করে তিনদিনের আলটিমেডাম দেওয়া হয়েছে।

শমশেরনগর থেকে সরাসরি ভারতের ত্রিপুরা-কৈলাশহর ও শুল্ক স্থলবন্দর রুট থাকায় ভারতীয় মাদকের বিস্তার লাভ করছে। সম্প্রতি সময়ে চাতলাপুর ও কানিহাটি চা বাগানে বাগানের মাদক ছাড়াও ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ ভারতীয় মাদক সেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মাদকসেবীরাও এসব স্থানে এসে আড্ডায় মেতে উঠেন।

চা বাগান শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চা বাগান সমুহে এখনও প্রায় অর্ধ শতাংশ শ্রমিক ও যুব সমাজ মদ পানে যুক্ত। সন্ধ্যার পরেই মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে মদ পান করেন। নিশাদল, চিটাগুড়, ইউরিয়া সার, পুরাতন ভাত এসব নানা পদার্থ দিয়ে চোলাই ও হাড়িয়া মদ তৈরী করা হয় বলে তারা জানান। যারা বেশি পরিমানে মদ পান করে তারা মাতাল হয়ে ঝগড়া-ঝাটি, স্ত্রী, সন্তানদের মারধোর করে। ঘরে গিয়ে হাড়ি-পাতিল, চুলা ভেঙ্গে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে। পঞ্চাশ ভাগ পুরুষ এর মধ্যে যুবকরাই বেশি আসক্ত বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন। 

শমশেরনগর দেওছড়া চা বাগানের দেওরাজ রবিদাস বলেন, বাগানে যারা মদ পান করে তারা প্রতি রাতে উপার্জিত সব টাকা দিয়ে মদ কিনে খায়। এরপর মাতাল হয়ে ঝগড়াঝাটি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

কানিহাটি চা বাগানের অর্চনা বাউরী, সরসতি মৃধা, মীনা বাউরী, আলীনগরের নান্সী রিকিয়াশন, সুমিত্রা রিকিয়াশন, দেওন্তী বাউরী  জানান, তাদের স্বামীরা সন্ধ্যার পর মদের পাট্টায় গিয়ে মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তাঘাটে ও ঘরে এসে ঝগড়া-ঝাটি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।

আলীনগর চা বাগানের রাজদেও কৈরী বলেন, চা বাগানে উৎপাদিত মদের পাট্টায় এখন বস্তির যুবকদেরও দেখা যায়। এসব মদ পান করে যুব সমাজ ধ্বংস, মানুষের জীবন যাত্রায় ব্যাঘাত, পরিবেশ বিনষ্ট, শারীরিকভাবে সমস্যাসহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরনে চা বাগান অবৈধভাবে মদের পাট্টা সমুহ বন্ধ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

শমশেরনগর চা বাগানের ইউপি সদস্য ও শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন বলেন, চা বাগানে মাদক বন্ধে এখন আমরা সচেতনতা সৃষ্টি করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সভা করায় এখন মদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হচ্ছে।

শমশেরনগর চা বাগানের ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ বলেন, আমার ইউনিয়নের মধ্যে যে চা বাগন রয়েছে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মাদক বন্ধে চা বাগানে সচেতনতা মূলক সভাও করা হচ্ছে। তবে মাদকে ব্যবসা বন্ধ করে অনেই দেখা যাচ্ছে অন্য ব্যবসা চালু করছে। এর পর নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) অরুপ কুমার চৌধুরী বলেন, চা বাগানের মধ্যেও সব সময় অভিযান পরিচালিত হয়। খবর পেয়ে যাওয়ার পর কাউকে পাওয়া যায় না। চুলা ও হাড়িপাতিল ভেঙ্গে দেয়া হয়। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে মামলাও দেয়া হচ্ছে। মাদক বন্ধে এখন চা বাগানে সচেতনতা মূলক সভাও হচ্ছে। সকলের সহযোগিতা পাওয়া গেলে দ্রুত এসব বন্ধ করা সম্ভব বলে দাবি করেন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯/জেএ/এসডি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন