Sylhet View 24 PRINT

মৌলভীবাজারে সুসংগঠিত আ’লীগ, বিরোধ মিটলেও মাঠে নেই বিএনপি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-২১ ১২:১৬:৩০

বাম পাশ থেকে ছবি- নেছার আহমদ, মিছবাহুর রহমান, এম নাসের রহমান, মিজানুর রহমান



শাকির আহমদ, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) :: বর্তমান আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির অধীনে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে একমাত্র মৌলভীবাজার জেলায় কাউন্সিল ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর ওই সম্মেলনের পর থেকে দীর্ঘদিনের গ্রুপিং ভেঙ্গে এক মঞ্চে রাজনীতি করছেন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দরা। বর্তমানে এই দল বেশ সুসংগঠিত। এদিকে বিগত জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দরাও সকল বিরোধ মিটিয়ে এক কাতারে এসে রাজনীতি করছেন। তবে সম্প্রতি ছাত্রলীগ কর্তৃক মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে ‘শহিদ জিয়া অডিটোরিয়ম’ নামফলক ভাঙ্গার ঘটনায় বিএনপির ভূমিকা সংবাদ সম্মেলনে সীমাবদ্ধ ছিলো। ওই ঘটনায় মাঠে নামতে পারে নি বিএনপি।

মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের মেয়াদোত্তীর্ণ ৭ উপজেলা কমিটির তারিখ ঘোষণা করলেও শুধু বড়লেখা উপজেলার কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোর তারিখ পেছানো হলেও শীঘ্রই সম্মেলন হবে বলে জানিয়েছেন জেলা নেতৃবৃন্দ। এদিকে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির অধিনস্ত ৭ উপজেলার মধ্যে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল ও সম্মেলন হয়েছে চলতি বছরের ৩১ জুলাই। কিন্তু বাকি ৬ উপজেলায় সাংগঠনিক তৎপরতা তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ মিটিয়ে ঐক্য থাকলেও সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা স্থবির।

বিগত ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের পর থেকে সকল বিভক্তি ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন নেতৃবৃন্দরা। বর্তমান সভাপতি নেছার আহমদ, এমপি ও সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমানের দক্ষ নেতৃত্বে দল বেশ সুসংগঠিত। ইতোমধ্যে বড়লেখা উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি অনুমোদন এবং বতর্মানে বাকী ৬ উপজেলা ও মৌলভীবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সম্মেলন কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণাসহ নানা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ নিয়ে এসেছে।

আওয়ামীলীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওয়ায়েদুল কাদেরের উপস্থিতিতে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে অতিতের সকল দ্বন্ধের অবসান ঘটে। জেলা আওয়ামীলীগের দুই পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ নেছার আহমদকে সভাপতি এবং মিছবাহুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণার পর থেকে জেলা আওয়ামীলীগের তৃণমূলে স্বস্তি ফিরে আসে। চলতি বছরের প্রথম দিকে ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করার পর প্রথম দিকে কিছুটা মনোমালিণ্যতা দেখা দিলেও পরে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দক্ষ নেতৃত্বে নতুন করে আর দ্বন্ধে রূপ নেয় নি। বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগে কোন গ্রুপিং নেই।

পর্যটন আকর্ষণীয় ঐতিহ্যবাহী মৌলভীবাজার জেলায় ৭টি উপজেলা নিয়ে ৪টি সংসদীয় আসন। তার মধ্যে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  ৩টিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের তিন নেতা ও একটিতে সাবেক আওযামীলীগ নেতা। জেলার ৪ সংসদীয় আসনের মধ্যে শুধু মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসন বাদে বাকিগুলোতে আওয়ামীলীগ জয়লাভ করেছে। ওই আসন থেকে আওয়ামীলীগের সাবেক নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও নির্বাচনের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কট্টোর সমালোচনা করেছেন এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবি করেছিলেন কিন্তু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর সুর পাল্টে যায়। তিনি সংসদে গিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ আবার বিএনপির সমালোচনায় বিভোর। তাঁর দ্বিচারি ভূমিকায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রাজনৈতিক ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়। বাকি ৩ আসনের মধ্যে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলা) থেকে নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. শাহাব উদ্দিন (বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরির্বতন মন্ত্রী), মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা) থেকে নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ নেছার আহমদ, মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা) থেকে নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান জানান, নতুন কমিটি গঠনের পর আমরা দুইটি কার্যনির্বাহি ও দুইটি   বর্ধিত সভা করেছি। বর্তমানে আমাদের জেলা কমিটিতে কোন বিভক্তি নেই আমরা সকলে মিলে এক সাথে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম সহ সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী ১২ অক্টোবর জুড়ি উপজেলা ও ১৩ অক্টোবর শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে ¡দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারাবিশ্বে আজ বাংলাদেশ একটি রোল মডেল।সেটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারনে।

এদিকে বিগত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রন হচ্ছে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম. নাসের রহমানকে কেন্দ্র করে। এর আগে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন নাসের রহমান গ্রæপ ও খালেদা রব্বানী গ্রæপে বিভক্ত ছিলো জেলা বিএনপি। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ মে এম নাসের রহমানকে সভাপতি এবং মিজানুর রহমান মিজানকে সাধারণ সম্পাদক করে মোট ৪৮ সদস্যের এক আংশিক জেলা বিএনপির কমিটি অনুমোদন পায়। ওই কমিটি প্রকাশের পরও বিভক্ত থাকে জেলা বিএনপি। পাল্টপাল্টি কমিটি বিভিন্ন শাখা কমিটি ঘোষণা করতে থাকেন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

এক পর্যায়ে দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জেলার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানকে পাল্টা কমিটি না দিতে এবং জেলা সভাপতির নেতৃত্বে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে সাংগঠনিক বার্তা আসার পর থেকে দলের শ্ঙ্খৃলা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে দলের নির্দেশনা মেনে বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করা থেকে বিরত থাকেন সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজান। বিগত জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমানের পক্ষে একাট্টা হয়ে মাঠে নামে জেলা বিএনপির সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ। নির্বাচনে পরাজিত হলেও তাঁদের সেই ঐক্য এখনো অঁটুট রয়েছে। বর্তমানে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একত্র হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

জানা যায়, জেলা বিএনপির গ্রুপিং নিরসনে বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বলের ভূমিকাও অন্যতম। এছাড়াও দলের সিনিয়র সহ সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ুন, সহ সভাপতি মৌলানা ওয়ালী সিদ্দিকী, সহ সভাপতি আব্দুল মুকিতও নিজেদের বিরোধ মিটিয়ে এক কাতারে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার সাংগঠনিক তৎপরতায় কুলাউড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির কাউন্সিল ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে কমিটি ঘোষণার প্রায় দুই বছরের মাথায় জেলা বিএনপির ১৫১ বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই কমিটির অধীনে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ৬ উপজেলা ও মৌলভীবাজার পৌর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম নীরবে পরিচালিত হচ্ছে। যদিও কয়েকদিন আগে মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে ছাত্রলীগ কর্তৃক একটি হলের নামকরন ‘শহীদ জিয়া অডিটোরিয়াম’ ভেঙ্গে দেয়ার পরও বিএনপি শক্ত কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উনারা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়ার পর মেয়াদ শেষ হলেও তাঁদের কাছ থেকে আর কোন বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান জানান, আমরা দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম ঐক্যবদ্ধভাবে পালন করছি। ইতোমধ্যে কুলাউড়া পৌর ও উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল ও সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা বাকি ইউনিটগুলোর সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন করবো। দলে দ্বিধা বিভক্তি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। আমাদের মধ্যে এখন কোন গ্রæপিং নেই।

বর্তমান জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তেমন কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। দিবসে সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া ছাড়া তেমন কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই দলটির। সাংগঠনিক তৎপরতা না থাকায় জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছেন।

প্রবাসী অধ্যুষিত ও ধর্মীয় রক্ষণশীল হিসেবে খ্যাত এলাকা হিসেবে এ অঞ্চলে ইসলামী মতাদর্শের সংগঠনগুলো অনেক সক্রিয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, আল ইসলাহ, ইসলামী ফ্রন্ট নামের সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে তৎপর রয়েছে। এসব ধর্মীয় সংগঠনের কার্যক্রমে এবং স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠনের তকমা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী এখন জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন। বর্তমানে তাদের কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এছাড়াও বাম সংগঠনগুলোর মধ্যে জেলার কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদসহ অন্যরা তাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করে আসছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২১সেপ্টেম্বর২০১৯/শাআ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.