আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

কুলাউড়ায় উদ্যোক্তা কর্তৃক ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ করলেন ইউপি সচিব

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-০৯ ১৯:৩৪:৫২



নিজস্ব প্রতিবেদক, কুলাউড়া :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের সদ্য অব্যাহতি পাওয়া ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সুকুমার মল্লিক কর্তৃক একটি ছবিকে কেন্দ্র করে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ করেছেন ইউপি সচিব উত্তম কুমার পালিত।

বুধবার (৯ অক্টোবর) বেলা ২টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উত্তম কুমার পালিত বলেন, মনের অজান্তে ভুলবশত চেয়ারে বসে টেবিলে পা দেয়ার একটি ছবি বিগত ২০১৬ সালে তুলেছিলেন সুকুমার। তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মরহুম মানিক মিয়া পরিষদের অন্যান্যদের নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেন। ওই সময় আমার ভুলের কথা স্বীকার করে সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। কিন্তু সুকুমার থামেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ছবিটি প্রকাশ করে দিবেন বলে বারবার হুমকি দিতেন। নানা অযুহাতে উনি আমার কাছ থেকে প্রায় ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে ইউনিয়ন পরিষদে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আমি লোকলজ্জা এবং নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কাইকে কিছু বলতে পারিনি।

তিনি বলেন, মনের অজান্তে ভুলবশত আমি অপ্রস্তুত অবস্থায় চেয়ার চেবিলে বসে ছিলাম। অফিস সময় শেষে বিকাল ৪টার পর একজন গ্রাম পুলিশের উপস্থিতিতে ছবিটি সুকুমার তার মোবাইল ফোনে তুলে রাখেন। এরপর বিচার সালিশে বিষয়টি শেষ হলেও তার হাত থেকে আমি রক্ষা পাইনি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালে দেশে রোহিঙ্গা প্রবেশের পরমুহূর্তে ইউনিয়নের কম্পিউটার ব্যবহার করে সুকুমার কাদিপুর ইউনিয়নের প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষের জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে নিবন্ধনের সময় ইচ্ছাকৃত ভুল করে চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজারের চকরিয়া নামে একটি ইউনিয়নের নামে নিবন্ধন করেন। পরবর্তি সময়ে ঢাকা অফিস থেকে আমার কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের সকলকে বিষয়টি অবহিত করি। এবং তিনদিন সময় ব্যয় করে ওই নিবন্ধনগুলো পুনরায় কাদিপুর ইউনিয়নের ঠিকানায় নিবন্ধন করি।

জানা যায়, গত কয়েকদিন যাবৎ কাদিপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সুকুমার মল্লিক সম্বুর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাতির মিয়া এবং পরিষদের সকল ইউপি সদস্যদের উপস্থিতিতে রেজ্যুলেশন করে সুকুমারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সুকুমার মল্লিক দায়িত্ব পালনে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদানে জালিয়াতি ও সরকারী  নির্ধারিত ফি থেকে তিনগুণ বেশি টাকা নিয়ে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের হয়রানী করছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের ওই সাধারণ সভায় দূর্নীতিতে অভিযুক্ত সুকুমার মল্লিকের বিরুদ্ধে তারই অফিসের মহিলা উদ্যোক্তাকে অফিস চলাকালীন সময় বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব এমনকি জোরপূর্বক শরীরে স্পর্শ করারও অভিযোগ করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও সচিবের বিরুদ্ধে অপপ্রচারসহ স্থানীয় মানুষের সাথে খারাপ আচরন করে। অপরদিকে নিয়মিত কোন কাজের জন্য স্থানীয়রা ইউনিয়ন অফিসে গেলে সুকুমার মল্লিক নানা টালবাহানার মাধ্যমে সময় বিলম্ব করে অতিরিক্ত টাকা নেন। এমনকি জন্ম নিবন্ধনে বয়স বাড়ানো ও কমানোর নামে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা  হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কাদিপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাতির মিয়া বলেন, অফিসের  মহিলা উদ্যোক্তার সাথে  অনৈতিক প্রস্তাবসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে পরিষদের সর্ব সম্মতিক্রমে এই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেছি। সুকুমার নানা অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলো। আমি নিজে তাকে অনেক সময় সতর্ক করেছিলাম। সুকুমারের অব্যাহতি হওয়ার বিষয়ে ইউপি সচিবের কোন হাত নেই।

অভিযোগ অস্বীকার করে সদ্য অব্যাহতি হওয়া ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সুকুমার মল্লিক বলেন, জন্মনিবন্ধন অনলাইনে নিবন্ধন করার এখতিয়ার ইউপি সচিবের। আমি কিভাবে দূর্নীতি করবো? আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৯অক্টোবর২০১৯/শাকির

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন