আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বড়লেখায় কৈয়ারকোনো অভয়াশ্রমে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে চলছে মাছ শিকার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-১৮ ২২:৫০:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় হাকালুকি হাওরের কৈয়ারকোনো মৎস্য অভয়াশ্রম থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবাধে চলছে মাছ শিকার। এতে বড় মাছের পাশাপাশি নানা প্রজাতির পোনা মাছও মারা পড়ছে। অভয়াশ্রমটি দেখভাল করার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেই মাছ শিকারের অভিযোগ ওঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় মাছের বংশবৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০১০ ও ২০১১ সালে হাকালুকি হাওরের ১২টি বিলকে (জলমহাল) স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছিল সরকার। এরমধ্যে কৈয়ারকোনো বিলও রয়েছে। ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস্ এন্ড লাইভলিহুডস্ (ক্রেল) প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় কৈয়ারকোনো বিলটি ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেখাশোনা করত তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা ভিসিজি (ভিলেজ কনজারভেশন গ্রপ)। এরপর ক্রেলের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অভয়াশ্রম দেখাশোনা করে হাল্লা ভিসিজির লোকজন। কিন্তু যাদের উপর এই অভয়াশ্রম দেখাশোনার দায়িত্ব সেই সমিতির কয়েকজন অবৈধভাবে বিল থেকে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করা শুরু করে।

গত বছর শুকনো মৌসুমে অভয়াশ্রমের বাঁধ কেটে পানি শুকিয়ে মাছ লুটের চেষ্টা করা হয়। স্থানীয়ভাবে বাঁধ কাটার খবর পেয়ে প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে মাটি ফেলে পুনরায় বাঁধটি মেরামত করা হয়। রক্ষকরাই ভক্ষকের ভূমিকায় থাকায় স্থানীয় অনেক মৎস্যজীবী সমিতির দৃষ্টি পড়ে অভয়াশ্রমের উপর। এ অবস্থায় চলতি বছরের শুরুর দিকে বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের রঙধনু মৎসজীবী সমিতি কইয়ারকোনো বিলটি ইজারা পেতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। গত ২৫ এপ্রিল ভূমি মন্ত্রণালয় সায়রাত-১ অধিশাখা থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৪২৬-১৪৩১ বাংলা সন মেয়াদে রঙধনু মৎসজীবী সমিতিকে কৈয়ারকোনো বিল (বদ্ধ) জলমহাল ইজারা প্রদান করা হয়। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মতামত চাওয়া হয়েছে। তবে এখনো বিলটি ভিসিজির কাছ থেকে নেওয়া হয়নি। আবার ইজারা হিসেবে কাউকে দখলও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় অভয়াশ্রম রক্ষার দায়িত্বে থাকা ভিসিজির লোকজন দিনে ও রাতে কাপড়ি জাল, বেড় জালসহ বিভিন্ন জাল দিয়ে মাছ ধরছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নে হাকালুকি হাওরের কৈয়ারকোনো মৎস্য অভয়াশ্রম বিলে এক কিলোমিটার পর পর জেলেরা কাপড়ি জাল, বেড় জালসহ বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। একেকটি দলে ১৫-২০ জন রয়েছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কৈয়ারকোনো ও আশপাশে ৫-৬টি স্থানে মাছ ধরতে দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে বলেন, ‘ছোট মাছের পাশাপাশি বোয়াল, আইড়, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। ভিসিজির সেক্রেটারি সুলেমান মাছ ধরার অনুমতি দিয়েছেন।’

মাছ ধরার বিষয়ে ভিসিজির সাধারণ সম্পাদক মো. সুলেমান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি অভয়াশ্রম রক্ষা করছি। মাছ শিকার করতেছি না। এ জন্য অনেকেই শত্রুতা করে আমার নামে অপপ্রচার করতে পারে। কাউকে মাছ ধরার অনুমতি দেইনি। জেলেরা মিথ্যা বলছে।’
হাকালুকি ভূমি অফিসের তহসিলদার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কৈয়ারকোনো অভয়াশ্রমে ভিসিজির সেক্রেটারি সুলেমানের নেতৃত্বে মাছ ধরা হয়। যে রক্ষা করার দায়িত্বে সেই মাছ ধরায়। আর অন্যের উপর দোষ চাপায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কয়েকবার অভিযানও করা হয়েছে। কিন্তু বিলে যাওয়ার আগে তারা খবর পেয়ে যায়।’

বড়লেখা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুলতান মাহমুদ মুঠোফোনে বলেন, ‘কৈয়ারকোনো বিলটি মন্ত্রণালয় থেকে লিজ দেওয়া হয়েছে। এরপর আবার চিঠি দিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। আমরা অভয়াশ্রমের পক্ষেই মতামত পাঠাচ্ছি। তবে এখনো বিলটি ভিসিজির কাছ থেকে নেওয়া হয়নি। আবার ইজারা হিসেবে কাউকে দখলও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। সে জন্য আপাতত অভয়াশ্রম বলা যায়।’ তিনি বলেন, ‘হাল্লা ভিসিজি হোক বা অন্য কেউ হোক অবৈধভাবে মাছ ধরার সাথে জড়িত থাকলে বিল মৎস্য বিভাগের আওতায় আনা হবে। পরে মৎস্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার মিলে সমিতি করে অভয়াশ্রম পরিচালনা করা হবে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ অক্টোবর ২০১৯/লাভলু /জেএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন