Sylhet View 24 PRINT

কমলগঞ্জে ‘পলো উৎসব’ অনুষ্ঠিত

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-০৭ ১৮:৪৮:১৯

জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ :: এক সময়কার চিরচেনা নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়। হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক বাঙালীর গ্রামীন এ উৎসব। “নদী হাওর আর ধান এই তিনে মৌলভীবাজারের প্রাণ’।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বাঙালীর গ্রামীন ঐতিহ্য উৎসব শত বছরেরও বেশি সময় ধরে পালিত হয়ে আসছে গ্রাম বাংলায় প্রায় হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরা উৎসব।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় ধলাই নদীতে এই মৎস্য আহরণ শুরু হয়। এতে প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

প্রতিবছর এই সময়ে  উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সৌখিন  মৎস্য শিকারীরা দল বেঁধে উৎসব মুখর পরিবেশে পলো বাওয়ায় অংগ্রহণ করে। মাছ ধরা উৎসব জানিয়ে দিচ্ছে মাছে-ভাতে বাঙালির দেশে মাছেরা হারিয়ে যায়নি। হারায়নি এক সময়ের বহুল প্রচলিত মাছ ধরার উৎসবও। পুরোদমে শুষ্ক মৌসুম শুরু না হলেও উপজেলার বুক দিয়ে প্রবাহিত ধলাই নদীসহ বিভিন্ন এলাকার  প্রবাহমান ছোট ছোট ছড়া বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে শুরু হয়েছে পলো বাওয়া উৎসব।  পলো বাওয়া উৎসব হলো দল বেঁধে (বাঁশ দিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরী ঝাঁপি) মাছ ধরা। ধলাই নদীতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব উদযাপিত হয়েছে।

পৌর এলাকার দক্ষিণ কুমড়াকাপন, আলেপুর, চন্ডিপুর, কুমড়াকাপনসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষজন এতে অংশগ্রহণ করেন। খাল-বিল ও নদী নালার পানি কমতে শুরু করেছে। ফসলি মাঠগুলো এখনো হয়ে উঠেনি আবাদের উপযোগী। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকের হাতে নেই তেমন কোন কাজ। এ অবসরে অল্প পানিতে মাছ শিকারের উৎসবে মেতে উঠেছে সবাই। ধলাই নদীর স্বল্প পানিতে এখন বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে দল বেঁধে মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। বিশেষকরে পলো, উড়াল জাল, পেলেন জাল এসব দিয়েই মাছ শিকার করছেন মানুষরা।

দলবদ্ধভাবে মাছ শিকারের এদৃশ্য দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন উৎসোক জনতারা। উৎসবে অংশ নেয়া মানুষদের উৎসাহ দিতে হাতে তালি কিংবা জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে উৎসাহ প্রদান করছেন দশনার্থীরা। বড়দের পাশাপাশি ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও যে যার মতো করে মাছ ধরতে সহযোগীতা করছে। মাথা ও কোমরে আটসাট করে গামছা বেঁধে অনেকটা আনন্দ নিয়েই মাছ ধরছেন সবাই। শখের বসে মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে নেমেছেন মাছ ধরতে।

সকাল থেকে শুরু হয়েছে তাদের এই মাছ ধরা। দল বেঁধে সারিবদ্ধ হয়ে পলো দিয়ে পুটি, টেংড়া, শৈল, ঘাগট ও বোয়াল মাছ ধরছেন। পলো দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য সবারই মন কাড়ে। নদীর স্বল্প পানিতে ৩০/৪০জনের একটি দল একদিকে জাল নিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আর অপরপ্রান্ত থেকে ৪০/৫০জনের সারিবদ্ধ দল পলো চাপিয়ে মাছ ধরতে সামনের দিকে এগিয়ে আসেন।

পলো বাওয়া উৎসবে আলেপুর গ্রাম থেকে আসা নূর মিয়া বলেন, বছরের এই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। সবাই মিলে একসাথে মাছ ধরার আনন্দটাই আলাদা। এক কেজি ওজনের একটি ঘাগট মাছ পেয়ে আরো বেশি আনন্দ লাগছে।

এ ব্যাপারে প্রবীন মাছ শিকারী  মো. ইসমাইল মিয়া  জানান,  দিন দিনই পরিবেশ ও আবহাওয়ার  প্রতিকূলতার কারনে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওরের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারনে পানি হ্রাস এবং অধিকাংশ জলাশয়  ইজারা দেওয়ায় বাওয়া উৎসব এখন অনেকটাই ভাটা পড়েছে। প্রাচীন এই উৎসবকে টিকিয়ে রাখতে সর্বমহলের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৭ নভেম্বর ২০১৯/জেএ/এসডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.