Sylhet View 24 PRINT

কমলগঞ্জে মণিপুরি উৎসবে সাঙ্গ হয় ‘রাধা-কৃষ্ণের লীলা’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-১৩ ১৪:৫৭:৫০

জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ অঞ্চলে অধিবাসীদের মধ্যে এক অনন্য ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক প্রান্তিক জনগোষ্ঠী মণিপুরি। বিশ্বনন্দিত সংস্কৃতির ধারকও বলা হয় তাদের। বেশিরভাগই সনাতন ধর্মের অনুসারী। এ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবের নাম ‘মহারাসলীলা’।

প্রতিবছরই কার্তিকের পূর্ণিমা তিথিতে উপজেলার মাধবপুর জোড়ামন্ডপ এবং আদমপুর সানাঠাকুর মন্ডপে বসে এ উৎসব। পাপমোচন ও পুণ্য লাভের আশায় মণিপুরিরা দলে দলে উৎসব শুরুর দিন সকালে পূজা-অর্চনা ও পুণ্যস্নান করেন।

মঙ্গলবার ঢাকঢোল, খোল-করতাল, শঙ্খধ্বনি আর আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় এ রাসোৎসব। বর্ণাঢ্য আয়োজনে শামিল হন ভিন্ন ধর্মের লোকজনও। বুধবার ঊষালগ্নে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাঙ্গ হয় রাধা-কৃষ্ণের লীলা।

১৭৭তম ও আদমপুরের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মনিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের ৩৪তম এবং নয়াপত্তন যাদু ঠাকুর মন্ডপ প্রাঙ্গণে ৪র্থ বারের মতো মহারাসোৎসব হয়েছে। কথিত আছে, রাজর্ষি ভাগ্যচন্দ্র একদিন রাধা ও কৃষ্ণের রাসলীলা স্বপ্নে দেখতে পান। তারপর স্বপ্নের আলোকেই কয়েকজন কুমারী মেয়ে দিয়ে উপস্থাপন করেন রাসনৃত্য। নিজের মেয়ে কুমারী বিশ্বাবতীকে রাধা এবং মন্দিরের গোবিন্দকে অবতীর্ণ করেন কৃষ্ণের ভ‚মিকায়। ওই রাসে মৃদঙ্গবাদক ছিলেন ভাগ্যচন্দ্র নিজেই। তাতে ব্যবহার করেন নিজস্ব তাল। ১৭৭৯ সাল থেকে রাজর্ষির সেই তাল এখন পর্যন্ত চলছে। তার মৃত্যু একশ বছর পর মহারাজ চন্দ্রকীর্তির শাসনামলে গোটা রাসনৃত্য আচৌকা, বৃন্দাবন, খুডুম্বা, গোস্ট, গোস্ট বৃন্দাবন, আচৌবা বৃন্দাবনসহ নানা ভঙ্গিতে রূপ নেয়। এ উৎসবকে আরও বেশি জনপ্রিয় করতে মণিপুরিদের মাঝে ছড়িয়ে দেন।

এবারের উৎসব ঘিরে সাদা কাগজের নকশায় নিপুণ কারুকাজে সজ্জিত করা হয়েছে মন্ডপ গুলো। বেলা ২টা থেকে রাখালনৃত্যের মধ্য দিয়ে মাধবপুর জোড়ামন্ডপ প্রাঙ্গণে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের ১৭৭তম ও আদমপুরের মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মৈতৈ সম্প্রদায়ের ৩৪তম এবং নয়াপত্তন যাদু ঠাকুর মন্ডপ প্রাঙ্গণে চতুর্থবারের মতো মহারাসোৎসব হয়েছে। রাখালনৃত্যের বিভিন্ন ধাপে রাধা-কৃষ্ণের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকালের বিভিন্ন চিত্র ফুটে ওঠে। মণিপুরি শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের।

রাতভর চাঁদের আলোয় মায়াবী জোৎস্নায় নূপুরের সিঞ্চনে মুদ্রা তোলেন সুবর্ণ কঙ্কণ পরিহিতা রাধা ও গোপিনী রূপের মণিপুরি তরুণীরা। তুমুল হৈচৈ, আনন্দ-উৎসাহ, ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, করতাল ও শঙ্খধ্বনিতে রাধা-কৃষ্ণের এ লীলা যেন অন্য সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে মণিপুরি অঞ্চলগুলো। উৎসব উপলক্ষে রকমারি আয়োজনে বসেছে বিশাল মেলাও। খৈ, মুড়ি, বাতাসা, ছোটদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ ও প্রসাধনী, শ্রীকৃষ্ণের ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির ছবিসহ বাহারি পণ্য শোভা পাচ্ছে মেলায়।

এ ছাড়া মাধবপুর ললিতকলা একাডেমির সামনে বসেছে মণিপুরি সম্প্রদায়ের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে বইপত্রের কয়েকটি স্টল। প্রতিবারের মতো এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতেও দেখা যায়।

প্রকৌশলী যোগেশ্বর চ্যাটার্জির সভাপতিত্বে মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন, মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক প্রমুখ।

মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, মাধবপুর জোড়াম-পে রাসোৎসব সিলেট বিভাগের মধ্যে ব্যতিক্রমী আয়োজন। বর্ণময় শিল্পসমৃদ্ধ বিশ্বনন্দিত মণিপুরি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মহামিলন ঘটে।

মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির গবেষণা কর্মকর্তা প্রভাস সিংহ জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসবে যোগ দিতে হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগী এখানে এসেছেন


সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ নভেম্বর ২০১৯/জেএ/এসডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.