আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

বড়লেখায় সেই বানরটিকে মেরে ফেলল এলাকাবাসী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-২২ ০১:১৮:৪৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা :: রাত কিংবা দিন। যখন যাকে সামনে পেয়েছে আঁচড়ে-কামড়ে আহত করেছে। ছোট-বড় সবাই বানরটির আক্রমণের শিকার হয়েছেন। বেশিরভাগ আক্রমণে শিকার হয়েছে শিশুরা। গুরুতর আহত এক শিশু এখনো সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

বানরের ভয়ে অনেকে শিশু স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো। রীতিমতো পুরো এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছিল  আতঙ্ক। বানরটির যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন স্থানীয় এলাকার লোকজন। তবে শেষরক্ষা হয়নি বানরটির। বিক্ষুব্ধ লোকজন সেই বানরটিকে পিটিয়ে মেরেই ফেলেছেন।
বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এই ঘটনা ঘটেছে। হত্যার পর বানরটিকে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে বানরটিকে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাস আগে গলায় লাল রঙের রশি বাধা অবস্থায় একটি বানর লোকালয়ে দেখা যায়। হঠাৎ করে বানরটি মানুষের ওপর আক্রমন শুরু করে। যেকোনো সময় একা পেলেই লোকজনের ওপর হামলা করত। বেশিরভাগ আক্রমনের শিকার হয়েছে স্কুলগামী শিশুরা। এতে শিশুসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। ভয়ে অনেক শিশু স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। বিভিন্ন সময় আহতদের মধ্যে আছেন ইউনিয়নের তানিয়া বেগম (৮), সেলিম আহমদ (৮), মারুফ আহমদ (১০), বিউটি বেগম (১১)। এই চারজনসহ রোকনপুর, বড়খলা, কাঠালতলী ও গৌড়নগর এলাকার শিশুসহ প্রায় ২৫জনকে আঁচড়ে-কামড়ে আহত করেছে।

আহতদের বেশিরভাগকেই সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। এতে মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। বানরের আক্রমন হতে পরিত্রাণ পেতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের লোকজন এলাকা পরিদর্শন করেন। বানরটির অবস্থান কোথায়-কোথায় আছে, তারা ম্যাপ করেন। ঢাকা থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে বানরটি ধরবেন বলেও স্থানীয়দের জানিয়ে যান। কিন্তু মানুষের ওপর বানরটির আক্রমন অব্যাহত থাকে। এ অবস্থায় আতঙ্কিত মানুষ বানরটি মেরে ফেলে।

এলাকাবাসী সূত্র জানায়, বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিক্ষুব্ধ কয়েকশ লোক বানরটিকে ধরতে লাঠি, দা, সড়কি নিয়ে ধাওয়া করে। দিনভর বানরটি ধরতে ধাওয়া করে লোকজন। অনেক উৎসাহী লোকজনও জড়ো হন এতে। একপর্যায়ে বানরটি প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেয় একটি ধানক্ষেতে। সেখানে বিকেল আনুমানিক চারটার দিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। পরে স্থানীয় সায়েব আলীর মোকাম এলাকায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। বেশ কিছু সময় বানরটি ঝোলানো অবস্থায় ছিল। পরে একটি টিলায় বানরটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন পাপলু জানান, বানরটি এ পর্যন্ত যাদের আক্রমন করেছে; তাদের অবস্থা খুব খারাপ। আহতের বেশিরভাগ গরীব মানুষ। চিকিৎসা করানোরও টাকা নেই তাদের। গত একমাস থেকে মানুষ আতঙ্কে ছিল। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বানরটিকে ধাওয়া করে পিটিয়ে মেরে ফেলে। এরকম কথা জানালেন ওই এলাকার জাকারিয়া আহমদও।

দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন বলেন, ‘শিশুসহ প্রায় ২৫ জনকে বানরটি আক্রমন করে আহত করেছে। স্কুলের বাচ্চাদের বেশি আক্রমন করে। বন বিভাগকে জানিয়েছিলাম। তাদের লোকজন গত রবিবার স্পট দেখেও গিয়েছিল। ঢাকা থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু বানরটি প্রতিদিন মানুষ আক্রমন করে গুরুতর আহত করত। মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে মেরে ফেলেছে।’

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা জৌলহাস উদ্দিন বৃহস্পতিবার  বলেন, ‘বানরটিকে মেরে ফেলার খবর জানিনা। তবে স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে গত রবিবার ওই এলাকা পরিদর্শন করি। বানরটিকে তখন পাইনি। বানরটির অবস্থান কোথায়-কোথায় আছে, তারা ম্যাপ করে নিয়ে যাই। আমাদের মৌলভীবাজার কার্যালয়ে যন্ত্রপাতি নেই। ঢাকা থেকে যন্ত্রপাতি আনার ব্যবস্থাও করি। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছিলাম। বানরটি দেখলে যাতে আমাদের জানানো হয়।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ নভেম্বর ২০১৯/এজেএল/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন