আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

কমলগঞ্জ উপজেলা মুক্ত দিবস আগামীকাল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-০৪ ১৮:৪৫:০৩

জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা মুক্ত দিবস আগামীকাল (৫ ডিসেম্বর) । ১৯৭১ সালের এই দিনে উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সাড়াঁশি অভিযানের মুখে বিপর্যস্ত হয়ে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী দখল দারিত্ব ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এদিন কমলগঞ্জের মুক্তিপাগল বাঙ্গালি উড়ায় স্বাধীনতা বাংলার পতাকা। এই দিনটি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ৫ ডিসেম্বরই কমলগঞ্জ হানাদারমুক্ত হয়।

পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কমলগঞ্জে সর্ব দলীয় সংগ্রাম পরিষদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অনুগত ৬০ জনের একটি দল তৈরী করে উপজেলার শমশেরনগর বিমান ঘাটিতে ট্রেনিং এর কাজ চলতে থাকে।

১০ মার্চ ক্যাপ্টেন গোলাম রসুলের নেতৃত্বে এক দল পাক সেনা মৌলভীবাজারে অবস্থান নেয়। ২৩শে মার্চ তাদের হাতে তৎকালিন ছাত্রনেতা নারায়ন পাল ও আব্দুর রহিম পাকিস্তানী পতাকা পুড়ানোর দায়ে গ্রেফতার হন। পরে জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

কমলগঞ্জ উপজেলা ছিল বামপন্থিদের সুদৃঢ় ঘাঁটি। তারা মৌলানা ভাসানি ও হক তোহায়া গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সুচনা লগ্নে নকশাল পন্থিদের নির্মূল করার অজুহাতে মেজর খালেদ মোশারফকে কমলগঞ্জে পাঠানো হয়। তিনি ছিলেন বাঙ্গালী সেনা কর্মকর্তা। ২৫শে মার্চ গণহত্যা শুরু হলে তিনি পাক বাহিনীর সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে জনতার কাতারে সামিল হন।

ঢাকায় সংঘঠিত গণহত্যার প্রতিবাদে ২৬শে মার্চ কমলগঞ্জে সর্ব দলীয় সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল বের হয়। পাক সেনারা সেই মিছিলের উপর গুলি চালালে সিরাজুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ শহীদ হন। এ হত্যাকান্ডে উপজেলাবাসীর মনে জ্বলে উঠে মুক্তির আগুন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে নিয়ে ই.পি.আর ও পুলিশ সদস্যরাও একাত্মতা ঘোষনা করে সংগ্রাম পরিষদের সাথে।

২৮শে মার্চ শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির সমস্ত অস্ত্র উঠিয়ে আনা হয়। মালগাড়ির বগি দিয়ে ভানুগাছ-শমশেরনগর-মৌলভীবাজার রাস্তায় বেরিকেড দেওয়া হয়। ২৯শে মার্চ পাক বাহিনী খবর পেয়ে আবারও কমলগঞ্জে আসে।  ঐ দিন সন্ধ্যায় পাক সেনারা ভানুগাছ থেকে শমশেরনগরে এলে মুক্তিসেনাদের অতর্কিত আক্রমনে ক্যাপ্টেন গোলাম রসুলসহ ৯ জন পাক সেনা নিহত হয়। স্বাধীনতার উষালগ্নের এই প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধে প্রচুর অস্ত্র গোলাবারুদসহ পাক সেনাদের ২টি গাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘঠিত হয় কমলগঞ্জের পাত্রখোলা, ধলাই ও ভানুগাছে। ন্যাপ নেতা মফিজ আলী, ক্যাপ্টেন মোজাফফর আহমদ, আওয়ামীলীগ নেতা এম, এ, গফুর, ময়না মিয়া, ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুর রহমান প্রমুখের সাহসী নেতৃত্বে কমলগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসীকতার সাথে এসব সম্মুখ যুদ্ধে  লড়েছেন।

এছাড়াও এখানকার বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন বঙ্গবীর এম.এ.জি ওসমানী, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, ব্রিগেডিয়ার আমিন আহম্মদ ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মত দেশ বরেণ্য ব্যক্তিরা। শহীদ হয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান, লেন্সনায়েক জিল্লুর রহমান, সিপাহী মিজানুর রহমান, সিপাহী আব্দুর রশিদ, সিপাহী শাহাজাহান মিয়াসহ নাম না জানা অনেকেই।

অবশেষে মুক্তিযোদ্ধারা কমলগঞ্জের মাটিতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন ৫ ডিসেম্বর যার মাধ্যমে গোটা কমলগঞ্জ উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়।

একাধারে ৯ মাস ব্যাপী চলমান মুক্তিযুদ্ধে কমলগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা যে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৪ ডিসেম্বর ২০১৯/এসএইচ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন