Sylhet View 24 PRINT

বড়লেখায় স্ত্রী-শাশুড়িসহ চারজনকে হত্যা করে ঘাতকের আত্মহত্যা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-১৯ ১১:২১:৩৫

এ.জে লাভলু, বড়লেখা :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রী-শাশুড়ি এবং দুজন প্রতিবেশীকে হত্যার পর এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর নাম নির্মল কর্মকার (৩৮)। রবিবার (১৯ জানুয়ারি) ভোররাতে বড়লেখা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকার পাল্লাথল চা বাগানে লোমহর্ষক এই ঘটনাটি ঘটে।

নিহতরা হচ্ছেন- ঘাতক নির্মল কর্মকারের স্ত্রী জলি বুনার্জি (৩০) ও তার শাশুড়ি লক্ষ্মী বুনার্জি (৬০) ও প্রতিবেশী বসন্ত ভৌমিক (৬০) এবং বসন্তের মেয়ে শিউলী ভৌমিক (১৪)। এই ঘটনায় বসন্ত ভৌমিকের স্ত্রী কানন ভৌমিক (৩৪) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার সময় কোনোমতে পালিয়ে বেঁচে যায় ঘাতকের সৎ মেয়ে চন্দনা বুনার্জি (৯)।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে বিকেলে লাশগুলো থানায় নিয়ে আসে।
ঘটনার খবর পেয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া সুলতানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পিবিআই) নজরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) কাওছার দস্তগীর, থানার অফিসার ইনচার্জ কর্মকর্তা ইয়াছিনুল হক, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসীম প্রমুখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার ভোররাতে পারিবারিক বিষয় নিয়ে নির্মলের সঙ্গে তার স্ত্রী জলি বুনার্জির ঝগড়া হয়। এরই জের ধরে সে জলিকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় জলিকে বাঁচাতে তাঁর মা লক্ষ্মী ও পাশের ঘরের বসন্ত ভৌমিক এবং বন্তের মেয়ে শিউলী এগিয়ে এলে নির্মল তাদেরও কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার সময় কোনো মতে বেঁচে যায় ঘাতকের সৎ মেয়ে চন্দনা। চন্দনা দৌঁড়ে পালিয়ে গিয়ে চিৎকার দিলে আশাপাশের শ্রমিকরা বাড়ি ঘেরাও করেন। এ অবস্থায় নির্মল পালিয়ে যেতে পারেনি। ঘরের দরজা লাগিয়ে সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। সকালে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ঘাতকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।

রবিবার দুপুরে সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, নিহতদের লাশ ঘরের মেঝে ও উঠানে পড়ে রয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী বাকরুদ্ধ। এলাকার মানুষজন লাশ দেখতে ওই বাড়িতে ভীড় জমাচ্ছেন।

এসময় কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা লতা রানী কর্মকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘটনাটি সকালে শুনেছি। এরকম ঘটনা কোনোদিন আমাদের এখানে ঘটেনি। আর তাদের সাথে কারো কোনো বিরোধ ছিল বলে জানা নেই। এই ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ। আমরা ধারণা করছি, পারিবারিক কলহের কারণে নির্মল এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

নিহত জলি বুনার্জির বাবা বিষ্ণু বুনার্জী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি অন্য একটা চা বাগানে আমার আরেক মেয়ের সাথে থাকি। সকালে খবর পাাই আমার স্ত্রী ও মেয়েসহ পাশের ঘরের আরও দুজনকে আমার মেয়ের জামাই কুপিয়ে হত্যা করেছে। পরে সে নিজে আত্মহত্যা করে।
তিনি বলেন, প্রায় একবছর আগে নির্মলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে জলির বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়া হতো। আমি তাদের অনেক বুঝানোর চেষ্টা করতাম। কিন্তু তারা আমার কথা শুনতো না।

তিনি আরও বলেন, জলির আগে এক বিয়ে হয়েছিল। আগের পরিবারে তার এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। তার নাম চন্দনা। ঘটনার সময় সে ঘরে ছিল। পরে ভয়ে পালিয়ে প্রতিবেশী এক বাড়িতে সে আশ্রয় নেয়। নির্মল এই বাগানের নিয়মিত শ্রমিক ছিলেন না। তিনি আমাদের (শ্বশুর) বাড়িতেই থাকতেন।

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমদ বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জেরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনেকক্ষণ ঝগড়া হয়েছিল। এটা শুনতেছি। এ থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন।’
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ জানুয়ারী২০২০/শাকির/এজেএল

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.