Sylhet View 24 PRINT

যৌন হয়রানির মামলায় মাদ্রাসা সুপার জেলহাজতে, সভাপতি বললেন ‘ছুটিতে’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-১০ ১৮:০১:৫৮



নিজস্ব প্রতিবেদক, কুলাউড়া :: কুলাউড়ার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জালালিয়া দাখিল মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির মামলায় মাদ্রাসা সুপার প্রায় এক মাস যাবৎ জেলহাজতে আছেন। সহকারী সুপারকে দায়িত্ব না দিয়ে নিজের পছন্দের এক শিক্ষক দিয়ে পরিচালনা করছেন মাদ্রাসার কার্যক্রম। কিন্তু এতে মাদ্রাসার সকল প্রশাসনিক কাজ প্রায় আটকে আছে। এমন পরিস্থিতিতে মাদ্রাসার সভাপতিকে জানতে চাওয়া হলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ‘মাদ্রাসা সুপার কোথায় আছেন জানিনা, তবে তিনি আমার কাছ থেকে ছুটি নিয়েছেন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী দশম শ্রেণীর ওই ছাত্রীর বাবা গত বছরের ১৯ আগস্ট মাদ্রাসার সুপার আব্দুস শহীদের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে মামলা (নং-২৮৮/১৯ইং) দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে আদালত ৮ জানুয়ারী তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় সুপার আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি কারাবাসে আছেন বলে জানা যায়।

এরকম নানা অনিয়ম, দূর্ণীতি, ছাত্রীদের সাথে যৌন কেলেঙ্কারীর ঘটনায় প্রশাসনিক কাজে চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে ওই মাদ্রাসায়। মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি (মেয়াদোত্তীর্ণ) আব্দুর রউফ ও সুপার আব্দুস শহীদের একচ্ছত্র ক্ষমতার দাপটে প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

এদিকে কুলাউড়ার কামারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র মোস্তাফিজ হোসেন রাহিমকে মাদ্রাসার ছাত্র দেখিয়ে তারা বাবা আব্দুল হান্নান নিজেকে মাদ্রাসার অভিভাবক দাবি করছেন। তিনি ও মখলিছ মিয়া নামে দুই ব্যক্তি গত বছরের ১৪ জুলাই হাইকোর্টে মাদ্রাসার নির্বাচনে অনাস্থা এনে স্থগিত চেয়ে পিটিশন (নং-৮৭৩০) দায়ের করেন। এরপর থেকে মাদ্রাসায় নতুন কমিটি হচ্ছে না।

মাদ্রাসা কমিটির ২০১৯ সালের ১৩ আগস্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। বিধি মোতাবেক নতুন কমিটি গঠনে প্রশাসনের কোন আদেশ কার্যকর হচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার বার বার মাদ্রাসা সুপারকে পত্র ইস্যুর মাধ্যমে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি গঠনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশ দিলেও সুপার তাতে কর্ণপাত করেননি। একদিকে সুপার জেলহাজতে থাকায় নতুন ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব না পাওয়া এবং নতুন কমিটি না থাকায় প্রশাসনিক কাজে চরম স্থবিরতা নেমে এসেছে।

মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির (মেয়াদোত্তীর্ণ) সভাপতি ও কুলাউড়া ইয়াকুব তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রউফ আধিপত্য ও ক্ষমতার মোহে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা আটকে দেন। একপর্যায়ে ইউএনও’র হস্তক্ষেপে তাঁরা তাদের বেতন-ভাতা তুলছেন। অন্যদিকে আব্দুর রউফের স্নেহধন্য শিক্ষক আব্দুস সামাদ মাদ্রাসা প্রশাসনিক ভবনের কলকাটি নাড়ছেন। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এদিকে, কমিটি না থাকায় প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যাঘাতের অভিযোগ এনে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্থানীয় এলাকার ৩০ জন ব্যক্তির স্বাক্ষর সম্বলিত একটি আবেদন ও মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষিকা ও কর্মচারিবৃন্দ আবেদন করেন।

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সদস্য বাবুল মিয়া জানান, ‘আমাকে ফোনে জানানো হয়, আমি মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য। আমাকে কমিটির সভায় কোনদিন ডাকাও হয়নি। তাছাড়া কার্যনির্বাহী সভায় রেজ্যুলেশন বহিতে আমি কোনদিন স্বাক্ষরও করিনি।’

এ ব্যাপারে মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির (মেয়াদোত্তীর্ণ) সভাপতি ও মৌলভীবাজার জেলা আ.লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রউফ জানান, মাদ্রাসায় শিক্ষকদের মধ্যে অর্ন্তদ্বন্ধের কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে বর্তমানে নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। মাদ্রাসায় কোন অনিয়ম হয়নি। অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সুপার  কোথায় আছেন জানি না। তবে সুপার আমার কাছ থেকে ছুটি নিয়েছেন। মাদ্রাসার কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার জানান, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি আজ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সম্পূর্ণভাবে মাদ্রাসা সুপারের অসহযোগিতার কারণে কমিটি গঠনে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী জানান, মাদ্রাসায় কমিটি না থাকায় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের কোন নির্দেশনা পাইনি। শুধু আমার স্বাক্ষরে পরিপত্রের আলোকে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে। মাদ্রাসায় নির্বাচনের বিষয়ে মহামান্য আদালতের নির্দেশনা পাওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৮ সালে ফুলতলী (র.) ও বিশকুটি (র.) এটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্তি লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি সন্তোষজনক ফলাফল অর্জন করলেও নানা কারনে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০/শাকির

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.