আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বড়লেখায় নোটিশ ছাড়াই নদী পাড়ের স্থাপনা উচ্ছেদ, কাঁদছেন ক্ষতিগ্রস্তরা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-১৪ ১৯:৫২:৫৯

এ.জে লাভলু, বড়লেখা:: মৌলভীবাজারের বড়লেখা সদর ইউনিয়নের সোনাতোলা গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ধামাই নদী। এই নদীর তীরের কাছেই ছিল মরতুজ আলীর মুদি দোকান। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে তাঁর দোকানের একাংশ ভেঙে ফেলেছে। অনেক আকুতি-মিনতি করেও দোকানটি রক্ষা করতে পারেননি মরতুজ আলী।

মরতুজ আলী কেঁদে কেঁদে এ সিলেটভিউকে বললেন, ‘তারা (প্রশাসনের লোকজন) আমার দোকানে এলেন। দীর্ঘক্ষণ বসলেন। তারপর কোনো কিছু বোঝার আগেই তারা আমার দোকান ভাঙা শুরু করলেন। দোকানটি আমার নিজের জায়গায় করেছি। তারা আগে কোনো নোটিশও দেননি। ভাঙার সময় মালামাল সরানোর সুযোগটুকু দেওয়া হয়নি। কথা বলায় গাড়ি চাপা দিয়ে মারার ভয় দেখানো হয়। আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

শুধু মরতুজ আলী নন। অভিযানের সময় মরতুজ আলীর মতো ফয়জুল হক, বদরুল হোসেন ও আব্দুল মালিক এবং শেলি বেগমের বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাদের কারো দোকানঘর, কারো বাড়ি আবার কারো সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে।

কথা হয় এলাকার বাসিন্দা শেলি বেগমের সাথে। অভিযানে ওই নারীর বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সরকার কোনো ঘর-বাড়ি ভাঙলে আগে নোটিশ দেয়। কিন্তু কোনো নোটিশ না দিয়েই হঠাৎ করে আমার বাড়ির দেওয়াল (সীমানা প্রাচীর) ভাঙা হয়েছে। এটা আমার মালিকানাধীন জায়গায়। কাজপত্র সব আছে। আমার ক্রয় করা জায়গা থেকে ৩ ফুট ছেড়ে দেওয়াল নির্মাণ করেছি। এরপরও কেনো আমার দেয়াল ভাঙা হল বুঝিনি।’

এলাকার বাসিন্দা ফয়জুল হক, বদরুল হোসেন ও আব্দুল মালিক বলেন, ‘উচ্ছেদের আগে আমাদের জানানো হয়নি। আর আমরা আমাদের নিজেদের জায়গায় স্থাপনা করেছি। কিন্তু জোর করে প্রশাসন আমাদের ঘর-দোকানপাট ভেঙে দিয়েছি। আমরা এই ঘটনার সুবিচার চাই।’

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ধামাই নদীর সদর ইউনিয়নের সোনাতুলা ব্রিজ এলাকা থেকে সুজানগর ইউনিয়নের সীমানা পর্যন্ত এই অভিযানে অর্ধশতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করে উপজেলা প্রশাসন।

এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, উচ্ছেদ করা স্থাপনাগুলো তাদের অনেকের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জায়গার ওপর ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই অভিযান চালিয়ে তাদের জায়গার স্থাপনাগুলো ভাঙা হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, নদী পাড়ের স্থাপনাগুলো সরকারি জায়গার ওপর অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই নদী পাড়ের স্থাপনা উচ্ছেদের ঘটনায় এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন নদী খনন কাজে ব্যবহৃত এক্সকাভেটর আটকে রাখেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঘটনাস্থলে যান বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন। এই সময় তারা বিক্ষুব্ধ লোকজনের সাথে কথা বলে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) চাবি সংশ্লিষ্ট কাজের ব্যবস্থাপকের কাছে বুঝিয়ে দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর ইউনিয়নের সোনাতোলা গ্রামের লোকজন ধামাই নদীর তীরের কাছেই দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেন। সম্প্রতি ধামাই নদীর খনন কাজ শুরু হয়। এই নদীর পাড়ে রয়েছে দোকান ঘর, শৌচাগার, বাড়ির সীমানাপ্রাচীর, ঘরের একাংশ। নদী পাড়ের ওই স্থাপনাগুলো অবৈধ ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর দুটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও পুলিশ যৌথভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় অর্ধশতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ধামাই নদীর সদর ইউনিয়নের সোনাতুলা এলাকার ব্রিজ থেকে সুজানগর ইউনিয়নের সীমানা পর্যন্ত অভিযান হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান। এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন প্রমুখ।

এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা সরানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আগে বলা হয়। তারা সরাননি। রেকর্ডে রাস্তার জায়গায় যতটুকু পড়েছে ততটুকু ভাঙা হয়েছে। উচ্ছেদের সময় মালিকানা জায়গার বিষয়ে কেউ কিছু বলেননি। পরে শোনেছি লোকজন দাবি করছেন মালিকানা জায়গা ভাঙা হয়েছে।’

এব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ বলেন, ‘কোনোধরনের নোটিশ ছাড়াই এভাবে মানুষজনের বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করা ঠিক হয়নি। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও বিষয়টি জানেনা। আর এখানে উচ্ছেদ অভিযানের কোনো দরকারি ছিল না। বিষয়টি দুঃখজনক। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

সিলেটভিঊ২৪ডটকম/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০/লাভলু
 

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন