আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

সিলেটের বাবলুর ‘ফাঁদ’ এবার বড়লেখায়!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-১৮ ২১:২৫:১১

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা :: সিলেটের এম এ মঈন খান বাবলু এবার শিল্প ও বাণিজ্য মেলার ‘ফাঁদ’ পেতেছেন মৌলভীবাজারের বড়লেখায়। সেখানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নাম ভাঙিয়ে চালাচ্ছেন মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। সিলেটে ‘মেলা বাবলু’ হিসেবে সমালোচিত মঈন খান বাবলু। এখানে-সেখানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নামে মেলার আয়োজন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বিভিন্ন সময় ওঠেছে তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, বড়লেখায় ‘বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটি’র নাম দিয়ে প্রভাবশালী একটি চক্র এই মেলার আয়োজন করেছে। ওই চক্রটি বিভিন্ন সময় সিলেটের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় প্রতিবন্ধীদের নাম ব্যবহার করে মেলার আয়োজন করলেও বাস্তবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কোনো টাকাই ব্যয় করা হচ্ছে না। বরং এই চক্রের বিরুদ্ধে উল্টো লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। সিলেটভিউর অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়েছে। যার কারণে মেলা থেকে অর্জিত অর্থ বাস্তবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয় হবে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখায় মাসব্যাপী মেলা শুরু হয় গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি। বড়লেখা সরকারি কলেজ মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ। এ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি এমএম মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুমন আহমদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছাড়াও অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. প্রণয় কুমার দে, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক, উপজেলা প্রকৌশলী সামছুল হক ভূঁইয়া, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন, পৌরসভার কাউন্সিলর জেহিন সিদ্দিকী, বড়লেখা সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক রবিউল হক, বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটির সিলেট বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়ক এম.এ মঈন খান বাবলু, মো. শামীম আহমদ শাহীন ও আলতাফ হোসেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিবন্ধীদের নাম ব্যবহার করে প্রভাবশালী একটি চক্র বিভিন্ন সময় সিলেটের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের ম্যানেজ করে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে। মূলত সহজে মেলার অনুমতি পেতে চক্রটি প্রতিবন্ধীদের নাম ব্যবহার করে থাকে। এই চক্রটি এবার ‘বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটি’র নাম দিয়ে বড়লেখা উপজেলায় বাণিজ্য মেলার আয়োজন করেছে।

সূত্র জানায়, প্রভাবশালী ওই চক্রের নেপথ্যে রয়েছেন এম.এ মঈন খান বাবলু। তিনিই মেলার প্রধান আয়োজক। বাবলু বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটির সিলেট বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়ক। আর এই সংগঠনের সভাপতি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এমএম মোশারফ হোসেন। তিনি বাবলুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

সূত্র আরও জানায়, বাবলুুই বিভিন্ন সময় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের ম্যানেজ করে এসব মেলার আয়োজন করে থাকেন। এসব মেলা থেকে লাখ লাখ টাকা আয় হলেও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কোনো টাকাই ব্যয় হয় না। অভিযোগ রয়েছে, মেলার শুরুতেই আয়োজকরা মেলা থেকে আয়ের অর্জিত ৬০ শতাংশ অর্থ স্থানীয় প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয়ের আশ্বাস দেন। কিন্তু মেলা শেষ হলেই লাখ লাখ টাকা নিয়ে তারা সটকে পড়ে। ফলে প্রতিবন্ধীরা কোনো টাকা পান না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর রাতে বড়লেখার পাশের উপজেলা জেলার জুড়ী উপজেলার জুড়ী সরকারি কলেজ মাঠে শিল্প ও বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন। ‘জুড়ী উপজেলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার’ নাম ব্যবহার করে মেলার আয়োজন করে মৌলভীবাজার সোশিও ইকোনমিক ডেভলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন। কিন্তু এই মেলার নেপথ্যে ছিলেন এম. এ. মঈন খান বাবলু। প্রতিবন্ধীদের নাম ব্যবহার করে মাসব্যাপী এই মেলা থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও তাদের কল্যাণে কোনো টাকাই দেওয়া হয়নি।

‘জুড়ী উপজেলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার’ সভাপতি শারীরিক প্রতিবন্ধী ফখরুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘মেলার আয়োজকরা শুরুতেই আমাদের বলেছিলেন যে, মেলা থেকে আয়ের ৬০ পারসেন্ট টাকা আমাদের দেওয়া হবে। কিন্তু কোনো টাকা আমরা পাইনি।’

জুড়ী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরে আলম লাল বলেন, ‘জুড়ীতে মেলার শুরুতেই আয়োজকরা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন যে, মেলা থেকে আয়ের ৬০ পারসেন্ট টাকা প্রতিবন্ধীদের দেওয়া হবে। কিন্তু মেলা শেষ হলেও প্রতিবন্ধীদের কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। অনেকে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।’ তিনি প্রতিবন্ধীদের নাম ব্যবহার করে এভাবে মেলা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে রীতিমতো প্রতারণা বলে মনে করেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটির সিলেট বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়ক এম.এ মঈন খান বাবলু মুঠোফোনে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়েই মেলার আয়োজন করেছি। মেলার আয়োজক আমি নই। মূলত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটি এই মেলার আয়োজন করেছে।’

জুড়ীদে প্রতিবন্ধীদের নামে মেলা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই। আপনি বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’

বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি এমএম মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর প্রতিবন্ধীদের নামে মেলার আয়োজন করি। এই মেলা থেকে অর্জিত অর্থ আমার প্রতিবন্ধীদের কল্যাণেই ব্যয় করি। আর কিছু টাকা আমরা কেন্দ্রের ফান্ডে জমা রাখি। আমরা এবার বড়লেখায় মেলার আয়োজন করেছি। আপাতত সেখানকার ৫০ জন প্রতিবন্ধীদের তালিক তৈরি করেছি।’

প্রতিবন্ধীদের নামে মেলা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘শুনেছি জুড়ীতে মেলার নিয়ে প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে কী একটা সমস্যা হয়েছিল। এটা নিয়েও আমরা  নিজেরা প্রতিবাদ করেছি। তবে সেটার আয়োজন আমরা করিনি। এর সাথে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটির কোনো সম্পৃক্তাও নেই। আর বড়লেখায় আমরা মেলা মাত্র শুরু করেছি। আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাইছি। যাতে আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু একটা করতে পারি।’

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান মুঠোফোনে আজ মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের অনুমতিতে মেলা হচ্ছে। তবে যেসব শর্তে প্রশাসন মেলার অনুমোদন দিয়েছে, সেগুলো ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’  

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০/এজেএল/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন