আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ক‌রোনা প‌রি‌স্থি‌তিতে মৌলভীবাজা‌রে মাঠে নেই এম‌পি-নেতারা, ক্ষুব্ধ জনসাধারণ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০২ ১৯:০৫:৪১

‌শাকির আহমদ, কুলাউড়া :: মরণঘা‌তি ক‌রোনাভাইরা‌স (কো‌ভিড-১৯) সংক্রমন ঠেকা‌তে সরকার ই‌তোম‌ধ্যে দে‌শের সকল সরকারী ও বেসরকারী প্র‌তিষ্ঠান বন্ধ ক‌রে দি‌য়ে‌ছে।

শুধুমাত্র জরুরী ঔষ‌ধের দোকান, মু‌দির দোকান ছাড়া সকল দোকান পাট বন্ধ ঘোষণা ক‌রে‌ছে সরকার। এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে বেশ দু‌শ্চিন্তায় প‌ড়ে‌ছেন দে‌শের সাধারণ ও মধ্য‌বিত্ত প‌রিবারগু‌লো।

‌মৌলভীবাজার জেলাব্যাপী নিম্ন আ‌য়ের ও খেঁ‌টে খাওয়া মানুষজন প‌ড়ে‌ছেন চরম বিপাকে। এই মানুষদের বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করতে সরকার, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এগিয়ে এলেও এখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নেই জনগণের পাশে। দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের মতো কার্যক্রমে নেই অধিকাংশ এমপি। জনপ্রতিনিধিদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ ও হত‌াশ সাধারণ মানুষ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন- যেভাবে ভোট চাইতে জনগণের দরজায় গিয়েছিলেন, এখন সেভাবে খাবার নিয়ে মানুষের দরজায় যান। এই ঘোষণার পরও অনেক জনপ্রতিনিধি জেলার বাইরে অবস্থান করছেন। আবার কেউ কেউ এলাকায় অবস্থান করলেও খেটে খাওয়া মানুষের খোঁজ নিচ্ছেন না। সরকারি দলের পাশাপাশি একই অবস্থা বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামাতসহ অধিকাংশ দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতাদের। তবে কেউ কেউ এলাকার বাইরে থাকলেও এলাকায় ঘরে ঘরে সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছেন।

মৌলভীবাজার-১ আসনের বর্তমান এমপি, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন আহমেদ। গত নির্বাচনে এই আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু। তাদের কাউকেই এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

তবে বড়লেখা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, শাহাবউদ্দিন রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় এলাকায় আসতে পারছেন না। তার পক্ষ থেকে বড়লেখা এবং জুড়ি উপজেলার ১ হাজার ৭শ পরিবারকে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে এবং জেলা সিভিল সার্জন অফিসে এবং নিজ নির্বাচনী এলাকায় ডাক্তারদের জন্য নিজ উদ্যোগে পিপিই দিয়েছেন।

বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার উদ্দিন জানান, মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারছেন না। তবে প্রতিমুহূর্তে প্রশাসন এবং দলীয় লোকদের মাধ্যমে খোঁজ নিচ্ছেন।

তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ মাঠেও নেই ত্রাণেও নেই গত নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠু। কেবল ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জীবাণুনাশক ছেটানো হয়েছে। কিন্তু গরিব মানুষ জীবাণুনাশক নয় খাদ্য চায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, শুধ‌ু স্প্রে করে দ্বায়িত্ব সারা যায় না। এখনই সময় জনগণের কাছে যাওয়ার। যারা নির্বাচন হলেই এমপি হতে চান তাদের উচিৎ এখনই মাঠে নামার।

এ বিষয়ে নাসির আহমেদ মিঠু জানান, এখনো আমি কোনো ত্রাণ দিইনি। ছাত্রদল প্রতিটি এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে কাজ করছে। সেইসঙ্গে দলীয় কর্মীদের চাঁদায় ত্রাণ দেয়া শুরু হয়েছে।

মৌলভীবাজার-২ আসনে গত সংসদ নির্বাচনে নিজ আদর্শের বিপরীতে গিয়ে জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন করেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুলতান মনসুর ও বিকল্পধারার প্রার্থী এম এম শাহিন। এ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয়লাভ করেন সুলতান মনসুর। কিন্তু এখন নিম্ন আয়ের মানুষ প্রয়োজনের সময় কাউকেই পাশে পাচ্ছেন না। করোনা আতংকে ঘরবন্দি নিম্ন আয়ের মানুষ যখন তাদের খুঁজছেন তখন কেউ আমেরিকায় কেউ ঢাকায়। মহাজোটের পরজাতি প্রার্থী এম এম শাহিন বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন।

এম এম শাহিনের ঘনিষ্টজন সেলিম আহমদ জানান, ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহিন দেশের করোনা পরিস্থিতির ১৫/২০ দিন আগে ব্যক্তিগত কাজে আমেরিকা গিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছেন। তবে তিনি এলাকার খবর নিচ্ছেন এবং সহযোগিতার জন্য একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন। শিঘ্রয়‌ই উনা‌দের ব্য‌ক্তিগত তহ‌বিল থে‌কে ত্রাণ বন্টন কার্যক্রম শুরু হ‌বে।

অন্যদিকে নির্বাচিত এমপি সুলতান মনসুর ঢাকায় অবস্থান করছেন। এই সময় তার ঢাকায় অবস্থান নিয়ে সাধারণ জনগণ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ ও হতাশা প্রকাশ কর‌ছেন।

নাম প্রকা‌শে অ‌নিচ্ছুক দুইজন জনপ্র‌তি‌নি‌ধি জানান, উ‌নি ঢাকায় ব‌সে ফেইসবু‌কে স্ট্যাটাস দি‌য়ে সার‌ছেন। উনার পছ‌ন্দের নি‌র্দিষ্ট ব্য‌ক্তি ছাড়া এম‌পি\'র বরাদ্দও সাধারণ মানু‌ষের কা‌ছে পৌঁছা‌চ্ছে না।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সুলতান মনসুর জানান, এলাকায় ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। এমপির ব্যক্তিগত উদ্যোগ দেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ব্যক্তিগত কোনো আলাদা ফাণ্ড নেই।

গত নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ। করোনা সংকটের শুরু থেকেই তাকে মাঠে পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি ব্যক্তিগত তরফ থেকে কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান। করোনা সংকটের শুরু থেকেই তাকে কিংবা জেলা বিএনপির নেতাকার্মীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে জানতে সাবেক এমপি ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের ব্যক্তিগত নম্বরে কল দিলে তিনি কেটে দেন। তার পিএস শাহাদাৎ সিরাজ জানান, পৃথক পৃথকভাবে আমাদের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছেন। কিন্তু ঢাকা থেকে আসতে না পারায় স্যার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু দিতে পারছেন না।

মৌলভীবাজার-৪ আসনে গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ঐক্যফ্রন্টের হাজী মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। হাজী মুজিব এলাকায় ধনকুবের হিসেবে পরিচিত এবং র্নিবাচনের সময় দু’হাতে খরচ করেন বলে জনশ্রুতি আছে কিন্তু চলতি সংকটে তা‌কে এখ‌নো মা‌ঠে দেখা যায় নি।

অন্যদিকে নৌকা নিয়ে নির্বাচিত এমপি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাবান আর মাস্ক বিলি করেছেন। এর পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দ বণ্টনের ব্যাপারে তদারকি করছেন।

আব্দুস শহীদ এমপি জানান, আমি ব্যক্তিগতভাবে ৪ হাজার মাস্ক বিলি করেছি, এতদিন সরকারের ত্রাণ বণ্টনের তদারকি করেছি। বৃহস্পতিবার থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করবো। পাশাপাশি ডাক্তারদের পিপিইও আমার পক্ষ থেকে দেয়া হবে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন জানান, সরকারের উদ্যোগে জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতিতে ২শ মেট্রিক টন চাল ও ১২ লাখ টাকা বিলি করা হয়েছে। মজুদ আছে ৬৭৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/০২ এপ্রিল ২০২০/এসএ/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন