আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

হ্যাঁলো, ইউএনও স্যার........

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৪ ১৫:৫৬:৫৯

নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক

মঞ্জুরে আলম লাল, জুড়ী :: হ্যাঁলো, ইউএনও স্যার, আমার অসুস্থ মাকে নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। যদি সম্ভব হয় আমার জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করবেন।

এভাবে শুক্রবার বিকেলে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক-এর মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানালেন এক ভদ্র মহিলা। যিনি সামান্য বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন। দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে রাতে নিজের গাড়ীতে করে বেশ কিছু খাবারের পেকেট নিয়ে ওই বাড়ী পানে ছুটে চললেন ইএনও। কিছুু দুর গাড়ীতে করে আবার কিছু রাস্তা পায়ে হেটে খাবারের পেকেট নিয়ে ওই বাড়ীতে হাজির হন।

দু’টি পেকেট তুলে দেন পরিবারের হাতে। গভীর রাতে খাবারের পেকেট হাতে দরজায় দাঁড়ানো ইউএনওকে দেখে হতভম্ব ওই পরিবার। ভাবতে থাকে সেটা বাস্তব না সত্য! এরপর চাল, আলু, পেঁয়াজ, ডাল, তেল, লবন ও সাবান সহ আরও পেকেট নিয়ে একের পর এক বিভিন্ন গ্রামে ইউএনওর পথ চলা শুরু হয়। যাহারা বর্তমান ক্রান্তিকালে নিজের অসহায়ত্বের কথা কাউকে যেমন বলতে পারে না আবার লোকলজ্জার ভয়ে দাঁড়াতে পারে না কোন ত্রাণের লাইনে, এমন মানুষদের খোঁজে বের করতে লাগলেন। এভাবে ৪৪টি পরিবারের হাতে রাতের আধারে খাবার তুলে দিয়ে প্রশান্তি নিয়ে বাসায় ফিরেন।

দেশে বন্যা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারি সেরকারি সংস্থা বা ব্যক্তি উদ্যোগে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। অনেক মানুষ এক বার আবার অনেকে একাধিকবার ত্রাণ সামগ্রী পায়। কিন্তু আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হওয়া সত্বেও ওরা কারো কাছে হাত পাতে না। কিংবা রিলিফের জন্য লাইন ধরেনা। এমনকি উপবাস করবে তবুও লোকলজ্জার ভয়ে খাদ্যের জন্য কারো দ্বারে দ্বারে ঘুরবে না।

এরা কম বেতনের চাকরী করে, ক্ষুদ্র ব্যবসা করে, মৎস্যজীবি, ক্ষুদ্র কৃষক ও দিনমজুরও বটে। সমাজের এমন লোক গুলো আত্মসম্মানবোধ বজায় রাখতে গিয়ে প্রায় সময় অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

করোনাভাইরাস কেন্দ্রিক অচলাবস্থায় বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ব্যবসা, চাকুরী, অন্যান্য কর্ম সব কিছুই বন্ধ। এ দুঃসময়ে মন্ত্রী, সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তি ও অনেক প্রবাসী নিজ উদ্যোগে অসহায় মানুুষকে খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন। এর মধ্যে উপরোল্লেখিত শ্রেণির কিছুু মানুষ বরাবরের মত বঞ্চিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় রাতের আধারে খোঁজে খোঁজে বাড়ীতে খাবার পৌঁছে দিয়ে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক মানবতার এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন।

অন্যদিকে খাবার পাওয়া মানুষ গুলোর চোখে ঝরল আনন্দাশ্রু।

মানবিক কাজের এ ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবেন বলে অনুভূতি প্রকাশ করেন জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৪ এপ্রিল ২০২০/এমএএল/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন