আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

কুলাউড়‌ায় ক্ষুধার্ত চা শ্র‌মিক‌দের পাশে দাঁড়া‌লো জেলা প্রশাসন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৬ ২০:০০:১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুলাউড়া :: প্রায় ১০ সপ্তাহ ধ‌রে মজুরী ব‌ঞ্চিত কুলাউড়ার কা‌লি‌টি চা বাগা‌নের অসহায় ও ক্ষুধার্ত চা  শ্র‌মিক‌দের খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ ক‌রে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন।

সোমবার (৬ এ‌প্রিল) এই বাগা‌নে কর্মরত ৩০০ জন শ্রমিকের হা‌তে এই খাদ্যসামগ্রী তু‌লে দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান।

মজুরী ও অ‌ধিকার ব‌ঞ্চিত এই শ্রমিকদের দূর্ভোগ ও কষ্টের কথা আনুষ্টা‌নিকভা‌বে জেলা প্রশাসক না‌জিয়া শি‌রীন‌কে অব‌হিত ক‌রেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী। এরই প‌রি‌প্রে‌ক্ষি‌তে শ্র‌মিক‌দের মানবেতর জীবন যাপনের বিষয়‌টি বি‌বেচনায় নি‌য়ে এবং করোনা পরিস্থিতিতে তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় জেলা প্রশাসন।

ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ছিল প্র‌তি এক জ‌নের জন্য ১০ কেজি চাউল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি পেঁয়াজ, আধা কেজি ডাল, ১ কেজি লবন, আধা লিটার সয়াবিন তেল, ও ১টি সাবান।

ত্রাণ নিতে আসা বাগানের ক্ষুধার্ত শ্রমিকরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে কাছে পেয়ে তাদের ক্ষোভ ও দুঃখের কথা বলেন।

অনেক শ্রমিক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাগান মালিকের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাগানের মালিক কি আমাদের ক্ষুধার জ্বালার কথা শুনতে পাননা, আমরা কি অনাহারে-অর্ধাহারে মরে যাবো। তিনি বার বার আমাদের পাওনা মজুরী পরিশোধ করার আশ্বাস দিলেও আজও অবধি কোন মজুরী পাইনি। শ্রমিকরা এমনিতেই সামান্য মজুরী পান। ১০ সপ্তাহ কাজ করে কোন শ্রমিক মজুরী পাচ্ছেন না। কাজ করেও কোন মজুরী না পাওয়ায় ঘরে খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই।

শ্র‌মিকরা ব‌লেন, ক্ষুধার জ্বালায় অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর দিন কাটাচ্ছি আমরা। অনেক শ্রমিকের ঘরে রাতে হারিক্যান জ্বালানোর জন্য কেরোসিনও নেই। অন্ধকারের মধ্যে থাকতে হয়। আমরা সরকারি ত্রান পেয়ে কয়েকদিন হয়তো বাঁচতে পারবো কিন্তুু আমাদের বাগানের সমস্যাটা স্থায়ীভাবে সমাধান হওয়া চাই।

উপ‌জেলা চেয়ারম্যানের কা‌ছে তারা আকুল আ‌বেদন ক‌রে ব‌লেন, আপনি বাগান মালিকের সাথে কথা বলে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেন।

শ্রমিকদের কথা শুনে উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, বাগান মালিক কর্তৃপক্ষের সাথে সকল সমস্যাগুলো নিয়ে গুরুত্বসহকারে বিস্তর আ‌লোচনা কর‌বো এবং আগামী এক সপ্তাহের ভিতরে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিবো।

ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন- কর্মধা ইউপি চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক, উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ আলম চৌধুরী, কালিটি চা-বাগানের ব্যবস্থাপক প্রণব কান্তি দেব, চা-বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জু গোস্বামী, বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শম্ভু দাস ও সম্পাদক উত্তম কালোয়ার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী জানান, কালিটি চা-বাগানের শ্রমিকরা দীর্ঘদিন থেকে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। তাদের বিষয় নিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার কথা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরীন স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় ৩০০ শ্রমিকের পাশে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বাকি শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ত্রান সহায়তা করা হবে।

উ‌ল্লেখ্য, উপজেলা সদরে অবস্থিত কালিটি চা বাগানটি ‘কালিটি টি কোম্পানি লিমিটেড’ নামে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। ওই বাগানে প্রায় ৫৩৬ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। বাগানের শ্রমিকদের মজুরী ১০ সপ্তাহ থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে শ্রমিকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক ১০২ টাকা করে মজুরী পাওয়ার কথা থাকলেও গত ১০ সপ্তাহ থেকে তারা কোন মজুরী পাচ্ছে না। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার মালিকপক্ষ তাদের দাবি দাওয়া পূরণ করার আশ্বাস দিলেও শ্রমিকদের সেই পাওনা দাবি পূরণ করেনি বাগান কর্তৃপক্ষ। এতে বাগান শ্রমিকরা অসহায়ত্ব ও মানবেতর জীবন পরিচালনা করে আসছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৬ এপ্রিল ২০২০/এসএ/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন