আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বড়লেখায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের তালিকায় নাম থাকলেও বাস্তবে মসজিদই নেই!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-২৫ ০২:৫১:০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় মসজিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের প্রকাশিত তালিকায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযাগ ওঠেছে। তালিকায় এমন অনেক মসজিদের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, বাস্তবে যেগুলোর কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি একই মসজিদের নাম আলাদা ব্যক্তিদের নামে একাধিকবার অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক এলাকায় গণশিক্ষা কেন্দ্রকে মসজিদ হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এই নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে বইছে সমালোচনার ঝড়। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী রবিবার (২৪ মে) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। 


স্থানীয় ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (২২ মে) প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বড়লেখা উপজেলার ৫১২টি মসজিদের জন্য ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা করে ২৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার চেক বরাদ্দ দেওয়া হয়। শনিবার (২৩ মে) বড়লেখা উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজ থেকে মসজিদের তালিকা ও বরাদ্দের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়। প্রকাশের পরই ওই তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মসজিদ থাকলেও ওই ওয়ার্ডের কোনো মসজিদের নাম প্রধানমন্ত্রীর উপহারের তালিকায় নেই। তালিকায় মসজিদের নাম না থাকায় স্থানীয় লোকজনের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। অভিযোগ ওঠেছে, ওই ওয়ার্ডের সকল মসজিদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়লেও একই ইউনিয়নের ডিমাই ও মহদিকোনো এলাকায় বাস্তবে কোনো মসজিদ নেই এমন নামও তালিকায় রয়েছে। কোথাও একটি মোবাইল নম্বরে আলাদা আলাদা মসজিদের নাম দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এখানে মসজিদ একটি। সদর ইউনিয়নের ডিমাই স্কুল টিল্লা মসজিদের নাম দু’বার তালিকায় উঠেছে। দুই জায়গায় সভাপতি ও ইমামের নাম আলাদা। সদর ইউনিয়নের তালিকা প্রস্তুতকারী ইসলামী ফাউনন্ডেশনের স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হামিদের নাম এসেছে ডিমাই স্কুল টিল্লা মসজিদের ইমাম হিসেবে। আর সভাপতি হিসেবে যার নাম এসেছে তিনি তার আপন ভাই। কিন্তু এখানে প্রকৃত পক্ষে ডিমাই স্কুল টিল্লা মসজিদের সভাপতি হচ্ছেন আব্দুল গণি ও ইমাম সেলিম উদ্দিন। তাদের নামও তালিকায় আছে। 

একই মসজিদের নাম দুবার তালিকায় ওঠার বিষয়ে আব্দুল হামিদ বলেন, ‘একদিনের মধ্যে তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ পেয়ে ৪৭টি মসজিদের নাম দেই। কিন্তু প্রিন্ট তালিকায় কিভাবে ৪৯টি এসেছে আমি বলতে পারছি না। ৪৭টির তালিকা আমার হাতে আছে। তালিকা প্রকাশের পর অনেকে বলছেন একটি মসজিদ দুবার তালিকায়। একটিতে আমারও নাম আছে শোনেছি। এটা ৪৮ নম্বরে। ৪৭টির তালিকা জমা দেওয়ার পর কিভাবে ৪৯টি মসজিদের নাম অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এটা ইসলামী ফাউন্ডেশনের সুপারভাইজার বলতে পারবেন।’

বাদ পড়ার বিষয়ে বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘তালিকা প্রকাশের পর আমরা দেখি সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোনো মসজিদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। এ ওয়ার্ডে অনেক পুরাতন মসজিদ আছে। যেগুলো বাদ পড়েছে। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি এ ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগ করে। দুর্যোগ-দু:সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত তারা। কিন্তু মসজিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের তালিকা থেকে বঞ্চিত। একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্দনে এটা হয়েছে। বিষয়টি খুব দু:খজনক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা বিচার চাই।’

অন্যদিকে  উপজেলার ১০ নম্বর দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাস্তবে নেই এমন একটি মসজিদেরও নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এতে এলাকার লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে তারা রবিবার (২৪ মে) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে ইসলামী ফাউন্ডেশন বড়লেখার সুপারভাইজার মো. আব্দুল বারী মুঠোফোনে বলেন, ‘১ দিনের মধ্যে তালিকা প্রস্তুত করে পাঠাতে বলা হয়। আমার লোকবল কম। তাড়াহুড়ো করে তালিকা পাঠাই। কোথাও কপি করতে গিয়ে কম্পিউটারে ভুল হতে পারে। এখনো চেক হস্তান্তর হয়নি। বাদ পড়া মসজিদগুলোর নাম অন্তর্ভূক্তের সুযোগ আছে। একাধিক নাম অথবা ভুলবশত গণশিক্ষা কেন্দ্রের নাম মসজিদের তালিকায় চলে আসলে অবশ্যই তা বাদ দেওয়া হবে। প্রকৃত মসজিদের সভাপতি ও ইমামের নামে চেক দেওয়া হবে।’


সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৫ মে ২০২০/লাভলু

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন