Sylhet View 24 PRINT

বড়লেখায় করোনা পরীক্ষায় বিড়ম্বনা, বাড়ছে সংক্রমণ ঝুঁকি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-০৭ ২১:৫৩:৫৫

এ.জে লাভলু, বড়লেখা :: সুমন আহমদ (২৮)। তাঁর বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের দোহালিয়া গ্রামে। তিনি সিলেটের ছাতক উপজেলায় একটি মসজিদে ইমামতি করেন। ঈদের ছুটিতে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। এরই মধ্যে সুমনের শরীরে করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সন্দেহে গত ৭ জুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ৮ দিন অপেক্ষার পরও নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন না পেয়ে ১৬ জুন তিনি ছাতকে ফিরে যাচ্ছিলেন। ওইদিনই (১৬ জুন) তাঁর নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পজিটিভ আসে। ততক্ষণে সুমন সিলেট পৌঁছে গেছেন। পরে অবশ্য সিলেট থেকে তাঁকে ফিরিয়ে এনে তাঁর বাড়ি লকডাউন করে প্রশাসন। 

মোস্তাক তাপাদার কাননের (৩০) বাড়ি উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের নান্দুয়া গ্রামে। তাঁর মধ্যে করোনার উপসর্গ কাশি ছিল। গত ২৩ জুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ৭ দিন পর গত ১ জুলাই তাঁর নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন নেগেটিভ আসে। এই সময়ের মধ্যে কানন চরম ভয় আর আতঙ্কে ছিলেন।

শুধু ফাহিম বা কানন নন, তাদের মতো অনেকেই নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন সঠিক সময়ে পাচ্ছেন না। ফলে তারা করোনা আক্রান্ত কি-না তা জানতে পারছে না। এতে যেমন একদিকে নমুনা প্রতিবেদনের অপেক্ষায় থাকা অনেকের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে। তেমনি করোনায় আক্রান্ত হলেও অনেকেই হোম কোয়ারেন্টিন থেকে বেরিয়ে পড়ছেন। এই অবস্থায় উপসর্গ থাকলেও মানুষের মধ্যে করোনার পরীক্ষার আগ্রহ কমে গেছে। এতে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে অন্যরা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলায় এপ্রিল মাস থেকে নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রথম দিকে নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পাঠানো হতো। এরপর কয়েকদিন সিলেট ওসমানী হাসপাতালের ল্যাবে নমুনা পাঠিয়ে তা পরীক্ষা করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার ন্যাশনাল হাসপাতাল অব মেডিসিন অ্যান্ড ল্যাব রেফারেন্স সেন্টারে ল্যাবে নমুনা পাঠানো হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এপ্রিল মাস থেকে এ পর্যন্ত উপজেলায় প্রায় ৫০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বিভিন্ন ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৪৫০ জনের প্রতিবেদন এসেছে। এতে ৫৭ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। সুস্থ হয়েছেন ৩২জন। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। সঠিক সময়ে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন না পেয়ে অনেকে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে বেরিয়ে পড়ছেন। তারা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধে ঘোরাফেরা করছেন। নমুনা প্রতিবেদন দেরিতে পাওয়ার কারণে উপসর্গ থাকলেও অনেকেই নমুনা পরীক্ষা করছেন না। এতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নমুনা পরীক্ষা দিয়ে রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, করোনার উপসর্গ থাকায়  আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হতে নমুনা পরীক্ষায় দিয়েছিলেন। কিন্তু রিপোর্ট এখনও পাননি। এতে তিনি চরম আতঙ্কে রয়েছেন। 

করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তি বলেন, নমুনা পরীক্ষার ৭ দিন পর তিনি নমুনা প্রতিবেদন পেয়েছেন। প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই তার জ্বর কমেছে। তবে শরীর এখনও দুর্বল রয়েছে। ঠিকমতো খেতে পারছেন না। কাশিও আছে।

করোনামুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা এম সাদেক বলেন, আমার কোনো উপসর্গ ছিল না। ব্যাংকে কাজ করি। তাই পরিবারের সবার কথা ভেবে নমুনা পরীক্ষা দিয়েছিলাম। অবশ্য দুই-তিন দিনের মধ্যে আমার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কয়েকদিন আইসোলেশনে থাকার পর সুস্থ হওয়ায় দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা দেই। নমুনা নেওয়ার কয়েকদিন পর ফলাফল না জানিয়ে তাকে ফোন করে পুনরায় নমুনা দিতে বলা হয়। পরে আবার নমুনা পরীক্ষায় দেই। পরে আটদিন পর প্রতিবেদন নেগেটিভ আসে।

করোনার উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা করেননি, এমন দুইজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে কয়েকদিন সময় লাগছে। এছাড়া তাদের অনেক স্বজন-পরিচিতজন নমুনা পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু সঠিক সময়ে তারা রিপোর্ট পাননি। এসময় তাদের মধ্যে অনেক ভয় আর আতঙ্কে ছিলেন। এছাড়া তাদের পরিচিত কয়েকজন সামাজিকভাবে হেয়ও হয়েছেন। এসব কারণে এবং নমুনা পরীক্ষার ফল জানতে দেরি হওয়ায় তারা পরীক্ষা করছেন না।

এব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রত্নদ্বীপ বিশ্বাস মঙ্গলবার (০৭ জুলাই) সন্ধ্যায় বলেন, আমরা নমুনা সংগ্রহ করে মৌলভীবাজারে পাঠাচ্ছি। সেখান থেকে নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা ও সিলেটে ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। মাঝেমধ্যে নমুনার ফল পেতে দেরি হচ্ছে। ল্যাবে নমুনা স্তুপ জমে যাওয়ায় এরকম হচ্ছে। অবশ্য যাদের করোনা পজিটিভ তাদের দ্রুত জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর যাদের নেগেটিভ তাদের ফলাফল একটু দেরিতে আসছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ৭ জুলাই ২০২০/লাভলু/পিডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.