Sylhet View 24 PRINT

মা বোনের জন্য রেদওয়ান বাঁচতে চায়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৯-২৪ ১৩:০৯:৪৮

শাকির আহমদ, কুলাউড়া :: পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন রেদওয়ান ইসলাম রোমান। মাত্র ১৯ বছর বয়সে পরিবারের হাল ধরতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান তিনি। সেখানে ৭ বছর ভালোভাবে কেটে যায় তার দৈনন্দিন জীবন। হঠাৎ খাদ্যনালীতে সমস্যা দেখা দেয়ায় চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন। অনেকদিন চিকিৎসা করেও সুস্থ না হওয়ায় দেশে ফিরে আসেন তিনি।

এক বছর হয়ে গেলেও শারীরিকভাবে আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েন রেদওয়ান। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার শ্বাস নালী, খাদ্য নালী, কণ্ঠ নালী অপারেশন করতে হবে। এবং তা করতে হবে ভারতে গিয়ে। এজন্য খরচ হতে পারে ৮ লাখ টাকারও বেশী। ইতোমধ্যে মায়ের ঝুলিতে যা ছিলো নগদ অর্থ তার পুরোটা চিকিৎসা বাবদে খরচ করা হয়ে গেছে। আত্মীয় স্বজনের সহযোগীতাও নিয়েছেন মা। বাবার সম্পত্তি থাকলেও তার উপস্বত্ব বের করার মতো নেই লোকবল। এমন পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন রেদওয়ান ও তার মা।

রেদওয়ান ইসলাম রোমেন কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মানিকের ছেলে। ২০১০ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে রেদওয়ান তার মা ও বোনকে নিয়ে উপজেলার জয়চন্ডি ইউনিয়নের মিঠুপুর গ্রামে নানাবাড়িতে বসবাস করছেন। রেদওয়ান দিলদারপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাশ করে কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। যদিও পরিবারের হাল ধরতে তিনি ২০১১ সালে দুবাইতে যান।

প্রবাসে থাকাবস্থায় ২০১৯ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন রেদওয়ান। সেখানে চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে না পারায় ওই বছর তিনি দেশে ফিরে আসেন। এখানে টানা এক বছর চিকিৎসা করে রেদওয়ানের পরিবার অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শেখ হাছানুর রহমানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চালিয়ে গেলেও সদ্য তিনি জানিয়েছেন, সুস্থ হতে রেদওয়ানের অপারেশন লাগবে এবং সেজন্য ভারতে গিয়ে এই চিকিৎসা করতে হবে।

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি আজ নিঃস্ব। কি থেকে কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না রেদওয়ানের মা নাজমা বেগম। প্রথম দিকে কাউকে বলতে দ্বিধা করলেও এখন অনেকটা বাকরূদ্ধ হয়ে গেছেন রেদওয়ানের মা। ছেলের দিকে তাকিয়ে আড়ালে কান্না করা ছাড়া এখন কিছুই করতে পারছেন না তিনি।

রেদওয়ানের মুখের স্বর অনেকটা স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। তাই এখন হাতের কয়েকটি আঙ্গুলই তার ভরসা। মোবাইলের স্ক্রিনে কষ্টগাঁথা শব্দগুলো একত্রিত করে কিছু লিখে আবার তিনি ডিলিট করে দিচ্ছেন। চোখের কোণে ভেসে উঠে স্বপ্ন ফোঁটা। যে স্বপ্ন ঝরে যেতে চায় দুঃস্বপ্নের বেড়াজালে। রেদওয়ানের সব চিন্তা এখন তার মা আর একমাত্র বোনের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

মঙ্গলবার ২২ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে উপজেলার জয়চন্ডি ইউনিয়নের মিঠুপুর গ্রামে রেদওয়ানের বর্তমান নিবাসে গিয়ে দেখা যায়, রেদওয়ানের শয্যাপাশে বসে মা তার সেবা করছেন। এসময় তার শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে তিনি অনেক কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছিলেন না।

রেদওয়ান স্বাভাবিক কণ্ঠে কথা বলতে না পারলেও প্রতিবেদককে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি বর্তমানে খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসে যাই। চেয়েছিলাম মা ও বোনের মুখে হাসি ফোঁটাবো। কিন্তু এখন উল্টো তাদের চোখের পানি দেখতে দেখতে আমার দিন যাচ্ছে।’

সমাজের সকলের উদ্দেশ্যে রেদওয়ান বলেন, ‘আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার পাশে দাঁড়াবেন। যদি বেঁচে থাকি আপনাদের সাথে দেখা করবো। আর যদি মারা যাই, আমার মা ও বোনের দিকে খেয়াল করবেন। আমি ছাড়া আমার মা-বোনের কেউ নাই...’।
চোখের কোণে জল আর চাপা কষ্টে রেদওয়ান আর কিছুই বলতে পারেন নি।

রেদওয়ানের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘আপনারা আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।’ নিজেদের অসহায়ত্ব গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে- এমন পরিস্থিতিতে তিনি বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েন। চাপাস্বরে বলেন, ‘আমার ছবিটা প্রকাশ করিও না বাবা। আমার ছেলেটাকে বাঁচাতে সবাই এগিয়ে আসো।’

ওই দিন রাত প্রতিবেদকের মোবাইল ফোনে রেদওয়ান ক্ষুধে বার্তা পাঠান, ‘ভাই, আমি বাঁচবো তো?’

রেদওয়ান বাঁচতে চায়। সে তার পরিবারের জন্য বাঁচতে চান। এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

রেদওয়ানের সহযোগিতায় যোগাযোগ, ব্যাংক- সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, মোছাঃ নাজমা বেগম (Most: Nazma Begom), অ্যাকাউন্ট নং-- 5810002188274, কুলাউড়া শাখা, মৌলভীবাজার। বিকাশ নং-: 01308650067 (রেদওয়ানের মা).
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৪সেপ্টেম্বর২০২০/শাকির

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.