আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

জুড়ীর মোস্তাফিজকে নিয়ে গর্ব করছেন এলাকাবাসী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-১৮ ১৬:৪৮:৪৫

জুড়ী প্রতিনিধি :: ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড এর জন্য মনোনীত হয়েছে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের জায়ফরনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কাউট মোস্তাফিজুর রহমান।

জায়ফরনগর গ্রামের বাসিন্দা ছোলা ভাজি, সিঙ্গারা বিক্রেতা মতছিন আলীর পুত্র মোস্তাফিজকে দারিদ্র তাড়া করলেও অদম্য ইচ্ছা শক্তির বলে সে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শত প্রতিকুলতা তার কাছে হার মানছে।

মতছিন আলীর পরিবার একেবারেই নিম্নবিত্ত। বাড়ির পাশে স্থানীয় মানিকসিংহ বাজারে প্রতিদিন বিকালে ছোলা ভাজি, সিঙ্গারা বিক্রি করে ৫ সদস্যের সংসার চালান। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসারের নিত্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তার উপর ৩ সন্তানের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করা অতিরিক্ত বোঝা স্বরূপ। এরকম নানা প্রতিকুলতায় জড়িয়ে থাকলেও প্রবল ইচ্ছা শক্তি সব বাধা ডিঙ্গিয়ে বড় পুত্র মোস্তাফিজকে এগিয়ে নিচ্ছে সামনের দিকে।

স্থানীয় জায়ফরনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর বিদ্যালয়ের স্কাউটস এর দায়িত্বে থাকা শিক্ষক উস্তার আলীর অনুপ্রেরণায় স্কাউটে যোগ দেয় মোস্তাফিজ। লেখাপড়ার পাশাপাশি চালিয়ে যায় স্কাউট কার্যক্রম। মেধা ও প্রজ্ঞায় উপজেলা স্কাউট সমাবেশে যোগ দিয়ে কৃতিত্বের সহিত উত্তীর্ণ হয়ে জেলা সমাবেশে অংশ নেয়। সেখানে ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে জাতীয় পর্যায়ে স্কাউটস জাম্বুরীতে যোগদান করে সফলতা অর্জন করে। স্কাউটস এর সর্বোচ্চ পদক "প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০১৯” পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য মৌলভীবাজার জেলা থেকে ৫ জনকে বাছাই করা হয়, তার মধ্যে মোস্তাফিজ একজন। ১৭ জুলাই ২০২০ ঢাকায় অনুষ্টিত চুড়ান্ত পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণ করে। ১৩ অক্টোবর ২০২০ ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী মোস্তাফিজ চুড়ান্ত ভাবে মনোনীত হয়।

জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে মেধানুসারে উপজেলায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারী, জুড়ী তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি ডিগ্রি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত মোস্তাফিজুর রহমান।

সে একজন আদর্শ চিকিৎসক হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমার এ সফলতার জন্য বাবা মা’র অবদান অনস্বীকার্য। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক আমাকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করেছেন। শাহিন স্যার ও জামাল স্যার আমাকে বিনা পারিশ্রমিকে প্রাইভেট পড়িয়েছেন। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার বাবার আর্থিক অনটন থাকলেও আমাকে দোকানে কাজ করতে দিতেন না। সব সময় পড়ার জন্য বলতেন। আমি যেন চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র মানুষের সেবা করতে পারি, এজন্য সবার দোয়া চাই’।
মোস্তাফিজের সাফল্যে তার পরিবার, বিদ্যালয়সহ এলাকাবাসী আনন্দিত।

জায়ফরনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতীশ চন্দ্র দাস বলেন, মোস্তাফিজ প্রচুর মেধাবী ছেলে। এত অভাব অনটনের মধ্যেও লেখাপড়ায় তার কোন কমতি নেই। আমরা বিদ্যালয় থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছিলাম।

দারিদ্রের চরম কষাঘাতে জর্জড়িত মোস্তাফিজের স্বপ্ন যেন বাস্তবায়ন হয়, এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ অক্টোবর ২০২০/এমএএল/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন