আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

কমলগঞ্জে মণিপুরী মহারাসলীলা, পাড়ায় পাড়ায় চলছে উৎসবের আমেজ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১১-২৮ ১৬:১১:১৪

ফাইল ছবি

জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরে বিষ্ণুপ্রিয়া ও আদমপুরে মৈতেই মণিপুরী মহারাসলীলা। রাসলীলাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষকের মাধ্যমে মণিপুরীদের নিখুঁতভাবে নৃত্য প্রশিক্ষণের পূর্ব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়ে চলছে উৎসবের আমেজ। বাড়ির উঠোনে ছেলেমেয়েদের নাচের ভঙ্গিমা আবার কোনো জায়গায় হয়েছে রাসনৃত্য কিংবা রাখালনৃত্যের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।

সিলেটের ক্ষদ্র নৃ-তাত্তি¡ক এই জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা আগামী ৩০ নভেম্বর উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের হতে যাচ্ছে। তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব এবার সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে।

উপজেলার মাধবপুর জোড় মন্ডপে পূর্ণ হচ্ছে ১৭৮তম রাস উৎসব। বাড়ির উঠোনে ছেলেমেয়েরা নাচছে। নাচের প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষক দেখিয়ে দিচ্ছেন নাচের ভঙ্গিসমূহ। কোনো স্থানে চলছে রাসনৃত্যের মহড়া ও কোনো স্থানে রাখালনৃত্যের। মাধবপুরের রাসমেলার আয়োজক মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘ মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়।

উৎসবের দিন দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড়া মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। রাতভর রাধাকৃষ্ণের প্রণয়োপখ্যানের সে রাসলীলা উপভোগ করতে সারাদেশ থেকে ছুটে আসেন হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ নানা শ্রেণী পেশার লোকজন।

আয়োজকরা জানান, রাস উৎসবকে সফল করতে প্রায় এক মাস ধরে ছয়টি বাড়িতে রাসনৃত্য এবং রাখালনৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলছে। তিনটিতে রাসনৃত্য ও তিনটিতে রাখাল নৃত্য। মাধবপুরে তিনটি জোড়া মন্ডপের আওতায় এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একেকটি মন্ডপে আছেন একজন পুরোহিত। সেই পুরোহিতের পরামর্শে একজন প্রশিক্ষক ধর্মীয় বিধিবিধান মতো গোপী বা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেন। গোপীবেশী এই শিল্পীদের বয়স ১৬ থেকে ২২ বছর। শুধুমাত্র রাধার বয়স পাঁচ থেকে ছয় বছর।

নৃত্যের প্রতিটি দলে নুন্যতম ১২ জন অংশ নিয়ে থাকে। একইভাবে রাখাল নৃত্যেরও প্রতিটি দলে ২০ থেকে ২২ জন ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী বালক অংশ নিয়ে থাকে। রাত ১১টা থেকে পরিবেশিত হবে মধুর রসের নৃত্য বা শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ। এই রাসনৃত্য ভোর পর্যন্ত চলবে। এই রাসনৃত্যে গোপিনীদের সাথে কৃষ্ণের মধুরলীলাই কথা, গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পীরা। তুমুল হৈচৈ, আনন্দ উৎসাহ ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ শ্রী কৃষ্ণ ও তার সখি রাধার লীলাকে ঘিরে এই একটি দিন বছরের আর সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজের উৎসব নিয়ে আসে কমলগঞ্জবাসীর জন-জীবনে।

মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। এখন পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ। নতুন কাপড়চোপড় কেনা হয়েছে। হেমন্তকাল মানেই রাস-পূর্ণিমা, রাস উৎসব।

আদমপুর মহারাস উদ্যাপন কমিটির অন্যতম নেতা ইবুংহাল সিংহ শ্যামল বলেন, সকল আয়োজন এখন শেষপর্যায়ে। উৎসব সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক ও কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুর রহমান বলেন, আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার জন্য দুই স্থানেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্টানে নিরাপত্তায় পুলিশের তিন স্তরের ব্যবস্থা থাকবে। তবে এবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিাধ মেনে সীমিত পরিসরে ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে মণিপুরী রাসলীলা হলেও কোন মেলার অনুমতি দেয়া হয়নি।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৮ নভেম্বর ২০২০/জেএ/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন