আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বয়স্ক ভাতাই আরিজা বিবির শেষ অবলম্বন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১২-০৩ ১২:২৫:৫৯

জুড়ী প্রতিনিধি :: ‘ফুয়া ফুড়িনতে বাপর বাড়ি বেছিয়া টেখা নিছইনগি। ফুয়াইনতে আমার খবর করইননা। আমি বয়স্ক ভাতা আর ভিখ করিয়া যা পাই অগুনতে আমার অয়। ফুড়িনতর বাড়িত থাকি’ (ছেলে মেয়েরা বাবার বাড়ি বিক্রী করে যার যার টাকা নিয়ে যায়। ছেলেরা আমার খবর করেনা। বয়স্ক ভাতা আর ভিক্ষা করে যা পাই তা দিয়ে আমার চলে। মেয়েদের বাড়িতে থাকি) নিজের সম্পর্কে এভাবেই কথা বলেন ৭০ বছর বয়সের ভিক্ষুক আরিজা বিবি।

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের দক্ষিণ সাগরনাল (গাঙ্গেরপুল) গ্রামের বাসিন্দা আরিজা বিবির স্বামী আরসাদ আলী প্রায় ২৫ বছর পূর্বে মারা যান। তাঁর ২ ছেলে ও ৪ মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দেন। ছেলেরাও বিয়ে করে। আরসাদ আলীর রেখে যাওয়া বাড়িতে ৩০ শতাংশ জায়গা ছিল। ছেলে মেয়েরা অংশ মত বিক্রী করে টাকা নিয়ে নেয়। মায়ের কিছুই নেই। ছেলেরা বউ নিয়ে অন্যত্র চলে যায়। মেয়েরাও স্বামীর বাড়ি। অসহায় হয়ে পড়েন বৃদ্ধা আরিজা বিবি। পর্যায়ক্রমে মেয়েদের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও তাদের পরিবারে নেই স্বচ্ছলতা। ৭০ বছর বয়সে নিজ গ্রামেই তিনি ভিক্ষা করেন। দুরে যেতে পারেন না। যে ছেলেদের গর্ভে ধারণ, জন্মদান, লালনপালন, বিয়ে সব কিছু করালেন সেই ছেলেরা এখন বউ-সন্তান নিয়ে সংসার করলেও তাদের সংসারে বুড়ি মায়ের জন্য এক মুঠো অন্ন বা একটু মাথা গুঁজার ঠাঁই হয়না। মাকে ওরা দেখতেও আসেনা। জীবনের পড়ন্ত বেলায় সরকার প্রদত্ত বয়স্ক ভাতাই আরিজা বিবির শেষ অবলম্বন।

এক প্রতিক্রিয়ায় আরিজা বিবি বলেন, ছেলেরা না খাওয়ালে, খোঁজখবর না করলেও আমি তাদের অভিশাপ দেইনা। দোয়া করি আল্লাহ তাদের বড় করুক।

একদিকে ২০১৮ সালের ০৭ জুলাই বাংলাদেশে প্রথম জুড়ী উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে বৃদ্ধ মা-বাবার যত্ন নিতে কঠোর আইনও রয়েছে। তারপরেও ৭০ বছর বয়সে আরিজাকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করতে হয়, আশ্রিত হতে হয় মেয়েদের বাড়িতে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৩ ডিসেম্বর ২০২০/এমএএল/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন