আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষক তাবিজের স্পর্শে অজ্ঞান!

তান্ত্রিক আটক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০১-২৩ ২১:৫১:৫৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুলাউড়া :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া আতিকুর রহমান সোহেল নামে এক শিক্ষক তাবিজের স্পর্শে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাবিজ দিয়ে এমন ক্যারিশমা দেখান এই বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী বিপুল বিশ্বাস (৪৮)। ক্ষুব্ধ স্থানীয়দের ধারণা, তন্ত্র-মন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে এঘটনা ঘটিয়েছেন বিপুল। তাকে তান্ত্রিক উল্লেখ করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা।

তবে বিপুল দাবি করেন, ‘সোহেল স্যার আমার কাছে আশির্বাদ চান। আশির্বাদ দিতে আমি ধর্মের দোহাই দিয়ে তাবিজ তার শরীরে স্পর্শ করি। এরপর তিনি এরকম হয়ে গেলেন। কিভাবে হলেন আমি কিছুই জানি না।’

এদিকে শিক্ষক সোহেল অজ্ঞান হওয়া এবং তার অসুস্থতার খবর পেয়ে ওই এলাকায় হট্টগোল ও উত্তেজনা দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাৎক্ষনিক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে দেন কর্তৃপক্ষ।

২৩ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। পরে অসুস্থ শিক্ষক সোহেলকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৩ জানুয়ারি শনিবার উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা ছিলে। প্রধান শিক্ষক পদে ৫ জন প্রার্থী এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১০ জনের মধ্যে ৪ জন প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। নিয়োগ পরীক্ষার বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার, জেলা শিক্ষা অফিসের প্রতিনিধি ও মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমদ, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম খান বাচ্চু, সদস্য আব্দুল মন্নান ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাসান খান।

নিয়োগ পরীক্ষার পূর্ব মুহুর্তে লিখিত পরীক্ষার জন্য হলরুমে প্রবেশের সময় স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকারী আতিকুর রহমান সোহেল বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী স্থানীয় শ্রীপুর লামাপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিপুল বিশ্বাস (৪৮) এর সাথে কুশল বিনিময় করেন। এসময় বিপুল আশির্বাদ দেয়ার কথা বলে একটি তাবিজ শিক্ষক সোহেলের শরীরে স্পর্শ করেন। তাৎক্ষনিক শিক্ষক সোহেলের শরীরে কাঁপুনি শুরু হয় এবং বিপুল বিশ্বাস সাথে সাথে মূত্র ত্যাগ করেন। সাথে সাথে শিক্ষক সোহেল অজ্ঞান হয়ে বিদ্যালয়ের বারান্দায় লুঠিয়ে পড়ে যান।

এসময় বিদ্যালয়ের আশপাশের লোকজন এসে জড়ো হয়ে হট্টগোল শুরু করেন। তারা নৈশপ্রহরী বিপুল বিশ্বাসকে তান্ত্রিক উল্লেখ করে গণধোলাই দেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে নৈশ প্রহরি বিপুলকে বাথরুমে আটকে রাখেন।

খবর পেয়ে কুলাউড়া কুলাউড়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ বিনয় ভূষন রায়সহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল বিশ্বাসকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা শিক্ষক সোহেলকে উদ্ধার করে প্রথমে ব্রাহ্মণবাজারের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে এবং পরবর্তীতে তাকে সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন বলে তাঁর ভাই শিক্ষক ফয়জুর রহমান ছুরুক নিশ্চিত করেছেন।

থানায় আটক বিপুল বিশ্বাস জানান, সোহেল স্যার আমার খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করেন। তিনি আমার কাছে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আশির্বাদ চেয়েছিলেন। আমি তাকে ধর্ম ও মা-প্রভূর দোহাই দিয়ে তাবিজ দিয়ে আশীর্বাদ করতে উনার শরীরে স্পর্শ করি। তখন দেখতে পাই, তিনি অসুস্থতা বোধ করছেন। আমি কোন খারাপ উদ্দেশ্যে কিছু করিনি। তাবিজ কোথায় থেকে পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ধর্মীয় গুরু কুলাউড়ার কাদিপুর কাকিচারের মহেশ বিশ্বাসের কাছ থেকে কয়েকমাস আগে তাবিজ সংগ্রহ করেছি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম খান বাচ্চু জানান, আমার সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। প্রধান শিক্ষক পদে পরীক্ষা অংশ নেয়া শিক্ষক সোহেল মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তখন তাকে উদ্ধার করে আমরা হাসপাতালে পাঠাই এবং নিয়োগ পরীক্ষা তাৎক্ষণিক স্থগিত করি।

কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার জানান, বিদ্যালয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ায় আপাতত শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরায় শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।

কুলাউড়া থানার অফিসার্স ইনর্চাজ বিনয় ভূষণ রায় জানান, আটক বিপুল বিশ্বাসকে থানা হেফাজতে  রাখা হয়েছে। যার কাছ থেকে বিপুল বিশ্বাস তাবিজ সংগ্রহ করেছে সেই মহেশ চাষাকে আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩জানুয়ারি২০২১/শাকির

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন