আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং

জুড়ী উপজেলা আ.লীগের কমিটিতে বিএনপি-জামায়াত!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৪-১২ ২০:০৭:৩০

জুড়ী প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন ঢুকিয়ে দলের নয়, ব্যক্তির পাল্লা ভারী করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা গঠনের ১৬ বছরে এই প্রথম গঠিত ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। দলের পরীক্ষিত ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে অপেক্ষাকৃত জুনিয়রদের পদায়ন, যোগ্যতার ভিত্তিতে পদ না দেয়া, বিএনপি, জামায়াতদলীয় লোকদের কমিটিতে স্থান দেয়া ও আত্নীয়করণসহ নানা অভিযোগ তুলছেন কমিটিতে স্থান পাওয়া ও না পাওয়া অনেকে।

অভিযোগে জানা যায়, সদ্য প্রকাশিত কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা বদরুল হোসেনের স্ত্রী শাহানা চৌধুরীকে দেয়া হয়েছে শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব, ভাতিজা সাবেক যুবদল নেতা জাহেদ হোসেন তাজিনকে করা হয়েছে সদস্য। যিনি ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ আওয়ামী লীগে যোগদেন। সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদের স্ত্রী শিরিন আক্তারকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও স্ত্রীর বড় ভাই শাহীন আহমদকে সদস্য পদ দিয়ে অলংকৃত করা হয়েছে। শাহীন পার্শ্ববর্তী কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। চাকুরির সুবাদে জুড়ীর ফুলতলা চা বাগানে থাকেন। তিনি এক সময় কুলাউড়ায় সরাসরি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং এখন প্রত্যক্ষ ভাবে জামায়াত সংশ্লিষ্ট বলে স্থানীয় ভাবে অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছেন ৯০এর পরবর্তী সময়ে ফুলতলা ইউনিয়ন (সাবেক কুলাউড়া উপজেলা) যুবদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মিফতা উদ্দিন কামাল ওরফে জহিরুল কাইয়ূম কামাল, যার তালতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান। এ সুবাধে ২০১৮ সালে গঠিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হয়েছিলেন তিনি। যুবদলের ওই কমিটির সহ-সভাপতি মো. আরমান আলীকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকের পদ দিয়ে। একই ভাবে ফুলতলা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজল বাউরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ পেয়েছেন। শিরিন আক্তার, শাহীন আহমদ, মিফতা উদ্দিন কামাল, মো. আরমান আলী ও কাজল বাউরী কবে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন তা ফুলতলা ইউনিয়ন আওয়ামী পরিবারের কেহই বলতে পারেন না। জুড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মামুনুর রশীদ সাজু ও সাধারণ সম্পাদক শেখরুল ইসলামকে সদস্য করা হয়। একই কমিটির প্রথম সহ-সভাপতি আব্দুস সাত্তারকে সাংগঠনিক সম্পাদক, তৃতীয় সহ-সভাপতি শরদেন্দু দাস শেখুকে দপ্তর সম্পাদক ও সদস্য- জমসেদ আহমদ উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মাওলানা মাহমুদ আলীকে সহ-সভাপতি করার কথা বলা হলেও কমিটিতেই রাখা হয়নি। রাখা হয় নি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক দীর্ঘ দিনের সভাপতি গোপিকা অধিকারীকে। পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৫ বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য সুভেন্দ্র নায়েক (সেভেন মেম্বার) সদস্য হতে পারেন নি।

উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল খালিক খালই, সাগরনাল ইউনিয়নের নেতা আব্দুল কুদ্দুছ, জায়ফরনগর ইউনিয়নের আব্দুল মনাফ কুটি, আব্দুল লতিফ, কামাল উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম মেম্বার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্থান পান নি উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি হুইপ মো. শাহাব উদ্দিনকে ফুলের তোড়া দিয়ে ৫ শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও পূর্বজুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সালেহ উদ্দিন আহমদ। যিনি ২০১৬ সালে নৌকা প্রতীকে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাঁকেও সদস্য করা হয় নি।

এ সব নানা অভিযোগ করে তৃলমূলকর্মীরা বলেন, দলের ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে মাই ম্যান ও বিএনপি, জামায়াতকে কমিটিতে স্থান দিয়ে আওয়ামী লীগ দল নয়, ব্যক্তির পাল্লা ভারী করা হয়েছে।

ফুলতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলা সভাপতি ও সম্পাদক দুইবার সকল ইউনিয়ন সভাপতি-সম্পাদককে নিয়ে সভা করে কমিটির জন্য নাম তৈরি করতে বলেন। আমরা তা করলাম। কিন্তু সেই নাম গুলো না নিয়েই কমিটি প্রকাশ করলেন।

পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুবের হাসান জেবলু বলেন, কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউনিয়ন সভাপতি-সম্পাদককে নিয়ে বসে কমিটি করার কথা। কিন্তু আমাদের মতামত না নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। নেতৃবৃন্দ তৃণমূলের ক্ষোভ বুঝতে হবে।

কোন মাপকাঠিতে পদ-পদবি প্রদান করা হয়েছে, তা বোধগম্য হয়নি। রাজনৈতিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, বয়স ও মেধায় পিছিয়ে থাকা অনেককে অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। আবার তুলনামূলক যোগ্য ও অভিজ্ঞ অনেককে কম গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রদান করা হয়েছে। এটা সুস্থ রাজনীতিচর্চার লক্ষণ নয় বলে মন্তব্য করেন প্রকাশিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম কাজল।

অপর সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাউন্সিলে ভোট না দিয়ে গ্রুপিং কমিটি করা হয়েছিল। সেই সময় ভোট হলে আমি ১২ আনা ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতাম। সেই গ্রুপিংয়ের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমাকে ২নং সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। অথচ আমার কর্মীদেরকে করা হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুল হোসেন বলেন- এ রকম বিষয় গুলো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিসবাহুর রহমান বলেন, সব বিষয়ে আমরা অবগত আছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের স্বাক্ষরে দলের প্যাডে যে কমিটি পাঠানো হয়েছে, আমরা তা অনুমোদন করেছি। এখানে দুইটি প্রিন্টিং মিস্টেক হয়েছে। সজল বাউরীর স্থলে কাজল বাউরী এবং অন্য একটি নামের স্থলে শাহীন আহমদ হয়েছে। সেটা সংশোধন করা হবে। তিনি বলেন, মিফতা উদ্দিন কামাল যুবদল করতো এমন প্রমাণ পেলে তাকে বাদ দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের আগস্টে জুড়ী উপজেলা গঠনের পর একই বছরের নভেম্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর পনের বছর পর ১২ অক্টোবর ২০১৯ অনুষ্ঠিত হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। কাউন্সিল অধিবেশনে বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুল হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক পদে আটজন প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। তৃণমূলকর্মীরা ভোট চাইলেও তাদের দাবি পাশ কাটিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ মাসুক আহমদকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন। এর দেড় বছর পর ৭ এপ্রিল ২০২১ বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জেলা আওয়ামী লীগ অনুমোদিত কার্যনির্বাহী কমিটি ২০১৯-২০২২ প্রকাশ হয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডিজেএস-১২

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন