আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

বড়লেখায় ইউপি কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত নয়তো?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৫-০৯ ২২:৫১:৪৩

এ.জে লাভলু, বড়লেখা :: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ১৪ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই ইউনিয়নে আগুন লাগার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি।

ইতিমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত শেষে উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে তারা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে প্রতিবেদনে তারা ঘটনাটি ফরেনসিক ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের পুনরায় অধিকতর তদন্তে কারণ নির্ধারণের জন্য সুপারিশ করেছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বৈদ্যুতিক ত্রুটি, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত অবশিষ্টাংশ এবং বজ্রপাতের কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়নি। ফলে ইউনিয়নে পরিকল্পিতভাবে কেউ আগুন ধরিয়েছে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি অগ্নিকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে।

থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল সকালে উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ভবনে আগুন লাগে। ওইদিন সকাল ৮টার দিকে বড়লেখা থানার ওসি মৌলভীবাজারে যাওয়ার পথে দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিনকে জানান এবং ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সেমিপাকা ৫টি কক্ষ পুড়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে চেয়ারম্যানের কক্ষ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ডিজিটাল সেন্টার ও গ্রাম আদালতের কক্ষসহ পাঁচটি কক্ষের পাশাপাশি ইউনিয়নের ৫টি কম্পিউটার এবং গুরুত্বপূর্ণ সকল নথি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

ওইদিনই বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূসরাত লায়লা নীরাকে আহ্বায়ক ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান ও ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার অনুপ কুমার সিংহকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। পাশাপাশি ঘটনার দিন জেলা প্রশাসন থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক তানিয়া সুলতানাকে আহবায়ক এবং জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (স্থানীয় সরকার শাখা) মো. রুহুল আমীনকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যবিশিষ্ট পৃথক আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

এদিকে, ঘটনাটি তদন্ত শেষে গত ৩০ মে উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরানের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে তারা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত হতে পারেনি। তারা ঘটনাটি ফরেনসিক ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের পুনরায় অধিকতর তদন্তে কারণ নির্ধারণের জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছেন। ফলে পরিকল্পিতভাবে কেউ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে।

ঘটনার রাতে ইউনিয়ন পাহারার দায়িত্বে ছিলেন গ্রাম পুলিশ সদস্য অনিল সিংহ। তিনি বলেন, ‘রাতে আমি ইউনিয়নে ছিলাম। ঘটনার দিন সকাল সাতটার দিকে ইউনিয়ন থেকে বাড়িতে চলে যাই। এরপর হয়তো ইউনিয়নে আগুন লেগেছে। আমি বিড়ি-সিগারেট খাই না। আর ইউনিয়নেও কীভাবে আগুন লেগেছে ঠিক বুঝতে পারছি না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘যেদিন ইউনিয়নে আগুন লেগেছে সেদিন থেকে আমাদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। কারণ একটি ইউনিয়ন আগুন লেগে মূহূর্তেই পুড়ে গেল। এটি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। আর আমরা নিউজ দেখেছি যে ঘটনাটি তদন্তের পর একটি তদন্ত কমিটি বলেছে, বিদ্যুৎ, বিড়ি-সিগারেট বা বজ্রপাত থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়নি। তাহলে ইউনিয়নে আগুন ধরলো কীভাবে। নাকি কেউ পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে?’

দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন রোববার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে আমি বাড়িতে ঘুমিয়েছিলাম। সকাল আটটার দিকে বড়লেখা থানার ওসি মৌলভীবাজারে যাওয়ার সময় ইউনিয়ন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন। তিনি বিষয়টি ফোনে জানান। পরে স্থানীয়রাও বিষয়টি জানান। পাশাপাশি তারা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। খবর পেয়ে আমি দ্রুত এসে দেখি ইউনিয়ন কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘রাতে গ্রাম পুলিশের একজন পাহারায় ছিলেন। তিনি সকাল সাতটার দিকে বাড়িতে যান। এরপর হয়তো আগুন লেগেছে। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে তা বলতে পারবো না। ইউনিয়ন পরিষদে বাইরের কোনো লোক রাতে প্রবেশ করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। কারণ করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ। ইউনিয়নও বন্ধ ছিল। উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি বিদ্যুৎ, বিড়ি-সিগারেট বা বজ্রপাত থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা করেছে।’ তাহলে পরিকল্পিতভাবে কেউ আগুন দিয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক বলতে পারছি না। যেহেতু জেলা প্রশাসতের গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাটি তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে তারাই বলতে পারবেন আসলে কীভাবে সেখানে আগুন লেগেছে।’  

এব্যাপারে জানতে রোববার উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বড়লেখার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূসরাত লায়লা নীরার মুঠোফোনে যোগাযোগের করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বৈদ্যুতিক ত্রুটি, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত অবশিষ্টাংশ এবং বজ্রপাতের কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়নি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’    


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ৯ মে, ২০২১ / এ. জে. এল. / ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন