আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

যে মৃত্যু ব্যাথার অথৈ নীলিমা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-০৬ ০০:৩৭:১৬

আমিনুল ইসলাম রোকন :: ২২ বছর ধরে সোনালি ফ্রেমে মোড়ানো নীল এক কষ্ট এই নামকে ঘিরে। প্রিয় সেই মুখকে ঘিরে বিষাদ নীলিমায় ডুবে পুরো বংলা। সালমান শাহ- নামটি উচ্চারিত হলেই কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে হৃৎপিন্ড। অন্তহীণ শুন্যতা ঘিরে ফেলে সব। স্বপ্ন বিনাশী গভীর এক দীর্ঘশ্বাসও মাতম তুলে। দীর্ঘ সময় ধরে যে দুঃখে কাতর সিনেমা প্রিয় মানুষ। ৬ সেপ্টেম্বর আসলেই দুঃখটি আরো ঘনিভূত হয়। ব্যাথার অথৈ নীলিমায় ডোবেন কোটি ভক্ত।

নব্বই দশকের বাংলা রূপালি জগতের এক ধুমকেতুর নাম সালমান শাহ। দেশের সিনেমার ইতিহাসে যে ক’জন নায়ক সর্বমহলে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পেরেছিলেন সালমান নামটিই এর এক অনবদ্য ইতিহাস। সুন্দর মুখশ্রি, প্রাণবন্ত অভিনয় আর সজীব উপস্থিতি অল্প সময়ে সালমান ওঠেছিলেন অনন্য উচ্চতায়। ঢুকে গিয়েছিলেন কোটি ভক্তের অন্তরে অন্তরে-হৃদয় জুড়ে। যে কারনে সালমানের উপস্থিতি ২২ বছর বাদেও টিকে আছে মানুষের হৃদয়ের গহীন ভেতর।

লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের জগতে সালমান তৈরি করতে পেরেছিলেন এক অমলিন নিজস্বতা। রাজ্জাক-ববিতার সেই সাদাকালো দুনিয়ায় হুট করে সালমান এসে যেন রঙ ছড়িয়ে ছিলেন। কি যেন একটা ছিলো সালমানের মধ্যে, যে কারণে- দেশের পূর্ণদৈর্ঘ্যরে পুরো দৃশ্যই পাল্টে দিতে পেরেছিলেন তিনি। আর তারুণ্যের জুয়ার সৃষ্টি করে সালমান নামটি ঘিরে তৈরী করতে পেরেছিলেন এক মাত্রাহীন উন্মাদনা। প্রথম ছবি-কেয়ামত থেকে কেয়ামত দিয়েই মাত করে দিয়েছিলেন। দেশে হিন্দি সিনেমার রিমেক যেখানে রীতিমত হাসির খোরাক- সেখানে সালমান ছাপিয়ে গিয়েছিলেন মূল ছবির কুশীলব আমির-জুহি চাওলাকেও। খরায় তপ্ত ঢাকাই সিনেমায় যেন আর্শিবাদের বৃষ্টি হয়েই আবির্ভাব তাঁর। তাইতো প্রথম সিনেমার প্রথম গানের মতোই মঞ্জিল ভালোবাসায় দীপ্ত হয়ে উঠেছিলেন সালমান। মেধাবী আর বৈচিত্রময় অভিনয় দিয়ে বাংলা সিনেমাকে যেন নিয়ে গিয়েছিলেন স্বপ্নের ঠিকানায়।

সালমান ছিলেন সময়ের চেয়েও আধুনিক। দেশের মানুষ যেখানে ছিলো সিনেমাবিমুখ সালমান এসেই এই দৃশ্যের ‘ইউ টার্ন’ করতে পেরেছিলেন। জাদুর মতো সব ক্যারিশমা যেনো ছিলো তার মাঝে। অভিনয় দক্ষতার অনন্যতা দিয়ে সিনেমায় তুলেছিলেন ‘সালমান ঝড়’। সিনেমায় এক সরল যুগের শুদ্ধতাও এনেছিলেন তিনি। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে সোরগোল ফেলে দেওয়ার পর টানা ‘হিট’ ছবি উপহার দিয়ে অল্প সময়ে তিনি পরিণত হয়েছিলেলো স্বপ্নের নায়কে। তাই সবকিছু ছাপিয়ে সালমান নামটি এখনো মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে মানুষকে। সালমানের হাত ধরে সোনালি সময়ের পথে এগুচ্ছিল ঢাকাই সিনেমা। কিন্তু হঠাৎ পাল্টে যায় সব। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎই এক বজ্রপাত। দেশের সিনেমাকে সোনালি সময়ে নিয়ে যাচ্ছেন যে সালমান, সিনেমায় মানুষকে হাসাচ্ছেন-কাদাচ্ছেন যে সালমান, মানুষকে আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখাচ্ছেন যে সালমান, যে সালমান স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, হৃদয়ে দিচ্ছেন প্রেম-হঠাৎ সেই সালমানই চলে গেলেন অন্তহীন শূন্য জগতে। যে জগৎ থেকে কেউ ফেরে না কোনোদিন। সত্যি কি চলে গেছেন সালমান? আর কোনোদিনই কি ফিরবেন না তিনি? বিভ্রমে জড়ানো সালমান ভক্তদের মধ্যে এই প্রশ্ন হয়তো কিছুই না, আবার অনেক কিছু। কারণ সালমান চলে যাননি। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ তার না থাকা জুড়ে অধিক কিছু থেকে যাচ্ছে এ বাংলায়। তা হবেইবা না কেন- সালমান শাহ তো এমনই একজন, ‘যারে একজনমে ভুলার নয়।

পৃথিবীতে খুব কম খ্যাতনামা আছেন- মৃত্যুর পরও যাদের জনপ্রিয়তা ছিলো তুঙ্গে। সালমান নামে খ্যাত সিলেটর ছেলে ইমন সেই ক্ষণজন্মাদেরই একজন। যিনি মৃত্যুর দীর্ঘ সময় পরও আরো বেশী জনপ্রীয়। তার মৃত্যুও এক অন্তহীন রহস্য। যে মৃত্যুকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে সর্ব বিনাশী এক দুঃখও। সালমানশাহ হত্যা মামলা নিয়ে এখনো দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এই মহানায়কের মা নীলা চৌধুরী। অস্বাভাবিক এ মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে ২২ বছর ধরেই। তদন্ত ঘুরছে দপ্তরে দপ্তরে। পুলিশ থেকে র‌্যাব অতঃপর পিআইবি কেউ সুরাহায় আনতে পারছেননা রহস্যের এ মৃত্যু। গতবছর সালমানের হত্যা মামলার আসামী রুবী নামের এক মহিলার ভাইরাল ভিডিওতে সারা দেশে ঝড় ওঠে। হত্যা না আত্মহত্যা-নতুন করে দোলা দেয় পুরনো সেই প্রশ্ন। কিন্তু কিছুদিন পরই সব নিঃশব্দ হয়ে যায়। মৃত্যু রহস্যটি আরো রহস্যময় হয়ে উঠে ফের। তার মৃত্যু নিয়ে হয়তো রহস্যের শেষ হবে না। কিন্তু যুগের পর যুগ সালমান তরুণদের হৃদয়ে দোলা দেবেন। কেয়ামত থেকে কেয়ামত, স্বপ্নের পৃথিবী, সত্যের মৃত্যু নেই, সালমান অভিনীত এমন ২৭টি সুপার হিট সিনেমা দর্শকদের আপ্লুত করবে অনন্ত কাল। পথহারা ঢাকাই সিনেমাকেও আঙুল তুলে জানিয়ে দিবে সিনেমার স্বর্ণযুগ। আর এভাবে সালমান শাহ বেঁচে থাকবেন প্রাণ থেকে প্রাণে। হৃদয়ের গহীন ভেতর।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন