সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১১-১৫ ০৯:৫৭:৩২
মুনজের আহমদ চৌধুরী :: নির্বাচনকে সামনে মৌলভীবাজার জেলার রাজনীতির চিত্রটা দ্রুতই বড্ড ক্রীড়নক হয়ে উঠেছে। অন্তত নেতা নামধারীদের বাহ্যিক চরিত্র ক্ষনে ক্ষনে বদলের খেলা আগে এতটা উলঙ্গতায় আর নগ্নভাবে নিকট অতীতে দেখেননি এ জেলার মানুষ।
# কুলাউড়া অর্থাৎ, মৌলভীবাজার-২ আসনটি দেশের রাজনীতি সচেতন জনতা বহুল একটি আসন। এ আসনে দলের দুর্দিনে নিজের দল ত্যাগী দুই আদর্শ ব্যবসায়ীর আদর্শিক লাম্পট্যের জমজমাট খেলা শুরু হয়েছে । পরশু একজন সিলেটে বিএনপির নেতা হয়ে ড. কামাল হোসেনের মঞ্চে কোন মতে ঝুলে দাড়িয়ে ছবি তুলেছেন। আজ তিনি ধানের শীষের মনোনয়নের নিশ্চয়তা না পেয়ে বি. চৌধুরীর কোলে উঠে নৌকার মাঝি হতে মরিয়া। কারন, দেশে যত ধরনের নির্বাচন হয় তার তাতে অবশ্যই প্রতিদ্বন্দিতা করতে হয়।
অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামলীগের নামে, শেখ মুজিবের হুবুহু অনুকরনমুখী আদর্শপুত্র সিলেট, কুলাউড়া সব খানে এখন নিজের মার্কা চান ধানের শীষ। তারা ভুলে গেছেন , মানুষের চোখে বিশ্বাসের ভালবাসার আসনটি নৈতিকতা দিয়ে ধরে রাখতে হয়। একজন যখন বঙ্গবন্ধুর পুত্র ছিলেন তখনকার সে ওয়ান ইলেভেনে বঙ্গবন্ধু কন্যার বিপদে সাড়া দেননি। তখন কারাগার থেকে শেখ হাসিনা মানুষ পাঠিয়ে সাড়া পান নি। তাদের জানবার বাকী আছে, দম্ভ, অহংকার আর 'আমি'র আমিত্বের রাজনীতির দিন ফুরিয়ে গেছে।
# পাশের আসনে কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন গাছে নিজের ছবি ফেষ্টুন বানিয়ে ঝুলাতেন একজন। তার আগে ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন ছাত্রসংসদে ইসলামী ছাত্র শিবিরের জিএস প্রার্থী। নির্বাচন করতে আর হারতে ক্লান্তি, লজ্জা কোনটাই নেই তার। ক্ষমতার কাংখিত চেয়ারের দেখা আজো মেলেনি। এখন তিনি বেগম জিয়ার, তারেক রহমানের আদর্শের 'খাস' সৈনিক। জেলার নেতারা যে যতদিন কেন্ত্রীয় থাকেন, তখন তার ঢাকার বাসায় নেতা ফ্রি থাকতে পারেন। আরো বড় নেতাদের নিজের শিল্পের ক্ষমতায় পোষ মানাবার অদ্ভুত দক্ষতা এ শিল্পপতির। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ভোটে সরকারী দলের বয়সে ছোট কিন্তু ক্ষমতায় হাইব্রিড মায়ায় মাখামাখি মহরমে নির্বাচন করে গো-হারা হেরেছেন। কিন্তু, তার বর্তমান দলটির স্থানীয় পেশাদার রাজনীতিবিদ গুটিকয়েক স্থানীয় কিছু টাউটের আয়-রোজগারের অভাব। তাদের উনি কর্জ দেন, তাদের সাদা-সফেদ পাঞ্জাবীর পকেটে প্রায়ই ভালবাসার হাতটি ঢুকিয়ে দেন। ব্যাস আর কী লাগে ? কিচ্ছু না।
যতটি কথা লেখা উপরে, প্রত্যেকটি কথার, ফেষ্টুনের ছবি, দালালীর স্ক্রীনশট, বক্তব্যের ভিডিও এলাকার মানুষের ফেসবুকে আছে। কেউ কেউ তা আবার ইনবক্স করা শুরু করেছেন। কেননা, তাদেরও প্রতিপক্ষকে অনলাইনে কামড়াতে হবে। জিততে হবে মনোনয়ন যুদ্ধে।
মাল'দার নেতারা জেলার খুচরা, সকাল বিকাল বলয় আর তীর্থ বদলানো নেতার কাছ থেকে পদবি কিনে উপজেলায় ফ্রি বিলিয়ে আনুগত্য কেনেন। ফেসবুকে মাসোহারা দিয়ে লোক রেখে নিজের ছবি ছাপা-ছাপি করেন। ফেসবুকের কেনা লাইকের আত্ম বিশ্বাসে ঘুমের ঔষধ খেয়ে এমপি হবার দিবাসপ্ন দেখেন।
# এরকম মানুষগুলির ও এখন খালি একটা মার্কা লাগে। এরপর যেভাবে হোক ভোটে পাশ করতে হবে। এরপর এমন প্রানীরা সংসদে যাবে। তাদের হাতে নিরাপদ হবে দেশ। সমৃদ্ধ হবে আমার জনপদ! হায় রে দেশ, হায় রাজনীতি! লেখতে লেখতে বড়ো আক্ষেপ হয়। বুকের ভেতরে কষ্ট হয়। এ যে আমারই দেশ, আমার জনপদ। অথচ আমাদের শৈশবেও তো আমাদের রাজনীতিকরা আমাদের ভালবাসার নায়ক ছিলেন। কমলগঞ্জের প্রয়াত মো. ইলিয়াস এর মতো নীতিবান রাজনীতিক এ জেলায় এমপি হয়েছিলেন। বাস ড্রাইভার থেকে ৭০ এ এমপি হওয়া জুড়ীর মরহুম তৈমুস আলী সাহেবরা আমৃত্যু দল-আদর্শ বদলান নি। এ জেলার সন্তান প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী, জেলার উন্নয়নের রুপকার এম সাইফুর রহমান। সাবেক সমাজকল্যান মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সৈয়দ মহসীন আলী। তারা তো নৈতিকতা বেচেঁ দেননি এমপি হবার হাটে।
# আর কিছু লেখতে পারি না। কারন, কি-বোর্ডের, কলমেরও তো লজ্জা থাকে। তাদের সবার সাথে সামাজিক সম্পর্ক থাকবার দায় থাকে। সামাজিক জীব হয়ে বাস করবার বৃত্ত থাকে। ক্ষমতায় গেলে দেখে নেবার হুমকি থাকে।
কালকে যে বেচেঁ খেত ধানের শীষ, আজ সে-ই কিনবে নৌকা। এমপি হবেন তারা। জনগন তাদের কাছে খুব বোকা।
তবু লিখতে হয়। কাউকে না কাউকে সত্যিটা অন্তত বলবার অপরাধটি করে যেতে তো হয়। না হলে যে বিবেকের কাছে বড্ড অপরাধী থেকে যেতে হয়।
লেখক :: সাংবাদিক ও কলামিস্ট, লন্ডন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৫ নভেম্বর ২০১৮/ এমএসি/ আআ