Sylhet View 24 PRINT

নাহিদ ভাই, কিছু স্মৃতি কিছু কথা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-০৯ ০১:১০:৫০

আলী ফজল মোহাম্মদ কাওছার :: জননেতা নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। আমি উনাকে প্রথম দেখেছি ১৯৯৪ কিংবা ১৯৯৫ সালে আবার ভাই ছাত্র রাজনীতি করার সুবাধে আমাদের বাড়ীতে এক ইফতার মাহফিলে তখন খুব ছোট ছিলাম বলে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়নি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আমি তখন দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র তখন তিনি আমাদের গ্রামে এসেছিলেন নির্বাচনি প্রচারণার সময়।

আমাদের গ্রামে (বিয়ানীবাজারের শালেশ্বর) নির্বাচনী সভা শেষে তিনি আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রাম চারাবইয়ে গিয়েছিলেন। অনেকের সাথে সেই ছোট্ট আমি গিয়েছিলাম উনার সাথে। চারাবইয়ে নাহিদ ভাইকে একটি মাটির নৌকা উপহার দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেই নৌকাটি দিয়েছিলেন উনার নির্বাচনী জনসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য আমাকে। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সালের ৭ই জানুয়ারী পর্যন্ত মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। শ্রদ্ধেয় নাহিদ ভাই

আমাদের এই বাংলাদেশের শিক্ষা বিপ্লবের অগ্রদূত যিনি বাংলার শিক্ষার মান উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন। যার হাত ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে হয়েছে ব্যপক পরিবর্তন। আমার স্পষ্ট মনে আছে ২০০৯ সালে যখন আওয়ামীলীগ তথা মহাজোট সরকার গঠন করে তখন আমি একটি প্রতিবেদন পড়েছিলাম একটি জাতীয় দৈনিকে শিক্ষামমন্ত্রনালয় ৮৯% দুর্ণীতিতে নিমজ্জিত। প্রায় গলা পর্যন্ত ডুবে আছে দুর্ণীতিতে। সেই দূর্ণীতিগ্রস্থ একটি মন্ত্রণালয়কে নিয়ে তার পথ চলা শুরু হয়। তিনি দায়িত্ব নিয়ে দুর্ণীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছিলেন। বিভিন্ন প্রতিকুলতার সাথে যুদ্ধ করে তার পথ চলতে হয়েছিল। প্রশ্ন ফাসের মত নোংরা কাজকে প্রতিহত করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন।

তিনি একবার বলেছিলেন সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার জন্য। এও বলেছিলেন আপনাদেরকে ঘুষ না খাওয়ার কথা বলার সাহস আমার নেই। এনিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছে। একটি দুর্ণীতি গ্রস্থ মন্ত্রনালয়কে নিয়ে তিনি কি করতে পারতেন? সবদিক থেকে তাকে অসহযোগিতা করা হয়েছে। তার সুযোগ্য নেতৃত্ব, সাহসিকতা ও কঠোর পরিশ্রমে অনেক সফলতা এসেছে। অন্ধকারচ্ছন্ন শিক্ষা ব্যবস্থাকে তিনি আলোর পথ দেখিয়েছেন। এর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার উপর রেখেছেন আস্থা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিদান দিতে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তার কঠোর পরিশ্রমে যোগ্য নেতৃত্বে বছরের প্রথম দিন ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন বই পৌছে দেওয়া হয়। নির্বাচন থাকার পরও এবছর এর ব্যতিক্রম হয়নাই বিগত ১০ বছরের মত।

প্রথম যখন তার নেতৃত্বে বছরের প্রথম দিন বই দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয় তখন একশ্রেণী মুনাফালোভীদের স্বার্থে আঘাত লেগেছিল। তারা বই পুড়িয়ে দিয়েছিল, কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে ও দুরদর্শতীয় বছরের প্রথম দিন টিকই নতুন বই ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পৌছে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে মিডডে মিল চালু করতে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা। বাংলার আলেম সমাজের ৯৬ বছরের দাবী ছিল স্বতন্ত্র আরবী বিশ্ববিদ্যালয়। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে স্বতন্ত্র আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষানীতি প্রণয়নের সময় সবদলের পরামর্শে তিনি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিলেন। যা আমাদের দেশে ছিল বিরল ঘটনা। ২০১০ সালে এমপিও ভুক্তির সময় শুধু আওয়ামীলীগ এমপিদের রেফারেন্সে স্কুল, কলেজ এমপিও ভুক্ত হয়নাই। অনেক বিরোধী দলীয় এমপির রেফারেন্সেও অনেক স্কুল, কলেজ এমপিও ভুক্ত হয়েছিল। এনিয়ে মহান জাতীয় সংসদে একজন বিরোধীদলীয় এমপি তার প্রশংসা করেছিলেন। যা আমাদের দেশে বিরল ঘটনা।

পিএসসি/পিডিসি কিংবা জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষা তার নেতৃত্বে শুরু হয়েছে। এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই বোর্ড পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারে। এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের ভালো রেজাল্ট করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এর ফলে অনেক মেধাবীর সন্ধান পাবে বাংলাদেশ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যারা অনার্স মার্স্টার্স করেছেন তারা জানেন সেশন জটে পড়ে কত বছর হারিয়ে যায়। আমি নিজেও ছয় বছরে অনার্স সম্পন্ন করেছি। কিন্তু এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট কমেছে কেন জানেন? এই নাহিদ ভাইয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে।

কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় যেই মানুষটি বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তের জন্য এত পরিশ্রম করলেন তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু কেন? স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে তিনিই সিলেটের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী। আর কত বছর পর আমারা সিলেটিরা শিক্ষামন্ত্রী পাব বলতে পারিনা। উনি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে দেখতাম সিলেটে আসলে দেখতাম শত শত মানুষ লাইন ধরে থাকত উনার সাথে দেখা করার জন্য উনার সাথে ছবি তোলার জন্য এখন দেখলাম কোন মন্ত্রণালয় না পাওয়া তাকে নিয়ে ফেইসবুকে পোষ্ট নেই। তার সাথে দেখা করার কোন লাইন নেই। তার বিশ্বস্ত কয়েকজন কর্মী ছাড়া কেউ আর তার কথা বলছেনা।

সবাই ব্যস্ত নতুন মন্ত্রীদের সাথে ছবি তুলা নিয়ে নতুন মন্ত্রীদের গুনগান গাইতে। সবাইকি উনার সুখের দিনের সাথী। নুরুল ইসলাম নাহিদকে নিয়ে যে যাই বলুক বাংলাদেশ যতদিন থাকবে উনার নাম ততদিন থাকবে। সমালোচকরা যে যাই বলুক নুরুল ইসলাম নাহিদ শুধু একটি নাম নয় তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি আমাদের সিলেটের আলোকিত সন্তান। তিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। তিনি আমাদের শিক্ষা বিপ্লবের অগ্রদূত। সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) চার চার বারে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। শতায়ু হোন শ্রদ্ধাভাজন নাহিদ ভাই।

লেখক: কলামিস্ট ও চাকুরীজীবি, সিলেট।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.