আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

নিজের টাকায় পদ্মা সেতু হলে, মাউন্ট এলিজাবেথ কেন হবে না?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-০৭ ০১:১৪:১৫

মাউন্ট এলিজাবেথ বানানো সমস্যা না। মাউন্ট এলিজাবেথের সমপরিমাণ অর্থ খরচ করতে বাঙালি প্রস্তুত তো? মাউন্ট এলিজাবেথে গিয়ে যে মানসিকতা দেখায় সেটা এখানে দেখাতে প্রস্তুত তো?

চিকিৎসা বলতে ত বাঙালি ফ্রি বস্তু সদৃশ বোঝে। ১০ লাখের গাড়ি কিনে আরাম করতে চায়, কিন্তু সারাজীবন চিকিৎসার পেছনে ১০ লাখ কেন, ১ লাখ ও খরচ করতে চায়না।

চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ১৮ দিনের মাউন্ট এলিজাবেথ হস্পিটালে অবস্থানের খরচ ছিল ৩২ লাখ টাকা। এত টাকা খরচের পরেও কিন্তু উনি বাঁচেননি। এবং টাকা পরিশোধের আগে কিন্তু ওরা লাশ ছাড়েনি। আমাদের দেশে ইউনাইটেড এপোলোতে এই কাজ করলে কি হতো ভাবুনতো? উনার ব্রেন ডেথ ছিলো শেষ ৬ দিন। সে ৬ দিন ও আইসিইউতে ছিল।ওই ৬ দিনের বিল ছিলো সাড়ে ১১ লাখ। আমাদের দেশে একই ভাবে থাকলে বলতি “রোগী মারা গেছে, টাকা খেয়ে মরা রোগীকে আইসিইউতে রাখসে”

মাউন্ট এলিজাবেথ না হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করে দিলেন (ওটা কিন্তু সরকারী না, প্রাইভেট হাসপাতাল) কিন্তু তারপর?? ওখানের খরচ বিয়ার করতে বাঙালি প্রস্তুত ত? মানসিকতা সিঙ্গাপুরের মত করতে পারবে কি? ডাক্তারের বেতন সিঙ্গাপুরের মত দিতে পারবে? ফ্যাসিলিটি, নার্স, ওয়ার্ড বয় মেইনটেইন -সেটাই বা পসিবল কি মাউন্ট এলিজাবেথের মত?

কথায় কথায় অনেকেই বলে ডাক্তারদের এত লোভ কেন, এত রোগী দেখে টাকা কামানোর কি দরকার? ভুলে যায় এটা তার পেশা। এবং সরকারীভাবে তার বেতন যতসামান্য।

আমার অন্য পেশার বন্ধুদের মত আমিও ক্লাসের প্রথম দিকের ছাত্র ছিলাম। আমার বিকাশের মার্কেটিং হেড বন্ধু কিংবা গাড়ি ব্যবসায়ী বন্ধু কিংবা ইউএসএতে চাকুরী করা বন্ধুর মত আমার ও ইচ্ছা উন্নত জীবন যাপনের। ডাক্তারী আমার পেশা প্রথমে, সেবা বাই প্রোডাক্ট। মনে রাখতে হবে আমি পেশা হিসেবে ডাক্তারি চয়েস করেছি, পাশাপাশি সেবা করা হবে, মানুষের দোয়া পাবো- এটা জানতাম।

শুধু দোয়ার আশায় থাকলে মসজিদের ইমাম হয়ে দোজাহানের নেকীই হাসিল করতাম। ডাক্তার প্রাইভেট চেম্বারে দেড়শ রোগী কেন দেখে এটা নিয়ে সবার কমন জিজ্ঞাসা- এত টাকা দিয়ে কি করবে? এভাবে কি ভালোমত দেখা হয়, ডাক্তারের মানসিক অবস্থা ও ভালো থাকে? কিন্তু সেই ডাক্তার সকালে সরকারি হাসপাতালে আউটডোরে যখন দেড়শ রোগী দেখে তখন বাঙালি শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই চুপ! কি হিপোক্রেট আমরা! আমিও আমার চাকুরী টাইমের পরে চেম্বার করে টাকা কামাতে পারি। যতদিন না আলাদা বেতন কাঠামো গড়ে উঠে চিকিৎসকদের। বাঙালি ১০০০ টাকার ডমিনোজ খেলে পেটে ব্যাধি বাঁধালে সেটা সারাতে চায় ফ্রি তে! ডুয়াল পার্সোনালিটি! অদ্ভুত! আগে ভাবতাম অশিক্ষিত গোষ্ঠীই এটা ভাবে। এখন দেখছি শিক্ষিত গোষ্ঠীও এর বাইরে নয়।

কথায় কথায় ডাক্তার গ্রামে যায় না ধুয়া তোলা হয়, কয়টা ডাক্তারকে সরকারী খরচে বাইরে পড়তে পাঠানো হয়?

মাতৃ মৃত্যুহার কমানো, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, এমডিজি সাফল্য-এগুলা ত আসমান থেকে ফেরেশতা এসে করে যায় নাই।

সিঙ্গাপুরের মত হাসপাতাল চাইলেই হবেনা, সাথে সিঙ্গাপুরের ডাক্তারদের মত এখানকার ডাক্তারদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে। কারণ মানুষ তার কম্ফোর্ট জোনের বাইরে কোন কাজ খুব সূচারুভাবে করতে পারেনা।

আর সবার আগে ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নেবার জন্য যে দুর্নীতিটা করেন, আল্লাহর ওয়াস্তে ওইটা আগে বন্ধ করেন। মনে করবেন স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বন্ধের প্রথম ধাপটা আপনিই শুরু করলেন।

কারণ, চ্যারিটি নিজের বাড়ি থেকেই শুরু করতে হয়।

লেখক : ডা: মারজুক আল তুহিন। এমবিবিএস, এমএস (রেসিডেন্ট), বিসিএস (স্বাস্থ্য)

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন