আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

ব্যাডমিন্টন এবং আমি একজন ফখরুল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-০৭ ১৮:১৪:৩৪

মো. ফখরুল ইসলাম :: বিলেতে ‘ফখরুল ভাই ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট’ আমাকে ক্রীড়া জগতে এক অন্যরকম পরিচিতি এনে দিয়েছে। আমি বরাবরের মতো কৃতার্থ; কৃতজ্ঞ আমার ভালোবাসার ব্যাডমিন্টন জগত এবং ব্যাডমিন্টনপ্রেমী খেলোয়াড়, দর্শক, কলাকুশলী এবং আয়োজকদের কাছে। ব্যাডমিন্টনকে ঘিরে যে কোন সুখবর আমাকে যেমন আনন্দ দেয়
ঠিক তেমনি ব্যথিত হই ব্যাডমিন্টনের যে কোন অযত্ম দেখলে। ব্যাডমিন্টন এবং ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় আমার অনুভুতির এক বৃন্তে অত্যাবশ্যক দুই ফুল। পরিচর্চা করতে ভালোবাসি ব্যাডমিন্টন। শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় আমার মন মস্তিষ্কে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। সুতরাং খেলোয়াড়দের সুখ, দুঃখ, পছন্দ-অপছন্দের প্রশ্নে আমার বিবেক নাড়া দেয়। সঙ্গত কারণে আজকের লিখনীর অভিপ্রায়।

প্রথমেই যে কথাটি বলে নিতে চাই, ইনডোর গেমসের মধ্যে ব্যাডমিন্টন নিঃসন্দেহে এক অন্যতম বিনোদনের খেলা হিসাবে বিশ্বে স্থান করে নিয়েছে সে কথা নিঃসন্দেহে আপনারা আমার সাথে একমত পোষন করবেন। দুঃখের বিষয় এই খেলা এবং খেলোয়াড়দের প্রতি বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন যতটুকু যতœবান বা দায়িত্বশীলতা দেখানো উচিত তার সিকি ভাগ কি আদৌ প্রতিফলিত হচ্ছে? জানি না এর পিছনে ফেডারশনের উদাসিনতা নাকি সরকারের (ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের) সহযোগীতার পর্যাপ্ততার অভাব? প্রশ্ন হয়তঃ নিরবে নিভৃতে সদুত্তোরের অপেক্ষায় বহমান থেকে যাবে! তবুও আমার বিবেকের তাড়নায় সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে দুটি কথা না বললেই নয়।

প্রথমতঃ খেলোয়াড়দের আপদকালীন সময় অর্থাৎ অসুখ বিসুখ কিংবা বিপদ আপদে অথবা দুর্ঘটনায় যেমন তাদের পাশে সহযোগীতার জন্য যেমন কেউ দাঁড়াবার নেই। আবার একইভাবে তাদের ন্যায্য দাবির প্রতি নেই সংশ্লিষ্টদের সহানুভুতি। বছরে মাত্র তিন মাস তাদের পেশাদারিত্বের মূল্য পেয়ে থাকলেও বছরের বাকি ৯ মাস পেশাদারিত্ব অক্ষুন্ন রাখতে তাদের অনুশীলন অব্যাহত রাখতে হয়। আমরা জানি ব্যাডমিন্টন অত্যন্ত ব্যয়বহুল খেলা অথচ তাদের ব্যয়ের নূন্যতম আর্থিক সাপোর্টের কোন ব্যাবস্থা ফেডারেশন করতে ব্যর্থ। এতে করে বছরের ৩ মাসের উপার্জন বাকি ৯ মাসের অনুশীলনে হাওয়া। আমাদের ভাবতে হবে তাঁদের জীবন জীবিকার বিষয় নিয়ে। বিনোদন এবং সুস্থ্য মননের বিকাশে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাঁদের হয়ে আমাদের ভাবা নৈতিকতারই পরিচায়ক বলে আমি বিশ্বাস করি। সেই বিবেচনায় একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার জোর দাবি আপনারা খেলোয়াড়দের বছরব্যাপী ফ্রি অনুশীলনের ব্যাস্থা নিন যা সময়ের দাবী।

দ্ধিতীয়তঃ আউটডোরে ব্যাডমিন্টনের মৌসুম প্রায় শেষ। নেশা কিংবা পেশা বা ভালোবাসা যাই বলেন বিলেতে বসেও দেশের প্রায় সব কটি খেলা টেকনোলজির আর্শিবাদে উপভোগ না করে চায়ের কাপে চুমুক নয়। উপভোগ করেছি; আনন্দে উদ্বেলিতও হয়েছি আবার কিছু বিষয় আমাকে পীড়া দিয়েছে যা আমি প্রকাশ না করলে যেন অবিচার হয়ে যায়। খেলোয়াড়দের হায়ার করে নিয়ে বিনোদন নিশ্চিত করা যা খেলার পূর্বশর্ত। খেলা এবং খেলোয়াড় বিরাট দর্শকের প্রধান আকর্ষন। কিন্তু দৃশ্যতঃ যা মনে হলো খেলার প্রতি আকর্ষন আর দরদ থাকলেও কেন জানি মনে হলো খেলোয়াড়দের প্রতি আয়োজকরা কিছুটা উদাসিন। যুগের পরিবর্তনে বিশ্বে ইন্টারন্যাশনাল রুল ফলো করা আয়োজকদের বিচক্ষণতা বা পরিপক্ষতা প্রমান করে। কিন্তু তা প্রতিয়মান হয়নি। দুঃখিত! আশা করছি আমার গঠনমূলক সমালোচনা বা দাবীগুলো আপনারা (সংশ্লিষ্টরা) ইতিবাচকভাবে নিবেন। আসল কথায় আসা যাক, যেখানে তিন গেইমের মাধ্যমে খেলার জয় পরাজয়ের বিধান বিশ্ব জুড়ে সেখানে ৫ গেইমের বিধান খেলোয়াড়দের হয়রানির শামিল বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। এতে করে খেলোয়াড়রা যথাযথ নৈপুণ্য প্রদর্শণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে শারিরিক সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে বিশাল দর্শকদের সামনে। অথচ অপ্রিয় কথাটিই বলতে হচ্ছে, শ্রম আর পারিশ্রমিকের অসঙ্গতি খেলোয়াড়দের হতাশ করেছে বলে আমি মনে করি। আয়োজকদের প্রতি আমার আহ্বান আয়োজনকে স্বার্থক করতে খেলা, খেলোয়াড় এবং দর্শকদের আপনাদের বিবেচনায় রাখুন।

সর্বোপরি খেলোয়াড়দের প্রতি আপনাদের সহানুভুতি, সম্মান, শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে আমার প্রাণের খেলা ব্যাডমিন্টনকে বাংলাদেশে স্বমহিমায় গৌরবদীপ্ত করে ঠিকিয়ে রাখতে আপনাদের আন্তরিক সহযোগীতা প্রত্যাশা করছি। মনে রাখবেন সুস্থ্য সুন্দর সমাজ গঠনের অঙ্গিকারে খেলাধুলাই প্রাণ। সুস্থ দেহ-মন, সুস্থ সমাজ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
‘সুস্থ দেহে সুস্থ্য মন, সুন্দর দেহে সুন্দর মন’ হোক আজকের প্রতিপাদ্য।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন ইউকে

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ০৭ মার্চ ২০১৯/ শাদিআচৌ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন