আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

নারী দিবস ও নাড়ির বিষ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-০৮ ১১:০৬:২৪

ফরিদ উদ্দিন :: আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ দিবসের কারণ, তাৎপর্য নিয়ে নতুন বিবরণ প্রয়োজন দেখছিনা। যেটা দেখছি নারীদের নারীদের নাগরিক নিরাপত্তা, নারীত্বের নাশকতার ঠেকানোর অভাব। প্রজন্মের পিছনে গেলে একটা মনস্তাত্ত্বিক নাশকতা দেখা যায়, যেমন একটা বাক্য " নারী অবলা " অবলা অর্থে আমরা বুঝি, অদক্ষ,অবুঝ, বলহীন, অপদার্থ।এসব শব্দচালে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে পুরুষদের দৃষ্টি ভঙ্গিতে গেথে আছে নারীরা শো পিসের মত বস্তু বিশেষ। এই ভাবনাটা যুগ যুগ ধরে নারীদের বেড়া দিয়ে রেখেছে। আসলে অবলা শব্দ দিয়ে সুকৌশলে এ মনস্তাত্ত্বিক বেড়া দেওয়া হয়েছে। অথচ নারীদের বল,ভাবনা, পুরুষদের চেয়ে কম নয়। পৃথিবীতে অসংখ্য নারী নেতৃত্ব আছে অতীতেও ছিল। পৃথিবী বাদ দিলাম। বাংলাদেশের প্রধান ও একজন নারী শুধু দেশপ্রধান নয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বনেতাদের সারিতে জায়গা করে নেওয়া তোখড় একজন নারী। কিন্তু তার বেলায় " অবলা" শব্দটি খাটে না কেন? কারন তিনি মেধায় তোখড়, সাহসী ও দৃঢ় একজন।

দুঃখের বিষয় এই বিশ্বমানের নারী প্রধানমন্ত্রীর শাষন আমলেও নারীদের নিরাপত্তার অভাব। অথচ নারী সুরক্ষার জন্য বিশেষ আইন থাকা সত্ত্বেও নারীদের নাক কাটা আটকানো যাচ্ছে না। কারন অনেকগুলো কিন্তু আমি মনে করি নারীদের ঐ মনস্তাত্ত্বিক বেড়া ও নারীদের প্রতি পুরুষদের অসহযোগীতা। একজন নারী যখন কোন অঘটনের শিকার হয় সে প্রতিরোধ বা বিচারের ভাবনা করতেই প্রথম বাধা তার পরিবার যেখানে অধিকাংশ পরিবার কর্তাদের সিদ্ধান্ত থাকে " অঘটন ঘটে গেছে চুপ থাকো থানা পুলিশ করে আর ইজ্জত মেরো না। অথচ উল্টোটা হলে সমাজের ইজ্জতটা দিন দিন বাড়ত। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ ঘটনা বেড়েই চলছে নাবালিকা থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষিতা হয়েছেন। কিন্তু কেন? কারনটা হচ্ছে নারী সুরক্ষা ব্যবস্থা ও পারিবারিক ভয়। ইজ্জতের ভয় সমাজের ভয়, প্রানের ভয়। অথচ চিত্রটা যদি উল্টো হত? যেমন একজন পুরুষ যদি ভাবত নারীদের যে কোন বে-আইনী কিছু করলে পারিবারিক চাপের ভয়, সমাজের ভয়। জীবনের ভয়,আইনের ভয়। হুম, এ ভয়টা পুরুষ মগজে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই নারী সুরক্ষা সম্ভব।

নারীদের ব্যাপারে যথেষ্ট শক্ত আইন আছে যেমন বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ সংশোধিত ২০১৩ অনুযায়ী এসব অপরাধ প্রমাণিত হলে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে অর্থদণ্ডের বিধান।
এই শাস্তিগুলো কিন্তু তুড়ি মেরে উড়তে দেওয়ার নয় কিন্তু তাও নারীর প্রতি নারকীয়তা আটকানো যাচ্ছে না কারন কি? কারনটা হল অপরাধীকে ঐ সব শাস্তির মুখোমুখি করতে প্রথম ধাপেই অনেক নারী আটকে যায়। পুর্বে উল্লেখিত ভয়গুলোর কারনে।

আমার অভিজ্ঞতাই বলি, কোন কোন সময় নারী নির্যাতনের সংবাদ সংগ্রহে গেলে দেখা যায় ঘটনা ঘটেছে কিন্তু নির্যাতিতার পরিবার স্বীকার করে না এড়িয়ে যায় বা স্বয়ং নির্যাতিতাও অস্বীকার করে। কোন কারনে স্বীকার করলেও তার পরিবারের নানা অনুরোধ আকুতিতে সংবাদ করা হয়না, থানা পুলিশ কে জিজ্ঞেস করা হলে প্রায় তাদের উত্তর থাকে " অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে" অথচ নির্যাতনের শিকার হয়েও ভিকটিম অস্বীকার করে কিছু হয় নি! কারন কিন্তু ঐ নানা ভয়। অথচ এসব ভয় কাটানো ব্যবস্থাও সরকার করে রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল প্রভৃতি। সুতরাং এটা পরিস্কার যে নারীদের নাগরিক সুরক্ষার জন্য প্রথম ও শেষ ধাপ পর্যন্ত খাপ খাওয়া উদ্যোগ করাই আছে। কিন্তু নেই পুরুষদের ঐ মনস্তাত্ত্বিক বেড়া ভাঙ্গার বল সেখানেই নারীরা অবলা থেকে যায়। আসুন উল্টো চিত্রে একটা কল্প নাট্য দেখি।

" আপনার কোন নাবালিকা বা বৃদ্ধা নির্যাতনের শিকার হলো আপনি প্রথমেই চক্ষুলজ্জা ঝেড়ে তার চিকিৎসা ব্যবস্থা করান তার পর থানায়, আদালতে যান উল্লেখিত সংস্থাগুলোর সহায়তা নিন সাংবাদিকদের জানান নির্যাতনকারীর নাম,বিবরণ ছবি দিন, এপর্যন্ত এসে সমাজের বা আপনার নিকটবর্তীদের কিছু মনস্তাত্ত্বিক খোচা শুনতে হতে পারে তাতে নিরুৎসাহি না হয়ে মামলা চালিয়ে যান। নির্যাতিতা কে মানুষিক শক্তি দিয়ে যান গৃহ বন্দি না করে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে দিন। এবং আপনার অভিযোগ প্রমান হওয়া পর্যন্ত থামবেন না। দেখবেন অপরাধীর শাস্তি হবেই। হুম কল্পনাট্য শেষ। এবার দ্বিতীয় কল্পনাট্যে দেখুন এরকম কিছু লড়াই চললেই নারীদের সুরক্ষা সুরক্ষিত হবেই। অবলা নারী সবলে সবলতা পাবে।

আসুন মনস্তাত্ত্বিক নাড়ির বিষ ঝেড়ে ফেলে নারীদের নাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করি।

লেখক: সাংবাদিক

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন