Sylhet View 24 PRINT

কথাকলি’র ‘কোর্ট মার্শাল’ আমাদের চেতনার বাতিঘর

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-১২ ১২:০১:১১

শামসুল ইসলাম শামীম :: ‘Law is the Command of the Sovereign’ বাক্যটি সকল মানুষই ঘুণা করেন প্রকাশ্যে কিস্তু ধারষ করেন গোপনে। এ অবস্থা সবকালে সবদেশেই ঘটে। আমাদের দেশেও মাঝে-মাঝে আইন হয়ে উঠে বে-আইনের প্রকাশ্য পোষাক। বিচার হয়ে উঠে অবিচারের আইনসিদ্ধ প্রতিলিপি।’- এই পেক্ষাপটেই গড়ে উঠেছে ‘কোর্ট মার্শাল’র শরীরসৌষ্ঠব। সিলেটের থিয়েটার আন্দোলনের অন্যতম অগ্রবর্তি ‘যোদ্ধা’ ‘কথাকলি সিলেট’র ২৪তম প্রযোজনা এই কোর্ট মার্শাল। মাত্র পক্ষকালেরও কম সময়ের ব্যবধানে নাটকটি রোববার সন্ধ্যায় ফের সিলেট নজরুল অডিটোরিয়ামের মঞ্চে এলো শুধুমাত্র দর্শকঅনুরোধে।

মুক্তিযুদ্ধ এদেশের মুক্তিপাগল মানুষের অনন্য গৌরবোজ্জল ইতিহাস। এই গৌরবদিপ্ত ইতিহাসের এক অনঙ্গ উপাখ্যান ’বীরাঙ্গণা’। স্বাধীনতার অনেক বছর পরও এদেশে বীরাঙ্গণাকে ‘বেশ্যা’ হিসেবে প্রতিয়মান করার চেষ্ঠা করে একাত্তুরের পরাজিত শক্তি এবং তাদের কুলাঙ্গার উত্তারাধিকার। এদেশের স্বাধীণতা এলেও ঘুচে যায়নি শ্রেণি সংগ্রামের ইতহাস। তাই দলিত বা শ্রেণি সংগ্রামে পরাজিত মানুষের লাঞ্চণার দিন শেষ হয়নি আজও। কোর্ট মার্শালে এমনই এক চরিত্র আবকবর। শ্রেণি সংগ্রামে পরাজিত শ্রেণির প্রতিনিধি সিপাহী আকবরের প্রতিবাদই কোর্ট মার্শালের মূল উপজীব্য।

কোর্ট মার্শালের মূল কাহিনী নির্মাতা স্বদেশ দীপক। যার রূপান্তর করেছেন এস এম সোলায়মান। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যজন আমিনুল ইসলাম লিটন। শামসুল বাসিত শেরোর অসাধারণ মঞ্চ পরিকল্পনায় পুরো মঞ্চই হয়ে উঠেছিলো একটি বিচারালয়। কোর্ট মার্শালের রীতিনীতি আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জানা না থাকলেও তার একটি ধারনা দিয়ে গেছে নাটকটি।

কর্ণেল রাব্বী চরিত্রে আমিরুল ইসলাম বাবুর অভিনয় ছিলো অত্যন্ত সাবলিল। নাটকটি চলাকালে বুঝাই যায়নি, পোষাকের ভেতরের মানুষটি আমাদেরই প্রিয় নাট্যজন। প্রশান্ত দে প্রলয় একজন পরীক্ষিত এবং নন্দিত মঞ্চাভিনেতা; অনন্ত দর্শক হিসেবে আমি তাই মনে করি। কোর্ট মার্শালের পুরো ব্যাপ্তি জুড়েই মঞ্চে ছিলেন তিনি। গার্ড চরিত্রের এই কুশীলব তার এক্সপ্রেশন এবং মাত্র গোটা পাঁচেক সংলাপে দর্শকচিত্ত হরণ করতে সক্ষম হয়েছেন। মেজর এফ এ খান চরিত্রে সৈয়দ ফয়সল আহমেদ এবং ক্যাপ্টেন ডা. রতœা চরিত্রে রোহেনা আক্তার দীপু আরো উজ্জল হতে পারতেন, অন্তত দর্শক হিসেবে আমার তাই মনে হয়।

মেজর আরিফ চরিত্রে আমিনুল ইসলাম লিটন এবং সুবেদার চরিত্রে অরিন্দম দত্ত চন্দনের সাবলিল অভিনয় ছিলো দৃষ্ঠিকাড়া। নাটকের মূল উপজীব্য হিসেবে সিপাহী আকবরের চরিত্রে নীলাঞ্জন দাশ টুকু শুরুর দিকে কিছুটা নিষ্প্রভ হলে শেষের দিকে জ¦লে উঠেছেন অনন্য সাধারণ স্বকীয়তায়।

দর্শক দৃষ্ঠির মূল ’টার্গেট’ ছিলেন মেজর মাহমুদ। মেজর মাহমুদ চরিত্রের কুশিলব আনোয়ার হোসন রণি অনবদ্য অভিনয়শৈলিতে মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। পুরো মঞ্চজুড়ে তার সাবলিল বিচরণ আর মন্ত্রমুগ্ধ অভিনয় আনোয়ার হোসেন রণিকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

নির্দেশক হিসেবে আমিনুল ইসলাম লিটন যেমন স্বীয় মেধা আর প্রজ্ঞার পরিচয় রেখেছেন, তেমনি আলোক প্রক্ষেপণে হুমায়ুন কবির জুয়েলের আলোকমুন্সিয়ানা আর আবহ সঙ্গীত প্রয়োগে কমলজিৎ শাওনের দক্ষতা দর্শক নন্দিত হয়েছে।

থিয়েটারের একজন রোজকার দর্শক হিসেবে দাবি করে বলতে পারি, এ পর্যন্ত কথাকলির যে ক’টি প্রযোজনা মঞ্চে দেখেছি তার মধ্যে সাফল্যের মাপকাঠিতে কোর্ট মার্শাল সবক’টি প্রযোজনাকে ছাপিয়ে গেছে, ছাড়িয়ে গছে।

লেখক: সিলেট ব্যুরো প্রধান, বাংলাভিশন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১২ মার্চ ২০১৯/শাইশা/ইআ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.