আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

হাসপাতাল না জাদুঘর? প্রয়োজন না প্রসাধন!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-০৫ ২২:১০:২৯

কাশমীর রেজা :: হাসপাতাল না জাদুঘর বিতর্কে বিভক্ত সিলেট। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা আবুসিনা ছাত্রাবাসের স্থলে একটি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর এ বিতর্ক শুরু হয়। হাসপাতাল প্রয়োজন জীবন বাঁচাতে, জাদুঘর প্রয়োজন ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধারণ করতে। দুটির কোনটিরই প্রয়োজনকে অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রশ্ন উঠে যখন একটির পরিবর্তে আরেকটি চাওয়া হয়। অর্থনীতির ভাষায় এটাকে বলি Opportunity cost বা সুযোগ ব্যয়। এটি তখনই ঘটে যখন একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি বাছাই করতে হয়।

আমি অবশ্যই জাদুঘর চাই তবে বিনিময়ে একটি ২৫০  শয্যার হাসপাতালকে হারাতে চাই না। হাসপাতাল বাঁচিয়ে রেখে যদি জাদুঘর করা যায় আমি চাই আবুসিনায় জাদুঘরই হোক। তবে অবশ্যই হাসপাতালের পরিবর্তে নয়।

যারা এসব সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন তারা নিম্ন আয়ের মানুষ। বড়লোকের জন্য তো প্রাইভেট ক্লিনিক বা দেশের বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ আছেই। ২৫০ শয্যার একটি হাসপাতালে ৩৬৫ দিনে (২৫০x৩৬৫) ৯১ হাজার ২৫০ জন সেবা পাবেন। সিটে, নিচে মিলিয়ে বছরে অন্তত দেড়লাখ রোগী সেবা পাবে এটা বলাই যায়। তাই হাসপাতালটি না হওয়া মানে বছরে দেড়লাখ রোগীর ভোগান্তি।  যাদের কারও কারও হয়তো অকাল মৃত্যুই হবে নিয়তি। হাসপাতালের পরিবর্তে জাদুঘর চাইলে এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে আমরা কী জবাব দেব? অবশ্য জবাব চাইতে এরা আসবেও না। এমন সচেতন তো তারা নন। এমন সাহসও তাদের নেই হয়তো। হাওরের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কথা বলি বলে এখানে কথা বলা জরুরী মনে করছি।

একটু ভাবুনতো, যারা এই ভবনটি গড়েছিলেন, আর্তমানবতার সেবাই কি তাদের উদ্দেশ্য ছিল না? যারা গুটিকয়েক রোগীকে সেবা দিয়ে সুখ পেতেন তারা যদি আজ শুনতে পারতেন তাদের গড়া এই প্রতিষ্ঠানে এখন লক্ষ লক্ষ রোগী সেবা পাবে, তারা কতটা খুশী হতেন! আজকের পরিস্থিতিতে তাঁরা কি হাসপাতাল চাইতেন না যাদুঘর চাইতেন? কাদের মিছিলে যোগ দিতেন তারা?

যারা হাসপাতালের পরিবর্তে জাদুঘর চাইছেন তারা সিলেটের সবেধন নীলমণি ওসমানী হাসপাতালে যান কী না জানি না। এর শিশু ওয়ার্ডে এক বিছানায় কখনো ৫ জন রোগীও রাখা হয়।  অনেকের নিজের বাচ্চা চিনে নিতেও ভুল হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। এসব শিশু কিংবা অনাগত শিশুদের চিকিৎসার অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত করছি নাতো!

যারা হাসপাতালের পক্ষে বলছেন কিংবা জাদুঘরের পক্ষে বলছেন তারা সবাই সমাজের গণ্যমান্য মানুষ। আমি জানি তারা কেউই কোন ব্যক্তিগত লাভের জন্য কথা বলছেন না। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের পছন্দও করি। তাদেরকে অনুরোধ করব, আসুন, পারলে জাদুঘর ও হাসপাতাল দুটোই বাস্তবায়ন করি। যদি তা না হয় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতালে সেবা নেওয়ার সুযোগ থেকে সিলেটের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করবেন না। না হয় এর দায় আমাদের নিতে হবে।

*লেখক: হাওর গবেষক।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন