আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ক্যাম্পাস থেকেই বন্ধুত্ব!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-০৮ ১৩:১১:০৪

মো. শাহরিয়ার রহমান ::  বন্ধুত্ব, এই শব্দে গঠনগত জটিলতা যতখানি, সম্পর্কটা এর চেয়ে আরও অনেক বেশি সহজ আর সুন্দর। বিশ্বাস, ভালোবাসা, স্নেহ এসব একসাথে নিয়ে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব কারো কাছে অনেক ভারী আর কারো কাছে ভরসার শব্দ।


বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর যৌবনদীপ্ত তরুন-তরুনীরা পায় স্বাধীনতার স্বাদ, পায় বন্ধু নির্বাচনের একচেটিয়া অধিকার। সমমনাদের নিয়ে গঠিত হয় বন্ধুবৃত্ত।


দেশের ভিন্ন-ভিন্ন জায়গা থেকে আসা, ভিন্ন মনমানসিকতা, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ধর্মের মানুষ গুলো এক হয়ে যায় ক্যাম্পাসের বন্ধুত্বে। সম্ভবত এখানেই  ক্যাম্পাসের বন্ধুত্ব এর সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা। এই বন্ধুত্ব মানুষকে জাতি-ধর্ম-বর্ণের উর্দ্ধে উঠতে শেখায়, শেখায় সহিষ্ণুতা।


গণরুম থেকে শুরু করে ক্লাস ফাকি, প্রক্সি, অগোছালো আড্ডা কিংবা হৃদয় ভঙ্গের সাথী হয় ক্যাম্পাসের এই বন্ধুগুলো।এদের হাত ধরেই বাস্তবতার মুখোমুখী হয় সদ্য যৌবন প্রাপ্ত প্রান।


ক্লাস, ল্যাব, মিডে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠা ভীষন যান্ত্রিক জীবনকে একটু খানি প্রাণবন্ত করে তোলে বন্ধুত্ব। বন্ধু ছাড়া ক্যাম্পাস যেন মরুভূমি। প্রয়োজনে এরা অবতীর্ণ হয় মা, বাবা ভাইয়ের ভূমিকায়।


ফাগুনের এক স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় শহীদ মিনারে আড্ডায় মেতে ওঠে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, এনিম্যাল এন্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সস অনুষদের একদল তরুন-তরুনী। কথা বলে জানা গেল তারা ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজন, তারেক সিদ্দীকি জানান, ‘বাবা-মাকে ছেড়ে আসায় প্রথমে খুব মন খারাপ লাগত। কিন্তু বন্ধুদের কারনেই ধীরে ধীরে প্রিয় করে নিয়েছেন অচেনা এই ক্যাম্পাসকে।’


এই দলেরই একজন আল শাহরিয়ার রহমান। তিনি জানান,‘আবাসিক হলে থাকার দরুন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে  বন্ধুই তার শেষ ভরসা।’


এরা থেমে থেমে ধরছে বেসুরু গান, কখনো আবার হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠছে। এদের কেউ ভালো কবিতা আওড়ায়, কেউ ভালো নাটক লিখে, কেউ চায় উদ্যোগক্তা হতে, কেউ চায় বিজ্ঞানী হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে। দলে আছে বইপোকা, কবি, ডিবেটারও। ইচ্ছে গুলো ভিন্ন হলেও কোথায় যেন এক সুরে বাধা। আর সেই সুর ধরেই তারা গেয়ে ওঠে ‘তোরা ছিলি, তোরা আছিস, জানি তোরাই থাকবি...।’


আরেক বন্ধুদল দেখা যায় ক্যাম্পাসের ফুচকা চত্তরে। এদেরই একজন ২য় বর্ষের ছাত্রী জারিন তাসনিমকে বন্ধুত্ব কি  জিজ্ঞেস করলে তিনি এক কথায় বলেন, ‘বন্ধুত্ব মানে আত্মার অভিন্নতা।’


স্কুল-কলেজের বন্ধুত্ব নাকি ভার্সিটি লাইফে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব বেশি টেকসই? এমন প্রশ্নের উত্তরে কৃষি অনুষদের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী পারিজাত চৌধুরী জানান, ‘সময়ের অভাবে স্কুল বা কলেজ জীবনের বন্ধুদের সাথে দুরুত্ব বেড়ে যায়। তবে কাজের খাতিরেই ভার্সিটির বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ থাকে অনেক বছর।’


বন্ধু সংখ্যা নিয়ে ডানবার সংখ্যাতত্ত্ব বলে একটা চমৎকার থিউরি আছে। এই থিউরি মতে একটা মানু্ষরে জীবনে ১৫০ জন সাধারন বন্ধু থাকে অর্থাৎ মানুষের মস্তিষ্ক ১৫০ জন মানুষের সাথে সাধারন যোগাযোগ রাখতে পারে। এদের মধ্যে ৫ জন ঘনিষ্ঠ, ১৫ জন সেরা, ৫০ জন ভালো বন্ধু। হয়তো নিয়মিত যোগাযোগের কারনেই ভালো বন্ধুর সংখ্যায় ক্যাম্পাসে গড়ে ওঠা বন্ধুদের নামই বেশি।

লেখক : শিক্ষার্থী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৮ এপ্রিল ২০১৯/সার/ইআ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন