আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

হাজী আব্দুল হক চৌধুরী-মস্তফা খাতুন ট্রাস্ট ও কিছু কথা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-০৯ ১৬:৩০:০৮

ফাইল ছবি

মিলন কান্তি দাস :: আমাদের জন্মস্থান কানাইঘাট। প্রায় আড়াইলক্ষ মানুষের বসবাস সিলেটের এই উপজেলায়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের কানাইঘাট। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সাথে সাথে সমান্তরালভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই প্রিয় জনপদটি।

দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখে দেশের মানুষ। দেশের মানুষই দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দেয়। মানুষের অবদানেই এগিয়ে যায় একটি পরিবার, পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র, রাষ্ট্র থেকে বিশ্ব। আর সেই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কিছু কিছু বিশেষ মানুষের বিশেষ অবদান সবসময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।

আমরা শৈশবে কোন একটি গ্রন্থে পড়েছিলাম “নাম মানুষকে বড় করেনা, মানুষই নামকে বড় করে তুলে।” এই সত্য বাক্যটির সত্যতা এ যথার্থতা আমরা এখন বাস্তবে দেখতে পাই। আমরা বুঝতে পারি যে, এই উন্নয়নে কিছু মানুষের অবদান বিশেষভাবে অতুলনীয়।

উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আমাদের প্রিয় জনপদ কানাইঘাট, এগিয়ে যাচ্ছে কানাইঘাটের শিক্ষা, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্র। একসময় কানাইঘাট অনেক পিছিয়ে ছিলো। আমাদের শৈশবেও আমরা একটি পশ্চাদপদ অনুন্নত কানাইঘাট দেখতে পেয়েছিলাম। আজ পুরোপুরি উন্নয়নশীল কানাইঘাট। উন্নয়নের পথেই চলছে প্রিয় কানাইঘাটবাসীর প্রতিদিনের যাত্রা ও অগ্রযাত্রা। এগিয়ে যাচ্ছে কানাইঘাটের শিক্ষা। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত কানাইঘাট কলেজ ইতিমধ্যে জাতীয়করন হয়েছে। কানাইঘাট কলেজ প্রতিষ্ঠায়ও কানাইঘাট ছাত্রকল্যান পরিষদ সহ কিছু বিশেষ মানুষের অবদান ছিলো, আমি ব্যক্তিভাবে কারো নাম বলছি না। কারন লিখনে হয়তো ভুলবশত দু একজনের নাম বাদ পড়ে যেতে পারে। তবে তারা সবাই কানাইঘাটের ইতিহাসে সফল স্থপতি ও সমাজসেবক। কানাইঘাটের শিক্ষার উন্নয়নে তারা বিশেষ অবদান রেখেছেন। তাই তারা আমাদের সবসময়ই শ্রদ্ধাভাজন ও স্বরনীয় ব্যক্তিত্ব। ইতিমধ্যে কানাইঘাট মহিলা কলেজও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি কানাইঘাটবাসীর সময়ের ও প্রাণের দাবী ছিলো।

কানাইঘাটের শিক্ষার উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে কয়েকটি সামাজিক সংগঠন। এসব সংগঠনের মধ্যে কে. এ. শিকদার ফাউন্ডেশন, মুজম্মিল আলী শিক্ষা ট্রাষ্ট, হামিদা ফাউন্ডেশন ও হাজী আব্দুল হক চৌধুরী -মস্তফা খাতুন ট্রাস্ট এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ট্রাস্টগুলি সমানভাবে অবদান রেখে চলেছে কানাইঘাটের শিক্ষার উন্নয়নে।
সমাজসেবী ব্যাংকার, শিক্ষানুরাগী ব্যাক্তিত্ব মোশতাক চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১২ সালে হাজী আব্দুল হক চৌধুরী-মস্তফা খাতুন ট্রাস্ট প্রতিষ্টিত হয়। প্রতিষ্টাতা মোশতাক চৌধুরী তার জন্মদাতা পিতা ও রত্নগর্ভা মায়ের নামে ট্রাস্টটি প্রতিষ্টা করেছেন। কানাইঘাটের ৩নং দিঘিরপাড়পূর্ব ইউনিয়নের ধনমাইর মাটি গ্রামের কৃতিসন্তান মোশতাক চৌধুরী একজন শিক্ষানুরাগী ছাড়াও একজন শেকড় সন্ধানী কবি, লেখক ও গবেষক হিসাবে তার সুনাম অক্ষুন্ন রেখে চলেছেন ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে। ইতিমধ্যে তার গবেষনাধর্মী কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে কাছাড়ের ইতিহাস ঐতিহ্য ও নান্দনিকতা, জৈন্তা রাজ্যের ইতিবৃত্ত ও মরমী কবি ইব্রাহিম তশ্না জীবন ও গান উল্লেখযোগ্য। ৩টি গ্রন্থই ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মোশতাক চৌধুরী জৈন্তা ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষন পরিষদের সভাপতি হিসাবেও দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন।

এছাড়াও তিনি পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীনপ্লান, সিলেট এর চেয়ারম্যান হিসাবে সবুজ ও ফলজ বৃক্ষায়নেও ভূমিকা রেখে চলেছেন। সবমিলিয়ে মোশতাক চৌধুরী কানাইঘাটের উন্নয়নের স্বপ্নে বিশেষত শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নিবেদিতপ্রাণ একজন মানুষ।
২০১২ সালে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্টিত হাজী আব্দুল হক চৌধুরী -মস্তফা খাতুন ট্রাষ্ট প্রতিষ্টিত হবার পর থেকে এই ট্রাস্টের বৃত্তিপ্রদান সহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। ২০১৩ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর এই ট্রাষ্টের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে এই ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বৃত্তি প্রদান করা হয়।

মূলত প্রাথমিক স্থরের মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহিত করতেই এ বৃত্তি প্রদান করা হয়। এছাড়া ২০১৭ খৃস্টাব্দ থেকে এই ট্রাস্টের পক্ষ থেকে অত্র উপজেলার মাধ্যমিক স্থরের শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের জন্য রচনা প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এগুলোতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহন করে আসছে। এ সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে বর্তমানে আব্দুল হক চৌধুরী-মস্তফা খাতুন ট্রাস্ট সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব মোশতাক চৌধুরীর মাধ্যমে এই শিক্ষা ট্রাস্টটি আরো ব্যাপক বিস্তার লাভ করবে এবং কানাইঘাটের শিক্ষার উন্নয়নে চলমান ধারাবাহিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। পরিশেষে দুটি লাইন দিয়ে শেষ করতে চাই।-
কর্মতৎপর তব প্রাণ,
মুক্ত মনে মুক্ত প্রাণে নেই তব জুড়ি,
সাহিত্য সাধনে শিকড়ের সন্ধানে তুমি,
প্রিয় অগ্রজ মোশতাক চৌধুরী।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন